ষোল আনাই মিছে।
———————
বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে
মাঝিরে কন , “বলতে পারিস্ সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যাল্ফেলিয়ে হাসে।
বাবু বলেন, “সারা জনম মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি!”
খানিক বাদে কহেন বাবু,”বলত দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেম্নে আসে পাহাড় হতে নেবে?
বলত কেন লবনপোরা সাগরভরা পানি?”
মাঝি সে কয়, “আরে মশাই , অত কি আর জানি?”
বাবু বলেন, “এই বয়সে জানিসনেও তাকি?
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাকি।”
আবার ভেবে কহেন বাবু, “বলতো ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?
বলত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?”
বৃদ্ধ বলে, “আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?”
বাবু বলেন, “বলব কি আর, বলব তোরে কি তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।”
খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুবল বুঝি দুলে।
মাঝিরে কন, “একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবল নাকি নৌকো এবার ? মরব নাকিআজি?”
মাঝি শুধায়, “সাঁতার জানো? মাথা নাড়েন বাবু”
মুর্খ মাঝি বলে, “মশাই , এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব কারো পিছে,
তোমার দেখি জীবনখানা ষোল আনাই মিছে!
জীবনের হিসাব
সুকুমার রায়