মাহফুজ আনাম লিখেছেন, হাসিনার অপশাসনের কারণে যেন আমাদের বঙ্গবন্ধু-বিচার প্রভাবিত না হয়।
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, এবং একই সঙ্গে বিগত ১৫ বছরের হাসিনা-দুঃশাসনকে শক্তি জোগাতে থাকা সবচে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আইকন।
এখন সমস্যা হইতেছে, একাত্তরের মহান বঙ্গবন্ধুকে যখনই শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে যাই, সেই ফুল গিযা পড়ে এক পলাতক হাসিন দিলরুবার পায়ে। তিনি তরতাজা হৈয়া যান, চট করে ঢুকে পড়বার জন্য রেডি হৈয়া পড়েন।
দিলরুবার মনোরঞ্জন হবে না, অথচ ফুল পড়বে পিতার পায়ে — এমন রাস্তা ঐ হাসিন বিগত ১৫ বছরে একদম সিলগালা করে দিয়েছেন। ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামল ছিল রোম শহরের মত, অল রোডস লিড টু রোম! আপনি বায়ান্নকে ভালবাসেন — ফলে টাকা পাচার করবে এস আলম, একাত্তরকে আপহোল্ড করেন — মজা মারে মোজা বাবু, শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা করেন — জেল হেফাজতে মারা যাবে লেখক মুশতাক, রাজাকারকে ঘৃণা করেন, পচাত্তরে শোক প্রকাশ করেন — ফুলে ফেঁপে উঠে সালমান এফ রহমান। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জনগুলোকে এবং আনন্দ এবং শোকের মুহূর্তগুলোকে এভাবে আওয়ামীকরন করা হয়েছে, মনেটাইজ করা হয়েছে এবং এর পেছনে শেখ মুজিবকে একটা ধর্মতাত্ত্বিক প্রকল্প আকারে হাজির করা হয়েছে।
মাহফুজ আনাম কোন তরিকায় এই ধর্মতত্ত্ব, দুঃশাসন আর হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিকে পাশ কাটায়া বঙ্গবন্ধুকে তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দিতে পারতেছেন, সেইটা তিনি লেখেন নাই। নির্মোহ ইতিহাসবেত্তার জন্য রাইখা দিছেন। ঐতিহাসিকের বঙ্গবন্ধু আর কালচারাল আইকন শেখ মুজিবের মধ্যে কিভাবে ফারাক করতে পারতেছেন তাও জানান নাই। তার লেখায় হাসিনার অপশাসনের বিবরণ আছে, শেখ মুজিবুর রহমানের বীরত্বগাঁথার বিবরণ আছে — কিন্তু যেটা আশংকাজনকভাবে অল্প আছে সেটা হল বাহাত্তর থেকে পচাত্তর। বিগত ১৫ বছরের ফ্যা**স্ট শাসনব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়েছিল যেখানে। মাহফুজ আনাম এই ধারাবাহিকতাটুকু একেবারেই মিস করে গেছেন।
আর হ্যাঁ, মাহফুজ আনাম অবশ্য “হাসিনার অপশাসন” বলছেন, “ফ্যা*সি*স্টি*ক” বলছেন, কিন্তু “ফ্যা*সি*স্ট” বলছেন না। ফলে, ইতিহাসের মেলবন্ধন আর ফ্যা*সি*বা*দের সাংস্কৃতিক আইকনগুলোকে তার না চিনবারই কথা।
– আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টার ফেসবুক থেকে সংগ্রহ