নিউজস্বাধীন বাংলা: রাতে এশার নামাজ পড়িয়ে নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান ইমাম দিদারুল ইসলাম। অন্যান্য দিনের মতো সকালে ফজরের আযান শুনতে না পেয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদের ইমামের কক্ষে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে টর্চের আলো ছড়িয়ে দেখতে পান, ঘরের মধ্যে চকির উপর ইমামের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে তার পাশেই তার বিচ্ছিন্ন মাথা।
মুসল্লিরা এ ঘটনাটি থানায় জানালে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ মরদেহের সূরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন এবং মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। ঘটনাস্থল থেকে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেন। এ ঘটনায় নিহত দিদারুল ইসলামের ভাই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় আজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
২২ আগস্ট ইমামের মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। তিনি ঘটনাটিকে অত্যন্তগূরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং এ ঘটনায় তদন্তে জোর তাগিদ দেন।
এদিকে ক্লুলেস ওই হত্যাকা-টি নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে নানা ভাবে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যার নেপথ্যে জড়িত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তারা জানতে পারেন এই হত্যায় ইমামের বন্ধু আরেক ইমাম জড়িত। এরপরই আসামীর অবস্থান ও তাকে গ্রেফতার করতে বেশ সতর্কতার সাথে মাদারীপুরের শিবচরে অভিযান চালায় সোনাগাঁ থানা পুলিশ। সেখান থেকে আটক করে ঘাতক ওয়াহিদুজ্জামানকে। তিনি শিবচর এলাকার একটি মসজিদের ইমাম। এবং খুলনার নড়াইল জেলার কলাবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক টুকু শেখের ছেলে।
নিহত ইমাম দিদারুল ইসলাম নড়াইলের কালিয়া উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আফতাব ফরাজীর ছেলে। গত ২৬ জুলাই তিনি সোনারগাঁ উপজেলার মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ২২ আগস্ট দিদারুল ইসলামকে জবাই করে হত্যা করা হয়।
এদিকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এদিন বিকেল তিনটার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। সংবাদ সম্মেলনটি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ সুপার জানান, খুনের শিকার ইমাম দিদারুল ইসলাম এবং ঘাতক ইমাম ওয়াহিদুজ্জামান একে অপরের বন্ধু। এই সুবাদে দিদারুলের কাছে থেকে স্বর্ণের বার কেনার কথা বলে কয়েক দফায় লক্ষাধিক টাকা নেয় ওয়াহিদ। পরবর্তীতে এই টাকা নিয়ে দুজনের সাথে কিছুটা মতানৈক্য ঘটে। টাকা ফেরৎ চায় দিদারুল। চাপে পড়ে যান ঘাতক ওয়াহিদ। ফলে টাকা যাতে ফেরৎ দিতে না হয় সে লক্ষ্যে দিদারকে খুনের পরিকল্পনা করে ওয়াহিদ।
তিনি জানান, খুনের পরিকল্পনা মোতাবেক ২০ আগস্ট দিদারুলের সাথে দেখা করে পরদিন ২১ আগস্ট এশার পর পাওনা টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা জানায়। করার জন্য সোনারগাঁয়ের মল্লিকপাড়া মসজিদে আসেন ওয়াহিদ। সে মোতাবেক এদিন ওয়াহিদ আবারও আসে দিদারের মসজিদে। এর আগে তিনি খুনের পরিকল্পনা মোতাবেক শিবচর থেকে চাপাতি এবং সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড় থেকে ঘুমের ওষুধ ও কোকাকোলা কিনে নেয়।
পুলিশ সুপার বলেন, রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেন ইমাম দিদারুল। এসময় ঘুমে ওষুধ মিশ্রিত কোকাকোলা দিদারকে পান করালে সে অচেতন হয়ে বিছানায় ঢলে পড়েন। পরে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক চাপাতি দিয়ে দিদারের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংস ভাবে হত্যা সম্পন্ন করেন শিবচর মসজিদের ইমাম ওয়াহিদুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, হত্যা সম্পন্ন হওয়ার পর এবং হত্যাকা- নিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করার লক্ষ্যে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় খুনের শিকার দিদারের ব্যবহৃত খাতায় ওয়াহিদ লিখেন, ‘হিযবুত তাওহিদের সদস্য, সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছে তাই তাকে আমরা মেরে ফেলেছি।’ এবং সে মসজিদের ওযুখানায় গিয়ে গোসল করেন ও রক্তমাখা লুঙ্গি পাশের কচুরিপানার মধ্যে ফেলে রেখে ঢাকা হয়ে মাদারিপুর চলে যায়।