নিউজস্বাধীন বাংলা: নাঃগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় একটু একটু করে বেড়ে উঠেছিলো তুহিন বাহিনী। এই বাহিনীটিকে বলা হতো ‘কিশোর গ্যাং’। সশস্ত্র এই বাহিনীর প্রধান ছিলো কিশোর বয়সী তুহিন ওরফে চাপাতি তুহিন। নয়ন বন্ডের ঘটনার পর সে নিজের নামের পাশে ‘বন্ড’ শব্দটাও জুড়ে দিতো।
ওই বাহিনীর কারণে পশ্চিম দেওভোগের হাসেমবাগ ও পশ্চিম নগর এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। যত দিন যাচ্ছে, ক্রমেই যেন এ এলাকা আরও ভয়ঙ্কর ক্রাইম জোন হয়ে উঠছে। হেন কোনো অপরাধ কর্মকাÐ নেই যা এখানে হয়ে থাকে না।
এলাকার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদকব্যবসা সহ সব ধরনের অপকর্মে লিপ্ত। এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা থাকলেও সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার শেল্টারে প্রকাশ্যেই তারা ঘুরে বেড়িয়েছিলো বীরদর্পে। ওই গোষ্ঠীটার মদদে দিন দিন তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।
এলাকাবাসী জানান, কিশোর গ্যাং তথা তুহিন বাহিনী এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসার বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এ কিশোর গ্যাংয়ের তুহিন ছাড়াও অন্য সদস্যরা হলো, বোতলা, আল আমিন, পিয়াস, সাদ্দাম, বুইট্টা মিলন, রফিকুল, হৃদয়, বডি সজিব, সোহেল ও দাড়িওয়ালা মানিক সহ আরো অনেকে। এলাকায় তুহিন বাহিনী হিসেবে এ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা পরিচিত। এদের মধ্যে বোতলা, আল আমিন, পিয়াস, সাদ্দাম হলো মাদকের ম‚ল ডিলার অর্থাৎ পাইকারি বিক্রেতা। তাদের কাছ মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে তা প্রতিটি এলাকার ছড়িয়ে দিচ্ছে সঙ্গি সাথিরা।
তবে, এই বাহিনীর প্রধান তুহিন ওরফে চাপাতি তুহিন ওরফে তুহিন বন্ড বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসলেও এই বাহিনীর অন্যান্যদের নিয়ে এখনও রয়েছে আতঙ্ক। একই সাথে এই বাহিনী ছাত্রলীগের সাবেক যে নেতার ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছিলো সেই ব্যক্তি নিজের স্বার্থে ফের এমন কাউকে না কাউকে দাঁড় করিয়েই দিবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী আরও জানান, আগে প্রতি মোড়ে মোড়ে গোপনে ইয়াবার ব্যবসা চললেও এখন প্রকাশ্যেই এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ওই সকল চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে তারা মাদক ব্যবসার জন্য হাসেমবাগ থেকে সরে এসে পশ্চিম নগরকে জোন হিসেবে ব্যবহার করছে। ওই সকল মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসার জন্য পশ্চিম নগরের প্রতিটি চায়ের দোকনকে বেছে নিয়েছে। যেখানে চা খেতে খেতে চলছে মাদক ব্যবসা। এসব কথা এলাকার সবাই জানে।
স¤প্রতি দেওভোগের হাসেমবাগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাকিল নামে নিরিহ ওই যুবককে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে কিশোর গ্যাং প্রধান তুহিনসহ তার বাহিনী। ওই ঘটনায় আরও ছয়জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে তুহিনকে প্রধান আসামী করে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা করে নিহত শাকিলের বড় ভাই সাঈদ হোসেন।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে দেওভোগ মাদরাসা এলাকায় আলমগীরকেও কুপিয়ে হত্যা করে ওই সন্ত্রাসীবাহিনীরা। নিহত আলমগীর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি থানার দশলং এলাকার লাল মিয়ার ছেলে ছিলো। সে দেওভোগ মাদরাসা এলাকার নুরু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতো।
এছাড়াও ওই সন্ত্রাসীদের হাতে দেওভোগ নাগবাড়িতে নির্মমভাবে খুন হয় হৃদয় হোসেন বাবু নামে আরও এক যুবক। এত খুন করেও ওই সন্ত্রাসীরা এখনো বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে চলছে এলাকায়। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার সাধারন মানুষের।
ওই বাহিনীর কারণে এলাকার সাধারন মানুষের নিরাপত্তা বরং দিনকে দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, শংকা, ভীতি তাদের জীবনকে ক্রমাগত গ্রাস করে ফেলে। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, দখলবাজির মতো মারাত্মক অপরাধ অপ্রতিরূদ্ধ গতিতে বেড়ে উঠেছিলো। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন কোনোভাবেই সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী রাহাজানি, চাঁদাবাজদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছিলো না। এমন পরিস্থিতিতে এই বাহিনীর প্রধান তুহিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় কিছুটা হলেও হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে এলাকাবাসী।
তবে, স্থানীয় এলাকাবাসীর মাদক ও সন্ত্রাস নির্ম‚লে জেলা পুলিশ প্রশাসনের কাছে আরও একটি বড় দাবি, অতিদ্রæত সেখানে যেন একটি পুলিশ ক্যাম্প কিংবা ফাড়ি করা হয়। এলাকাবাসীর বিশ্বাস এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলে হয়তো, এখানে অপরাধীদের সংখ্যা কমে যাবে। নিরাপদে থাকবে এখানকার সাধারন মানুষগুলো। একই সাথে এই বাহিনীর কথিত শেল্টারদাতা তসলিমের ব্যাপারে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান এলাকাবাসী।