নিউজ স্বাধীন বাংলা : শহরবাসী দেখেছে, এবার ফতুল্লাবাসী অপেক্ষা করছে এসপি হারুন অর রশীদের অ্যাকশন দেখতে। তারা চান, যে কথা দিয়েছিলেন এসপি, সে কথা অনুযায়ি অতিদ্রæত কার্যকর ভূমিকা পালন করুক তিনি। এবং এসপির দেওয়া কথা যেন, কথার কথা হয়ে না থাকে, সে প্রত্যাশা করছেন বৃহত্তর ফতুল্লা অঞ্চলের বাসিন্দারা।
সম্প্রতি শহরের মিরজুমলা সড়কের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এসপি হারুন অর রশীদ। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপাকালে জানিয়েছিলেন, এবার তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পুরাতন) এবং ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের অবৈধ পার্কিং ও দখলদারদের উচ্ছেদে মাঠে নামবেন।
হারুন আর রশীদের ওই ঘোষণার পর যারপরনাই উচ্ছ¡সিত হয়ে উঠেন ফতুল্লাবাসী। তবে, ঘোষণার এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলেও এখনও এসপি হারুনের অ্যাকশন দেখা যায়নি ফতুল্লাতে। এই অঞ্চলটির সাধারণ বাসিন্দারাও অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এসপির অ্যাকশনের।
সূত্র বলছে, যত্রতত্র অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল করে রাখার কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পুরাতন) এবং ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে নিত্য যানজটের শিকার হন এসব অঞ্চলে বসবাসরতরা। অথচ এই দুটি সড়কে প্রতিদিন জরুরী কাজে ব্যবহৃৎ হাজারও যান এবং কয়েক লক্ষ লোক চলাচল করে থাকে। কিন্তু যানজটের কবলে পরে এসব এলাকার কর্মব্যস্ত মানুষগুলোর ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অপচয় হচ্ছে। কখনো তীব্র যানজটের কবলে পড়ে যাচ্ছে তাই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় শহরে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় সূত্র বলছে, পাগলা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটে শহরের চাষাড়ায় আসা যায়। কিন্তু যানজটের কারণে এই ১৫ মিনিটের পথ তাদেরকে পাড়ি দিতে ব্যয় করতে হয় ঘণ্টারও উপরে। কখনো কখনো এই সময় দুই ঘণ্টায় গিয়েও পৌঁছায়।
তারা জানান, এই সড়কের পোস্ট অফিস মোড়, ফতুল্লার যমুনা মেঘনা ডিপো এলাকা এবং পঞ্চবটির মোড় ও প্রধান তেল পাম্প এলাকায় যানজটের সৃষ্টির মূল উৎস। পরে এ যানজটের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
এদিকে যানজটের মূলে স্থানীয়রা কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এরমধ্যে পঞ্চবটি মোড়ের বোরাক পরিবহন, বেবী, সিএনজি এবং অটোর অবৈধ স্ট্যান্ড। ডিপো এলাকায় এবি স্কেল। পোস্ট অফিস রোডে লিংকরোড সংযোগ সড়ক।
সূত্র মতে, পঞ্চবটিতে একটি সিএনজি স্ট্যান্ড, উভয় পার্শ্বে অটোবাইক স্ট্যান্ড, উভয় পার্শ্বে বেবী স্ট্যান্ড এবং এই এলাকার বিষফোঁড়া বোরাক পরিবহনের অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে প্রমিমুহূর্তেই যানজটের সৃষ্টি হয়। এরা রাস্তা দখল করে স্ট্যান্ড হড়ে তুলেছে আবার ব্যস্ততম এই সড়কে যখন তখন হুটহাট করে গাড়ি ঘুরানোর ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের।
অন্যদিকে মেঘনা তেল ডিপো এলাকার এবি স্কেলটি অনেকদিন ধরেই গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে আছে। তাদের নিজস্ব কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে স্কেল করতে আসা বড় বড় ট্রাকগুলো মূল সড়ক দখল করেই সিরিয়াল ধরে পার্কিং করে রাখছে। এছাড়াও যখন তখন এখান থেকে স্কেল শেষে এবং স্কেল করাতে ঘনঘন ট্রাক যাচ্ছে আর আসছে। এতে করে স্বল্প পরিসরের এই ব্যস্ততম সড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে পোস্ট অফিস এলাকায় লিংকরোড সংযোগ সড়কটিতে প্রতিদিন বড় বড় কন্টিনার, ট্রাক প্রবেশ করছে আর বের হচ্ছে পুরতান সড়কে। কোনো রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজেদের খেয়াল খুশি মতো বড় বড় কন্টিনারগুলো হুট করেই সংযোগ সড়কে ঢুকে যাচ্ছে এবং বের হচ্ছে। এর ফলে ব্যস্ততম সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে।
এর পাশাপাশি এই সড়কে অসংখ্য স্থানে সড়কের উভয় পার্শ্বের ফুটপাত দখল করে রেখেছে প্রভাবশালী মহল। সেসব স্থানে দোকানপাট সহ নানা ধরণের স্থাপনা নির্মাল করে তারা ভাড়া আদায় করছে। এর ফলে মূল রাস্তাও সংকুচিত হয়ে যায়। এসব দখলের কারণেও যানজট সৃষ্টি হয় এ অঞ্চলে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত, মীরজুমলা সড়ক থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদসহ শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করেছেন। ফলশ্রæতিতে আগের থেকে অনেকাংশেই শহরে যানজট কমেছে। ফতুল্লাবাসী মনে করেন, এসপি হারুন যদি ফতুল্লার বিভিন্ন অবৈধ স্ট্যান্ড ও দোকানপাট বসিয়ে ফুটপাত দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারেন তবে, এই সড়কের যানজট কমে যাবে ৮০ ভাগ। আর সেটি তিনি করতে পারলে ফতুল্লাবাসী হৃদয়ে আজন্ম স্থান করে নিতে পারবেন।
ফতুল্লাবাসী এসব অবৈধ স্ট্যান্ড, পার্কিং এবং ফুটপাত দখলদারদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে যে ভোগান্তিতে রয়েছে তা লাঘবের জন্য এই অঞ্চলটিতে এসপি হারুনের অ্যাকশন জরুরী বলে এই অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা মনে করেন। আর তাই তারা এসপির অ্যাকশনের অপেক্ষাও করছেন।