আমার জন্মভূমি বাংলাদেশে এবং আমি প্রায় ৪৪ বৎসর যাবৎ জার্মানিতে বসবাস করছি । যেহেতু আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ, স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের উন্নতির জন্য সারাক্ষণ চিন্তা করি।
আর কয়েকমাস পরেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নিউজমিডিয়া আর সামাজিক সাইটের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর হুমকি-ধামকি দেখে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শংকিত।
আমি জার্মানিতে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অনেকেই জানেন জার্মানি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং এখানে কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিগতদিনে এইদেশে বেশকিছু নির্বাচনে অংশ্রগ্রহণ করেছি। এরমধ্যে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম ডর্টমুন্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংগঠনে। এবং নির্বাচিত হই। নিয়মানুযায়ী এখানে প্রতিবছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো এবং প্রত্যেকে মাত্র একবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায়। তাই এই ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদে একবছর দায়িত্বপালন করেছি।
২০০৮ সালে যুক্ত হই জার্মানির গ্রিন পার্টির সঙ্গে। এখানে আমার শহরের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হই। ২০১৩ সালে এই শহরের (ভ্যার্ল) মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সদস্য নির্বাচিত হই। ২০১৭ সালে গ্রিন পার্টির মনোনয়ন পেয়ে জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে জার্মান ফেডারেল পার্লামেন্ট সদস্যপদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। ২০২০ সালে জেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সদস| নির্বাচিত হই। এবং এখনো জেলা পরিষদের সদস্য পদে দায়িত্বপালন করে আসছি।
২০২১ সালের জার্মান জাতীয় নির্বাচনে পূনরায় গ্রিন পার্টির মনোনয়ন নিয়ে জার্মান ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। নির্বাচনপূর্ব জরিপে আমার জয়লাভের সম্ভাবনা থাকলেও দুঃখজনকভাবে আমি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পারিনি।
সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্ব ও কাজ এখানের রাজনৈতিক দলগুলোই করে থাকে। নির্বাচনের পূর্বে প্রতিটি দল রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী কী করবে তার বিস্তারিত রূপরেখা প্রণয়ন করে। এবং তা মুদ্রিত আকারে প্রচার করা হয়। এখানের ভোটাররাও চেষ্টা করেন প্রতিটি দলের কর্মসূচি পড়ে দেখার। এরপর ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তারা কাকে বা কোন পার্টিকে ভোট দিবেন। এখানে ভোটারদের ওপর কেউ প্রভাববিস্তার করে না।
নির্বাচনের পূর্বে প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহে এক বা দুইদিন শহরের মাঝখানে প্রচারণা চালানো হয়। সেখানে পথচারীদের হাতে দেয়া হয় দলের কর্মসুচি। প্রত্যেক শহরের অফিস কর্তৃক নির্ধারিত স্থানেই কেবল পোস্টার লাগানো হয়। এখানে কোন বাড়ীর দেয়ালে কোনরকম পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ। এমনকী এখানে কোন মাইকিং বা এধরনের কোন কিছুই করা হয় না। এরপর হয় নির্বাচন এবং যে দলই নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করুক না কেন, তারা চেষ্টা করেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী তাদের কর্মসুচি বাস্তবায়ন করার। অথচ বাংলাদেশে দেখছি ভিন্ন চিত্র। কে কাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবেন, কে কাকে জেলে ভরবেন এসব নানারকম সহিংস আচরণ। আমি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি- সহিংসতা পরিহার করে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে আপনাদের দলের কর্মসূচি কী হবে তার তালিকা প্রণয়ন করে জনগণের মাঝে প্রচার করুন। বাংলাদেশের মানুষ দূর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ চায়। এদিকটা খেয়াল রেখে আপনারা আপনাদের কর্মসূচি ঘোষণা করুন।
প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আমি দু’টি প্রস্তাবনা পেশ করছি-
এক) আমরা যারা প্রবাসে রয়েছি, তাদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক এবং
দুই) প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ১০টি সংরক্ষিত আসন ঘোষণা করা হোক। যাতে প্রবাসে বসবাসরত অভিজ্ঞ ও যোগ্যরা বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।
-লেখক, শাহাবুদ্দিন মিয়া, জোস্ট, জার্মানি।