নন্দিত গীতিকার হিসেবেই কেজি মোস্তফা বেশি পরিচিত। তিনি একজন সফল সাংবাদিক এবং কলামিস্টও বটে। জন্ম ১ জুলাই ১৯৩৭ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায়। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। দৈনিক ইত্তেহাদে ১৯৫৮ সালে শিক্ষানবিশ হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ওই বছরই ‘দৈনিক মজলুম’-এ সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগ পান এবং পত্রিকাটির বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। এরপর দীর্ঘ বিরতি। ১৯৬৮ সালে সাপ্তাহিক জনতায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
স্বাধীনতার পর কে জি মুস্তফা প্রথমে ‘দৈনিক গণকন্ঠ’, পরে ‘দৈনিক স্বদেশে’ চীফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেণ। এরপর ‘দৈনিক জনপদে’ কূটনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ঐ সময় ‘নূপুর’ নামে একটি বিনোদন মাসিকও সম্পাদনা করতেন। ১৯৭৬ সালে বিলুপ্ত সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিক হিসেবে কে জি মুস্তফা বি.সি.এস (তথ্য) ক্যডারভূক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে সম্পাদক,পরে সিনিয়র সম্পাদক পদে উন্নীত হন। ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত কিশোর পত্রিকা ‘নবারম্নণ, সাহিত্য মাসিক ‘পূর্বাচল’,‘সাপ্তাহিক সংবাদ’ এবং সর্বশেষ ‘সচিত্র বাংলাদেশ’পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ঐ সময় কিছুকাল তিনি বাংলাদেশ স্কাউটস্্-এর মুখপত্র ‘অগ্রদূত’এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রূপে সংশিস্নষ্ট ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে কে জি মোস্তফার কবিতা দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়ে আসছে। ১৯৬০ সাল থেকে চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে তাঁর লেখা প্রচুর গান প্রচারিত হয়। হাজার গানের গীতিকার কে জি মোস্তফার ফিল্মী গানগুলো খুবই জনপ্রিয়। তাঁর গানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদ এবং বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রায় সকল শিল্পী কন্ঠ দেন। একদা তিনি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকে ঝুঁকেছিলেন।‘মায়ার সংসার’,‘অধিকার’ ও ‘গলি থেকে রাজপথ’ ছবিতে সহকারী পরিচালক রূপে কাজ করেন। কবি ও গীতিকার কে জি মোসত্মফার সৃজনশীলতা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সুধীজনদের প্রাণবনত্ম আলোচনা সম্প্রতি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে জ্যোতি প্রকাশন ‘একজন কে জি মোস্তফা’ শিরোনামে । গ্রন্থাবলী ——– কাব্যগ্রন্থ ১. কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো ২. উড়নত্ম রম্নমাল ৩. চড়্গুহীন প্রজাপতি ৪. সাতনরী প্রাণ ৫.আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন ৬. এক মুঠো ভালোবাসা ৭. প্রেম শোনে না মানা ৮. মন চায় উড়ে যেতে ।
গদ্যগ্রন্থ ১. কোথায় চলেছি আমি (সরস আত্মকাহিনী) ২. কবিতার প্রাণ-মন-দেহ ।
ছড়ার বই ১. শিশু তুমি যিশু ২. কন্যা তুমি অনন্যা ৩. মজার ছড়া শিশুর পড়া।
গানের সিডি ও ক্যাসেট ১.তোমারে লেগেছে এত যে ভালো ২. তৃষ্ণা আমার হারিয়ে গেছে ৩. কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো
৮৪ বছর বয়সে ৮ মে রোববার রাত আটটার দিকে ঢাকায় নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে আমরা জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি ও সংগ্রহ বার্তা পরিবার অত্যন্ত শোকাহত। তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।