কবিগুরু রবি ঠাকুর ভাষায়-
আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে।
আমি চোখ মেললুম আকাশে,
জ্বলে উঠল আলো
পুবে পশ্চিমে।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম “সুন্দর’,
সুন্দর হল সে।
চেতনার রঙে রাঙাই আমরা আমাদের পৃথিবীকে। পুবে পশ্চিমে আলো জ্বলেনা আমি চোখ না মেললে। গোলাপের সৌন্দর্য
বিকশিত হয়না আমি চেয়ে দেখে সুন্দর না বললে। আমার ওপর নির্ভরশীল আমার পৃথিবীটা।
যেদিন আমি অচেতন পড়ে রইব। সেদিন আমার কেউ থাকবেনা কাছে। কিছু থাকবেনা যা নিয়ে আমি বলি আমার কত কিছু না আছে।
অর্ধশত বছর অতিবাহিত হলো আমার পৃথিবী থেকে। সুস্থ্যদেহে আর কত কালইবা চেতনার রঙে রাঙাব আমার এই পৃথিবী। আমি নিশ্চিত হয়েই বলেছি আমার প্রিয় ২১০০ সালকে আমি স্বাগত জানাতে পারবনা। যেই সালে পৃথিবী পরিপূর্ণতা পাবে কানায় কানায়। ঘুম থেকে জেগে উঠামাত্র সকল সুবিধা হাতের নাগালে পাবে ২১০০ সালের পৃথিবীবাসি।
দেয়ালের দিকে চোখের পলক পড়তেই কম্পিউটারের স্ক্রীন প্রোজেক্টরের মত এসে পড়বে। চোখের ইশারায় স্ক্রীনের সাইজ ছোটবড় হবে। মাউস আর কীবোর্ড নিয়ে হাতাহাতি করতে হবেনা। উচ্চারণের সাথে সাথে ভাষান্তর হবে। লাইট ফ্যান এমনকি দরজা জানালা সবকিছু থাকবে স্বয়ংক্রিয়। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় নিজেকে আপন ভূবনে বিচরণের অভূতপূর্ব আগামীর ২১০০ সাল।
সেই পৃথিবীর সীমান্তে দাড়িয়ে আমি দেখছি- কোথায় ছিলাম কোথায় যাব এই আমি? ২১০০ সাল না পাওয়ার বেদনা আমাকে যতটা না কাঁদায় তারচেয়ে অনেক বেশি হাসায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকালীন আমার জন্মলগ্ন থেকে পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি চেতনার রঙে রাঙিয়ে।
সেই দক্ষিণ বাংলার বরিশাল বাকেরগঞ্জের কাঠালিয়া থানার জয়খালী নামের অজপাড়া গাঁয়ে আমার চেতনার বিকাশ। কেরোসিনের ওপর নির্ভর করত ঘরের আলো। সন্ধ্যা এলে যেন আমার পৃথিবী ফুরিয়ে আসত। রাতের খাবারের আয়োজনে মায়ের দোপাইক্কা চুলায় স্বাদের মাছ, মাংস কিংবা সাধারণ তরকারি রান্নার দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে যখন রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের বাসার গ্যাসের চুলায় স্ত্রী রান্না বসায়। সেই চুলার আলোতে একদিকে রান্না আরেকদিকে আলোর কাজ হতো। বিদ্যুতের আলো ছিলো স্বপ্নের। গ্যাসের চুলায় রান্নার সুবিধাটুকু আমার মায়ের ভাগ্যে আর জুটলনা। যে গ্যাস এখন পদ্মাসেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরে ঘরে পৌছে যাচ্ছে। (লেখা চলবে)
পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি; গ্রাম্য পরিবেশ থেকে শহুরে পরিবেশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, সাংবাদিকতার রীতি, রাজনীতি, লাইফ স্টাইল আর অত্যাধুনিকতার দিকে ধাবিত দুনিয়ার কথা বলব।