আমি ছোট থেকে দাদা দাদীর কাছে থাকতাম, আমার দাদা ওয়াজ শুনে, মসজিদে খুৎবা শুনে বা ভীষণ অপরিচিত মানুষের মৃত্যু খবর শুনেও হু হু করে কাঁদেন আমিতো সেই দাদার নাতি। তাই এক কালে সেই ছিঁচকাদুনে স্বভাব আমারও ছিলো। এক সময় বাপ্পারাজের ছবি দেখে হু হু করে কাঁদতাম, বই পড়ে অথবা সাহাবীদের জীবনী পড়েও কাঁদতাম, শুধু তাই নাকি হুদাই শুয়ে শুয়ে আকাশ কুসুম ভেবে ভেবে সে কি কান্না,, ঘোড়ার মাথা ব্যাঙের ছাতা।
আমি মানুষ অথবা কোন প্রাণীরই দুঃখ সহ্য করতে পারতাম না কেন যে ভেতরটা হু হু করে উঠতো,বন্ধুদের সাথে বেড়াচ্ছি হঠাৎ কাঁটাবনের ভেতর বিড়ালের বাচ্চা ডাকে,, প্রথমে ভাবলাম ভূত,,পরে ভয়ে ভয়ে ঢুকে দেখি বিড়ালের বাচ্চা কোন মানুষের বাচ্চা ফেলে গেছে লোকালয় থেকে অনেক দূরে,, বন্ধুদের নিষেধ উপেক্ষা করে ঢুকে পড়লাম কাঁটার মধ্যে,, বিড়ালের বাচ্চা ধরে এনে যখন দাঁড়ালাম তখন আমার হাত, পা, সারা শরীর ছিলে একাকার।। একবারতো মাচার উপর উঠে পাখির বাচ্চা তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে পায়ের নিচে মুরগীর বাচ্চা পড়ে কেল্লাফতে,, ঐ বাচ্চা কোলে নিয়ে সে কি কান্না আমার,, দুই দিন প্রায় না খেয়ে শুধু কান্না।
দাদি একদিন বিড়ালকে অনিচ্ছাতেই বাজে ভাবে আঘাত করে ফেলে,,দাদীর সাথে চিল্লাপাল্লা করে উঠে আম্মুর কাছে চলে আসলাম,সত্যি বলতে দাদীকেও ভীষণ হৃদয়হীনা মনে হচ্ছিলো যদিও তার চোখেমুখে অপরাধবোধ স্পষ্ট ফুটে উঠেছিলো,কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারিনি। তারপর হঠাৎ করেই বদলে যেতে থাকলাম অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতাম,, একটা সময় আমি মানুষকে যেন ইচ্ছে করেও পোড়ানো শুরু করলাম,, আমাকে বিশ্বাস করা মানুষদের বুঝাতাম তোমাদের কিছুতেই আমার কিছু যায় আসেনা,, ভেতরে ভেতরে কি হচ্ছে সেটা আলাদা ব্যাপার।
এক সময় খেয়াল করলাম আমি পাকা অভিনেতা হয়ে উঠেছি,আমি কী দারুণ অভিনয়ে মানুষকে প্রভাবিত করছি,, কারো কারো কাছে হুমায়ুন ফরিদীর চেয়েও ভয়ংকর ভিলেন হয়ে উঠলাম,,অবশ্য নায়ক হবার ইচ্ছে হয়নি। ভালোই চলছিলো মুখোশ এর ভেতর বসবাস,,আমাকে মানুষ বুঝে উঠতে পারেনা,,এ এক অন্য রকম পৈশাচিক আনন্দ। কিন্তু ইদানিং ক্লান্ত হয়ে পড়ছি,,শরীরের সাথে মনও ক্লান্ত,,আজকাল কবিতা পড়তে যেয়ে,, শুনতে যেয়ে অথবা কোন সুর শুনেও নিজের অজান্তে চোখ ভিজে উঠছে,, অবশ্য আমি আর লুকানোর চেষ্টাও করছিনা,,মানুষের সাথে অভিনয় করা যায় নিজের সাথে কী দরকার।
“জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি যাদের অন্তরসমূহ হবে পাখির অন্তরের মতো।” -আল-হাদীস