কালের গহ্বরে বিচারালয়, বিচাঙ্গনের অনেক কিছুই বদলে গেছে, কিন্তু মানুষ তার চাহিদা মত সঠিক, ন্যায় বিচার পাচ্ছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর জনতাই জানে! তবুও একথা স্বীকার করেই বলছি, ব্রিটিশ আমলের সুবিধাভোগী শ্রেণী কতৃক সৃষ্ট আইন, স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন অনস্বীকার্য। কারণ সোজা সাপটা বলতে গেলে ফৌজদকরী বিচার কাজ বলতে গেলে সাব ইন্সপেক্টর কতৃক প্রদও রিপোর্টের বিশ্লেষণ। আর দেওয়ানী মামলার বিচার বলতে কানুনগো কতৃক প্রদও রিপোর্টের বিশ্লেষণ। যার অবসান দরকার। আধুনিক সভ্যতা, সাংস্কৃতিতে ইহা বেমানান। আগে ঝুড়ি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল এখন গণতন্ত্রের দাবীতে আন্দোলন চলতে থাকলেও এ নিয়ে কোন উচ্চ বাচ্য দেখি না। হয়তো আমি বোকা বুঝতে পারি না, বলে বকর বকর করি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও রায় লেখা হয় ইংরেজিতে। যে দেশের মানুষ বাংলাই শতভাগ লোকে বোঝেনা, সেদেশের ইংরেজিতে লেখা রায় কি কাজে কি করে মানুষকে সচেতন করতে পারবে তাও আমার বোধগম্য নয়।
সে যাই হোক বিচার হওয়া উচিত দৃশ্যমান। দৃশ্যমান বিচার না হলে ন্যায় বিচারও পরাহত হয়। যেমন যারা ইনডেমনিটি বিলের আবিষ্কারক তাঁরা আইনজীবী ছাড়াই মার্সাল ‘ল’ কোর্ট পরিচালনা করে, হাজার হাজার মানুষকে বিনা কারণে অকাতরে ফাঁসি দেওয়ার পরও সমাজে বড় গলায় কথা বলে, এখন ন্যায় বিচার চায়, সুশাসন চায়, আইনের শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বলে মিথ্যাচারিতায় আন্দোলন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। যদি তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, ইনডেমনিটি বিলে স্বাক্ষর করে জাতিকে কি বিচার দিয়েছেন। উত্তর আমার জানা নাই, তাঁরাও জানে না, তবে এদিক ওদিক বলে পাশ কাটিয়ে যাবে এটা জানি।
বিচারক নিয়োগ নিয়ে যারা কথা বলেন, তাঁদের কাছে জানতে চাই, একজনের বয়স দশদিন কম থাকায় নিয়োগ দশ দিন পিছিয়ে দিয়েছিলেন কেন? ভূঁয়া সনদধারীকে বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে অনাকাঙ্খিত লোকজন গেঁড়ুয়া, কোর্তা, সি.আর মামলা আর এজাহারের অভিযোগের পার্থক্য বোঝেনা তাদেরকে ঔপনিবেশিক আইনের দোহাই দিয়া বিচারকের আসনে বসানোর ফল কিছু দিন ভোগ করতে তো হবেই। বিচারিক কাজ বড় কঠিন, দূর থেকে যতটা সহজ মনে হয়, বিচার কার্যক্রম ততটা সহজ নয়। সত্যিকার অর্থে মোয়াক্কেলের বক্তব্য কৌশলীকে বুঝে হজম করার পর তা লেখনিতে প্রকাশ করার পর তা সংক্ষেপে উগড়ে দিতে হয়, বিচারকের সামনে, তিনি তা সঠিক ভাবে অনুধাবন করতে পারার পর তিনি তার লেখনিতে তা সঠিক ভাবে প্রকাশ করার মধ্যদিয়ে সঠিক বা ন্যায় বিচার। কোথায় সেই চেতনা বোধ এদেশের মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি কি? মানুষ এসব জানে কি?
আইনজীবীগণ সাদা সার্ট, সাদাপ্যান্ট পড়ে কালোকোর্ট, গাউন পরিধান করে সকলের থেকে পৃথক অবস্থান নেয়, বিচারকগণও একই পোষাকে বিচার কাজ করতে গিয়া অন্যের অপরাধ বা সমস্যাকে নিজের মত করে, নিজের মত প্রকাশে কৌশল অবলম্বন করে কথা বলেন, এর মধ্য থেকে সত্য আবিষ্কারের দ্বায়িত্ব বিচারকদের। সে কথা সকল বিচারক অনুভব করতে পারেন কিনা এটাও বিচার্য বিষয় নয় কি? প্রশ্ন হল যত দোষ সব নন্দঘোষ। আইনজীবীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়া জ্ঞান পাপীদের কাজ। কোন আইনজীবী কোন ঘটনার চাক্ষুষ বা দালিলিক স্বাক্ষী নয়। আইনজীবীরা মোয়াক্কেল নির্ভর। বাকী অর্থ নির্ভর। অতএব, সাধু সাবধান বিচারাঙ্গন, ঠিক রাখার সিংহ ভাগ দ্বায় বিচারকদের। বিচারকেরা নিজেদেরকে সুপার কোয়ালিটির ভাবলে যেমন ন্যায় বিচার, আইনের শাষন স্বপ্ন। তেমনি বিচারকের বিবেচনা বোধ সঠিক না হলে এদেশের মানুষকে সচেতন করতে পারবেন না। মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে বাধ্য। কথাগুলো অনেকের ভাল না লাগলেও আমি আমার মত করে বলতে চেষ্টা করলাম। জানিনা কিছুটা পরিবর্তন হলেও মনে স্বস্তি, শান্তি পাব, আল্লাহ সকলকে ঈমান দান করেন। আমীন…