তৃণমূল থেকে ত্যাগী কর্মীরা তাদের স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে আর উপরে উঠতে পারেনা। ছেড়া স্যান্ডেল তালি দিয়ে নিজের পথ চলা হলেও চলেনা তার পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণ করা। স্ত্রী পুত্র পরিজনের কাছে ব্যর্থ মানব হিসেবেই সারা জীবন পার করতে হয় একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনীতিকের। উপরের পদগুলো পয়সাওয়ালাদের মধ্যে বন্টন হয়ে যায় পয়সার বিনিময়ে। পথরুদ্ধতায় প্রজন্মের লিডারশিপে আগাছা জন্ম নেয়া শুরু হয় নানান রাজনৈতিক দলের নামে।
জিজ্ঞাসিত সভাপতিদের অনেকেই জানান যে, ২/৫/১০ ও ১৫ বর্ষ সংখ্যাগুনে ধৈর্য্য ধরেও যখন কাংখিত পদে পৌছতে পারিনা; তখন ভিন্ন নামের সংগঠনের বড় পদ তৈরি করে ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে মানিয়ে নিই নিজেকে। আর সেকারণেই দেশের দলগুলোর অঙ্গ প্রতঙ্গের সংখ্যা বেশুমার। মুখের চেয়ে দাঁত বড়। প্রায়সব দলেই বিকৃত দশায় নিমজ্জিত হওয়ার মূলে পয়সাওয়ালাদের পদ পদবী কেনাবেচার কারণ।
পয়সায় পদ পদবী কেনাবেচার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে তৃণমূলে অবহেলায় পড়ে থাকা কর্মীরাও তাই অসদুপায় অবলম্বনে পয়সা জোগাড়ে মরিয়া হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে ক্যাসিনো সম্রাট আর মাদক সম্রাজ্ঞী। রাজনীতিতে আর ন্যায়নীতি স্থান পায়না। স্থান পায় পেশীশক্তি আর পয়সায় পালিত সমর্থক গোষ্ঠি। সমর্থন এখন আর বিনা পয়সায় মেলেনা। পানি খেতেও পয়সা আর প্রস্রাব করতেও পয়সা। এবার তৃণমূলের কর্মীরাও শিখছে নীতি আর নৈতিকতা ছাড়ো; পয়সা ধরো যে যেভাবে পারো। নির্বাচনের পূর্বে যার যা পুঁজি আছে তাই নিয়ে দলদারিতে এসো। বাজারের সাধারণ ব্যবসাও এখন আর শুধু ব্যবসায়িক নিয়মে চলেনা। ব্যবসা করতে রাজনৈতিক ক্ষমতাও দরকার। তাই দেশের প্রায়সব ব্যবসায়ীদের হাতে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের বড় বড় পদ। তাই তাদের ব্যবসায়ও এখন তুঙ্গে। আর সেজন্য তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মীরা যেমন পদবঞ্চিত হচ্ছে; তেমনি ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ পাচ্ছেনা। শুধু ব্যবসা দিয়ে বড় হওয়ার সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে ব্যবসায়ী রাজনীতিকের আগ্রাসনে। ব্যবসায়ীদের মাঝেও এখন এমন ভাবনা বিরাজমান যে, ব্যবসায় উন্নতি করতে হলে রাজনৈতিক পদগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়।
দেশের সফল ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমের গুরুত্বও বুঝে গেছে। তারা আর বিজ্ঞাপনের পয়সা ছেড়া ঝুলিতে দিতে নারাজ। ফকিরনী কবি, সাহিত্যিক আর সাংবাদিকদের যাতায়াত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেমানান। তাই তারা তাদের প্রতিমাস আর বছরের বিজ্ঞাপনের বাজেট দিয়ে শুধু পত্রিকা প্রকাশই নয়; টিভি চ্যানেলে প্রচার ক্ষমতাও কিনে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম নেই; দেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠিত কোনো গ্রুপ অফ কোম্পানী খুঁজে যাবেনা। ব্যবসায়ীরা দেখেছে রাজনৈতিক শক্তি আর সংবাদ মাধ্যমের প্রচার প্রকাশ দু’টোই তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের হাতিয়ার।
পয়সাওয়ালাদের হাতিয়ারে পরিণত হওয়া পরিপাটি সাংবাদিকদের দেখলে আফসোস হয়। কাদের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছিল? কেন করেছিল এই প্রেস কাউন্সিল? মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো লেখক সাংবাদিককে যাতে ননমেট্রিক সেপাইর কাছে অপমানিত হতে না হয়। কোনো বিচারালয়ের কাঠগড়ায় হাতজোড় করে দাড়াতে না হয়। সেজন্যই তিনি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
লেখক সাংবাদিকদের মর্যাদা সংরক্ষণে সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবসায়িক গণমাধ্যমকে আলাদা করে প্রকৃত সাংবাদিকদের হাতে সংবাদ মাধ্যম পরিচালনার ক্ষমতা না দিলে দেশে আর কোনো সৃজনশীল লেখক কবি সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া যাবেনা বলে আশঙ্কা এনএনসির গবেষণা বিভাগের। একই সাথে ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রাজনীতি আলাদা করতে না পারলে দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের আকাল পড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক- আলহাজ্ব মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা, প্রেসিডেন্ট- এনএনসি