আপনি যদি অন্ধ না-ও হন, তারপরও হাতির পূর্ণাঙ্গ অবয়ব দেখতে পাবেন না, যদি গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রাণীটির বৃহৎ আকৃতির কারণেই দৃষ্টিটাকে দূরে সরিয়ে নিয়ে ‘ঘন বৃত্তাকার’ পথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাহলেই হাতির পূর্ণাঙ্গ অবয়ব দেখা সম্ভব হবে।
যেমন- আপনি পানিতে ডুবে থেকে পানির বিস্তৃতি বা ধারক বিষয়ে ভালো তথ্য পাবেন না। যে পুকুরে, নদীতে বা সাগরে ডুবে আছেন, তা ‘পাখির চোখে’ দেখার প্রয়োজন হতে পারে। যদি সেটা ধরে নিই গণমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যম কিংবা প্রচারমাধ্যম, যেখানে আপনি রাতদিন ডুবে থাকছেন, সেটা কীভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন?
নিজ কমিউনিটির প্রতি যে দায়বদ্ধতা সেটা যদি ট্যাবু ভাবেন, তাহলে সাংবাদিকতার কঙ্কাল প্রদর্শনে জনগণ বা সংবাদ ক্রেতাদের আস্থা বা বিশ্বাসভঙ্গের ঝুঁকি থাকবেই। কারণ সব পেশা বা কাজেই ‘আলোর নিচে অন্ধকার’ শিরোনামে দার্শনিক ভিত্তি থাকে। খবরের ভোক্তাদের লেন্সটাকে ‘সাংবাদিকতার অন্ধকারে’ ফোকাস করা অনেকটা দায়বদ্ধতা ভঙ্গ করে সেই বাক্যটির মতো ‘কঠিনেরে ভালোবাসিলাম…।’
গত কয়েক বছর ধরেই ‘কঠিনেরে ভালোবেসে’ সাংবাদিকতার সাংবাদিকতা নিয়ে গভীর সমালোচনা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। তাতে আমাদের দেখাটা ‘অন্ধের হাতি দর্শনের’ মতো আর দেশের বাইরের পর্যবেক্ষণ যেন ড্রোন ক্যামেরার লেন্সে দেখা পূর্ণাঙ্গ হাতি। যা দেখে শুধু নিজস্ব কমিউনিটিই নয়, সংবাদ ভোক্তাদেরও ভিমড়ি খেয়ে আস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ছে।
মেরুদণ্ড নিয়েও যারা দেশীয় সাংবাদিকতায় নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষক তাদের ভাষ্য, সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যম যখন ক্ষমতা আর অর্থের পকেটে সব প্রশ্ন জমা রাখে, তখন সেসব প্রশ্ন অস্ত্র হয়ে ফিরে আসতে থাকে নিজেদের দিকে। যাতে বিদ্ধ হতে থাকেন কিংবদন্তি থেকে শুরু করে ব্রাত্যরাও। মিডিয়া শ্রমজীবীদের ব্যক্তিগত আলাপে একটাই ভাষ্য, তারকা বা কিংবদন্তি থেকেই অধঃপতনটা শুরু হয়েছে।
অন্যসব পেশার মতোই সাংবাদিকতাকেও গিলে খেয়েছে ক্ষমতা আর অর্থ (অপরাজনীতি)। যার ধাক্কায় অনিয়ম, দুর্নীতি, চরিত্র ও নৈতিক স্খলনে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে গোটা কমিউনিটি। সবচেয়ে বেশি আঙ্গুল উঠছে সম্মানীয় কিংবদন্তিদের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা যখন আমাদের কাছে ট্যাবু হয়ে যায়, তখন বাইরের লেন্সগুলোই নিয়ন্ত্রণ করে সংবাদ ভোক্তাদের সংবাদমাধ্যমবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি। যার ওপর আমাদের হাত থাকে না।
(সাংবাদিকতার সাংবাদিকতা: ১৫ মে, ২০২৪। এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা)