নিউজ স্বাধীন বাংলা : নারায়ণগঞ্জে এক সপ্তাহের ব্যবধানে স্ত্রীকে খুন করে স্বামীর আত্মহত্যার দুটি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সমাজ সচেতনরা। যদিও পারিবারিক কলহের জের ধরে এ দুটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
তারপরও তারা বলছেন, মানবিক মূল্যবোধ আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোবের অভাব যখন দেখা দেয়, তখনই এমন ঘটনা ঘটতে থাকে। ফলে এর আগেও দুই বছরে এমন আরও দুটি ঘটনা এই জেলাতে ঘটেছিলো। তবে এবার সপ্তাহের মধ্যে পরপর এমন দুটি ঘটনাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমাজ সচেতনরা।
সমাজ সচেতনদের মধ্যে, যখন স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তখন হন্তারকের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ বলে কিছু থাকে না এবং অপরের প্রতি শ্রদ্ধাও থাকে শূন্যের কোঠায়। তবে, হত্যার পর যখন হন্তারক নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তখন বুঝতে হবে তারমধ্যে অনুশোচনাবোধটুকু একদমই শূন্যে নেমে যায়নি। যার কারণে সঙ্গীকে হত্যার পর অনুশোচনাবোধ থেকে সে নিজেই নিজেকে শাস্তি দিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
তারা বলছেন, ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার ঘটনা তেমন না ঘটলেও এক সপ্তাহে এমন দুটি ঘটনা উদ্বেগের। আমাদের মানবিক মূল্যবোধ কমে যাচ্ছে। অথবা মানবিক গুণাবলি ঘনঘন সুইং করছে। ফলে মানুষ সহনশীল থাকতে পারছে না। ধৈর্যচ্যুত হয়ে পড়ছে। যার কারণে হুট করেই সে ধৈর্যহীন হয়ে যাচ্ছে এবং মানবিক মূল্যবোধ, শ্রদ্ধাশীলতা মুহূর্তে উবে যাওয়ার কারণে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধা করছে না।
সমাজ সচেতরা মনে করেন, স্ত্রীকে খুনের পর স্বামীর আত্মহত্যার মতো যে দুটি ঘটনা ঘটেছে তা আমাদেরকে ইংগিত দিচ্ছে এমন ঘটনা আরও বাড়বে। পারিবারিক কলহ প্রায় অনেক পরিবারেই থাকে। কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ, শ্রদ্ধাবোধ কমে গেলেই একমাত্র হত্যা এবং অনুশোচনায় ভুগে আত্মহত্যা করার মতো ঘটনা বা প্রবণতা মানুষের মধ্যে কাজ করে।
তাদের মদেত, এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারি পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ, সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সচেতনতামূলক নানা ধরণের ওয়ার্কসপের করানো দরকার। পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোকেও প্রান্তিকে গিয়ে বা স্বল্প শিক্ষিত, সুবিধা বঞ্চিত পরিবারগুলোকে নিয়ে সচেতনতামূলক বৈঠকের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষামূলক, সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এমন ঘটনা সামনের দিকে আরও বাড়বে। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
প্রসঙ্গত, ৯ জুলাই ভোরে ফতুল্লার পশ্চমি দওেভোগ আর্দশনগর এলাকায় পলি নামের স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করার পর তার স্বামী জামাল হোসেন বিষপানে আত্মহত্যা করেন। পলি বেগম একজন গার্মেন্টকর্মী এবং জামাল চায়ের দোকানি।
এছাড়া এ ঘটনার ঠিক ৬ দিন আগে অর্থাৎ ২ জুলাই বিকেলে সোনারগাঁয়ের শেখ কান্দা গ্রামে স্ত্রী মুরতাজকে কুপিয়ে হত্যা করার পর স্বামী বাচ্চু মিয়া গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। বাচ্চু মিয়া একজন মুদি ব্যবসায়ী।
প্রসঙ্গত, গেল বছরের এপ্রিলের শুরু দিকে সিদ্ধিরগঞ্জে একই ধরণের আরও একটি ঘটনা ঘটেছিলো। মীম নামে এক স্ত্রীকে হত্যা করে তার স্বামী রেজাউল। ঘটনাটি শিমরাইল উত্তরপাড়া এলাকায় ঘটে।
এছাড়াও ২০১৭ সালের ৯ মে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকাতে মিতু নামে এক স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর স্বামী মোশারফ হোসেন গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।