স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান সংগঠক সিরাজুল আলম খানের অবস্থা সংকটাপন্ন। বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়েছে। বিস্তারিত জনকন্ঠে
এক সময় দাদা ভাইর দেশ পরিচালনায় দীর্ঘ গবেষণালব্ধ ১৪ দফা বাস্তবায়নের সংগ্রামে রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে কাজ করেছি। দাদা ভাইর কাছে দেশবিদেশের বড় বড় লেখক কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক কম লোকের আনাগোনা ছিলনা। লক্ষ জনতার মাঝে খাটছোট কায় এই অধমকে সব সময়ে কাছে ডেকে বসাতেন। অনেক সময়ে হিংসুটে টাইপের লোকের দৃষ্টি পড়লে নিজেই সরে যেতাম দাদা ভাইর কাছ থেকে।
রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭এ অক্সফোর্ড স্কুল ভবনের অডিটরিয়ামে দাদা ভাইর জন্মদিনের জমকালো এক অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত। আন্তর্জাতিক খ্যাতিমানদের প্রশংসাপূর্ণ নানান লেখা সম্ভার আর ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত রাজনৈতিক রহস্য পুরুষ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই। আমি অনুষ্ঠানের এককোণে বসে দাদা ভাইকে নিয়ে মাত্র ১২ লাইনের একটি ছোট কবিতা কাটাছেড়া করে লিখে ভাষ্যকারের কাছে স্বরচিত কবিতা পাঠে অনুরোধ জানালাম।
অনুরোধের দেড় ঘন্টায়ও যখন আমার নাম ঘোষণা করা হচ্ছিলনা; আমি হাতের কাগজটাকে দলেমুচড়ে ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম দারুণভাবে আশাহত হয়ে। অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ লগ্নে ঘোষকের সদয় দৃষ্টি পড়ল আমার দিকে। মাইক্রোফোনে নাম ডাকতেই স্টেজে উঠে হাতে কাগজটি খুলে স্বরচিত কবিতাটি পাঠ করলাম। কবিতার শেষ লাইন দু’টি ছিল-
“সিরাজুল আলম খান, তুমি বাংলার মান,
১৪ দফা বাস্তবায়নে জুড়াবে তোমার প্রাণ।”
কবিতাটির পাঠ শেষ না হতেই দাদা ভাই চেয়ার থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- কাগজটি আমাকে দাও। বললাম দাদা ভাই, এ টুকরা কাগজটি নিয়ে আপনি পড়তে পারবেন না। কাটাকাটি হিজিবিজি লেখা। আমি পরিস্কার করে লিখে দিব। কিন্তু সে কিছুতেই আমার কথা না শুনে আমার হাতের কাগজের টুকরাটি নিয়ে গেল। পুরো অনুষ্ঠানের প্রবীণ নবীণ সবাইকে আমার দিকে তাকাতে বাধ্য করল। আমি আস্তে করে স্টেজ ত্যাগ করে আবার এককোণে গিয়ে বসে পড়লাম।
দাদা ভাইর ১৪ দফা লিফলেট নিয়ে বের হলে ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের টীমের অবস্থান জানতে চাইত। জনতার প্রশ্নের সম্মুখীন হলে তার যথাযথ জবাব দিয়ে আসতে পারি কিনা জানতে চাইতেন। তৎকালীন শেরাটন হোটেলের সন্নিকটেও দাদা ভাইর রাজনৈতিক আড্ডা ছিল। সেখানেও আমার আনাগোনার কমতি ছিলনা। সে সময়ে অধিকাংশ দাদা ভাইর কাছে রাজনৈতিক দীক্ষা নিয়ে এসময়ের রাজনৈতিক মহাগুরুতে পরিণত হয়েছেন; যারা আর তাকে স্মরণ করতে চায়না। অবশ্য অনেকে আবার রাজনৈতিক ময়দান ছেড়ে গুটিয়ে নিয়েছেন জাতীয় কল্যাণে সম্প্রসারিত ভাবনা।
শুক্রাবাদের বাসায় গিয়ে আমি আর বেশি সময় দিতে পারিনি। দাদা ভাইর মাথায় আল্লাহ কত মেধা দিয়েছিল তার পরিমাপ বাংলাদেশের কেউতো ভাল বিশ্বের কেউ পরিমাপ করতে পারবেনা। দাদা ভাই আজ আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। একদিন তার শোকে শোকাহত হতে হবে। মনে থাকবে রাজনৈতিক রহস্য পুরুষের প্রাণের নানা কথা।
লেখক- মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা