গত ৫ মে থেকে রাজধানীর ঢাকা ট্রমা সেন্টার এন্ড স্পেশালাইজ্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন লাখ হাফেজদের শিক্ষক শতবর্ষী আলহাজ্ব হাফেজ মোঃ আব্দুল লতিফ।
শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণকারি এলেম বক্শ। এতছোট বেলায় তার পিতা-মাতা হারান যে কারো চেহারা ছবি তার মনে নেই। বড় ভাই আঃ ছোবহান বক্শ হাজী শরীয়তুল্লাহ (রঃ)এর প্রতিষ্ঠিত মুলফৎগঞ্জ মাদ্রাসায় তার ছোট ভাই এলেম বক্শকে ভর্তি করে দিয়ে আসেন। অল্পদিনের মধ্যে শিশুশ্রেণির সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এলেম বক্শ।
ছাত্র এলেম বক্শের শিক্ষক ছিলেন দক্ষিণ বাংলার গৌরব আলহাজ্ব হাফেজ মোঃ লেহাজ উদ্দিন (রঃ)। যিনি একাধারে দীর্ঘ ৭ বছর মক্কা শরীফ থেকে বিশ্বের অন্যতম একজন হাফেজ হয়ে আসেন। বহুবার তিনি মিশরী ও ইয়েমেনীসহ বিভিন্ন দেশের হাফেজদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন। নবীজীর রওজার চারধারে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কোরআন খতম করতেন যিনি তিনিই হাফেজ লেহাজ উদ্দিন বড় হাফেজ উপাধিতে ভূষিত হন।
শিক্ষক হাফেজ লেহাজ উদ্দিন বড় হাফেজ সাহেব শরীয়তপুর থেকে বরগুনা জেলার আমতলী পীর ছাহেবের দরবারের মাদ্রাসায় বদলি হয়ে যাওয়ার সময়ে এলেম বক্শকে তারসঙ্গে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব জানালে তার অভিভাবক বড় ভাই আঃ ছোবহান বক্শ তাতে শুধু সম্মতিই নয়; তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে ৮০টি রৌপ্যমূদ্রাও দিয়ে দেন। আমতলী দরবারে এসে পড়াশোনায় আরো মনোযোগি হলে সেখানের সব ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দেন অসহায় শিশু এলেম বক্শ।
একদিন আমতলী পীর ছাহেব এলেম বক্শকে সবার মাঝে পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন। দরবারের সবাই অধীর আগ্রহে ঘোষিত পুরস্কার প্রদান মূহুর্তের অপেক্ষা করছে। এলেম বক্শ নিজেও জানে না তার জন্য পীর ছাহেব কি পুরস্কার দিবেন। দরবারের বিশাল মসজিদে সেদিন আছরের নামাজান্তে পীর ছাহেব কেবলা সবাইকে বসতে বলেন। সবাই বিনয়ের সাথে বসলেন। পীর ছাহেব হুজুর মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের ফজিলত নিয়ে বয়ানের এক পর্যায়ে এলেম বক্শকে ডেকে তার কাছে নিলেন। কোরআন তেলাওয়াত করতে বললে এলেম বক্শ তার সুললিত কন্ঠে তেলাওয়াত শুরু করলে পিন পতন নীরবতা নেমে আসে। তেলাওয়াত শেষে পীর ছাহেব আরো কাছে ডাকলে সবাই পীর ছাহেবের হাতের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন। পীর ছাহেব না জানি কত দামি পুরস্কার এলেম বক্শের হাতে তুলে দেন। পুরস্কারটি পীর ছাহেবের হাত থেকে নয়; অন্তর থেকে কান্না বিজড়িত কন্ঠে ঘোষণা দিলেন- পরকালে নাজাতের লক্ষ্যে আমি আমার নামটি এই শিশু হাফেজকে দান করলাম। কেউ যেন এই শিশু হাফেজকে আর এলেম বক্শ নামে না ডাকে। এলেম বক্শ হয়ে গেল সবার প্রিয় আব্দুল লতিফ। তারপর থেকে কেউ শুধু লতিফ নামেও ডাকতে সাহস করেনি। পীর ছাহেবের সম্মানার্থে আব্দুল লতিফ বলে পূর্ণ নামেই ডাকতেন। সেই সম্মান আজও রয়েছে অক্ষুন্ন এবং থাকবে চিরকাল ইনশাআল্লাহ…
এভাবে তিনি এলেম বক্শ থেকে আব্দুল লতিফ হয়ে ওঠেন। পরবর্তি সংখ্যায় প্রকাশ পাবে কিভাবে তিনি তার শিক্ষক হাফেজ লেহাজ উদ্দিনের উপাধি বড় হাফেজের পাশাপাশি ছোট হাফেজ হয়ে ওঠেন। হয়ে যান মহান শিক্ষকের আপন ভায়রা জী জামাই। কিভাবে সমাদৃত হন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের নামিদামি মসজিদ-মাদ্রাসায়, চিংড়াখালী মিঞাজীর দরবারে ও ছারছিনার দরবারে। ছারছিনার দরবারের এজাজতে ৫২ বছর বরগুনা জেলার পাথরঘাটা বড় মসজিদে। জানার জন্য সংগ্রহ বার্তার সঙ্গেই থাকুন। প্রয়োজনে লেখককে ডাকুন 01711228595