জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ ১৯৬২ সালের ২৫ অক্টোবর ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউরিয়নের দেউরী গ্রামে হেমায়েত উদ্দিন হিমু জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মরহুম হাবিবুর রহমান ঝালকাঠি শহরের বিশিষ্ট ফটোব্যবসায়ী ছিলেন এবং মা সফুরা বেগম একজন গৃহিনী। পিতা-মাতার ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
শিক্ষা জীবনঃ শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য ঝালকাঠিতেই কেটেছে। পড়াশোনা শুরু করেন ঝালকাঠি পৌর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ভর্তি হন ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয় খেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন ঝালকাঠি সরকারি কলেজে। উক্ত কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করে ঐ একই কলেজে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
কর্মজীবনঃ সাংবাদিকতা পেশাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে তিনি কর্মক্ষেত্রে আত্ননিয়োগ করেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করে বর্তমানে ৩৮ টি বছর এ পেশায় কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি যেসব পত্র-পত্রিকা কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করছেন বা করেছেন তা হচ্ছে দৈনিক যুগান্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), মাছরাঙা টেলিভিশন, দৈনিক বাংলা, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক দেশ, বিপ্লবী বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি), এসোসিয়েটেড প্রেস অব বাংলাদেশ (এপিবি), নিউজ মিডিয়া সিন্ডিকেট, বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম প্রভৃতি। ১৯৯২ সালে ঝালকাঠি থেকে সাপ্তাহিক সূর্যালোক পত্রিকা বের করেন। হেমায়েত উদ্দিন হিমু এই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এখানে উল্লেখ্য বর্তমানে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধো রয়েছে। তবে তিন বছর যাবত অনলাইন মিডিয়া সূর্যালোক নিউজ সম্পাদনাসহ পরিচালনা করে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি), গণমাধ্যম বিষয়ক সংস্থা ম্যাস-লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন। দীর্ঘদিন যাবত তিনি সংবাদকর্মীদের প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এনজিও কার্যক্রমে সম্পৃক্ততাঃ ২০০০ সাল থেকে তিনি এনজিও কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। শুরু থেকেই ম্যাস-লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি) পরিচালিত ডানিডা প্রকল্পের ৬ বছর ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি পদে এবং ২ বছর আজ্ঞ্বলিক প্রোগ্রাম অফিসার (বৃহত্তর বরিশাল ও ফরিদপুরের ১০ জেলা) পদের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সাল থেকে এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পরিচালিত ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) ঝালকাঠি জেলা সমন্বয়কারী পদের দায়িত্ব পালন করেন (প্রথমে এমএমসি এবং পরবর্তীতে ডাক দিয়ে যাই এর কর্মী হিসেবে)। ২০০৫ সালে মানুষ মানুষের জন্য শ্লোগান সামনে রেখে গঠন করেন সূর্যালোক ট্রাস্ট।
সামাজিক কার্যক্রমঃ সাংবাদিক হেমায়েত উদ্দিন হিমু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে সচেতন নাগরিক হিসেবে সামাজিক কার্যক্রমে স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে তিনি আইন ও শালিস কেন্দ্র পরিচালিত হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম, ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি, ঝালকাঠি টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) টিআইবি, ঝালকাঠি এর সহ- সভাপতি, সনাক, টিআইবি ঝালকাঠি এর ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোট (ইয়েস)র আহবায়ক, এডাব, ঝালকিঠি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঝালকাঠি সূর্যালোক ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক, ঝালকাঠি ওয়ার্ক ফাউন্ডেশর এর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সসিতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী এর সহকারী সম্পাদক, চাঁদের হাট, ঝালকাঠি শাখার প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর রির্বাহী সদস্য হিসেবে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং শেরেবাংলা স্মৃতি একাডেমী, ঢাকার আজীবন সদস্য।
১৩ বছর যাবত ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ বছর ঝালকাঠি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ঝালকাঠি ইউনিটের সেক্রেটারি ছিলেন ৩ বছর। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, ঝালকাঠি জেলা শাখার সম্পাদক ছিলেন ৭ বছর পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৪ বছর এবং ঝালকাঠি মহকুমা শাখার যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সন থেকে ১৩ বছর ঝালকাঠি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আরও যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন সময়ে তার মধ্যে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, সূর্যালোক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, ঝালকাঠি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, ঝালকাঠি সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক, ঝালকাঠি ডায়াবেটিক সমিতির সহ-সম্পাদক, সেতু যুব সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, বরিশাল বিভাগ প্রশিক্ষক ফোরামের সভাপতি, উপকূল সাংবাদিক ফোরাম, ঝালকাঠি জেলা শাখার আহবায়ক এবং ঝালকাঠি এপেক্স ক্লাবের সদস্য।
হেমায়েত উদ্দিন হিমু মানবকল্যানের জন্য ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অসহায় মানুষের জন্য ২৮ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন। তিনি ছাত্রজীবনে খেলাধূলায় অংশ নিয়েও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ফুটবল টিমের খেলোয়ার হিসেবে ঝালকাঠি ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্থা থেকে মানবাধিকার, সুশাসন, নারী উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, এনজিও কার্যক্রম, সাংগঠনিক দক্ষতার উন্নয়নসহ নানা বিষয়ের উপর তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
যেসব ক্ষেত্রে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেনঃ হেমায়েত উদ্দিন হিমু বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ফিচার সার্ভিসে বহুদিন ধরে ফিচার লিখেছেন। তাঁর লেখা অসংখ্য ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য সংকলন সম্পাদনাও করেছেন। তাঁর কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ বেশ কটি পদক বা পুরস্কার অর্জন করেছেন। গবেষনা ও সাংবাদিকতায় ২০১৩ সালে ঢাকাস্থ শেরেবাংলা স্মৃতি একাডেমি পদক লাভ করেছেন। ২০০৯ সালে ঝালকাঠি জেলা পল্লী চিকিৎসক কল্যাণ সমিতির শ্রেষ্ঠ সাংবাদিকতা পুরস্কার তিনি অর্জন করেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) সহায়তায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাব ও পটুয়াখালী জেলা সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে পটুয়াখালীতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সংবাদ লেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ছাত্রজীবনে বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অসংখ পুরস্কার লাভ করেন। ১৪২২ বঙ্গাব্দে জগদীশপুর প্রতিভা শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক প্রতিভা-ললিত বাবু স্মৃতি গুণীজন সম্মাননা পেয়েছেন। গুণের অধিকারী এই সাংবাদিক হেমায়েত উদ্দিন হিমু।
২৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মোঃ হাসান মাহমুদ ’র লেখিত ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগ্রহে সহযোগিতা করেন মরহুম সাংবাদিক হেমায়েত উদ্দিন হিমুর ছেলে Jannatin Dip