আজ আমার এই লেখাটি হাসপাতালের চেয়ারে বসে নির্ঘুম রাতের ১২ দিনের অভিজ্ঞতা। তাও যদি আবার হয় একমাত্র সন্তানের অসুস্থতা !যে তার চাহিদার কথা ভাষায় বুঝাতে পারে না।যে তার সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলতে পারেনা। ডাক্তারও এই বারো দিনে ওর কোন সমস্যা খুজে পাচ্ছে না। তবে ডাক্তারদের কোন দোষ নেই তারা তাদের যথা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আজ প্রায় একমাস আমার ছেলে অজানা এক অসুখে প্রচন্ড রকম কষ্ট পাচ্ছে। বিশ বছরের ছেলে অনবরত কান্না আর কষ্ট পাচ্ছে। শিশুর মত কান্নাই ওর ভাষা।মুখের দিকে তাকানো যায় না।কি নির্মম আর বেদনাদায়ক কষ্ট ওর চোখে মুখে।সকাল থেকে রাত শুধু অবুজের মত ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। কিসের সে ব্যথা কোথায় সে ব্যথা কেন সে ব্যথা কিছুই বলতে পারে না। সেই দৃশ্য দেখে নিজের বুক টাই যেন ব্যথায় ভরে উঠে। ধৈর্য ধরাটা যে কত কঠিন যখন আপন মানুষ কষ্ট পায়। বিশেষ করে সন্তান। কখনো মাথা ধরে কাঁদছে ,কখনো বুকে ধরে কাঁদছে। কখনো হাত পা ছুটাছুটি করে কাঁদছে। এ কারনে মাথা, বুকে, যে যে সব পরীক্ষা করার দরকার সব কিছু করা হয়েছে। পরীক্ষায় কিছুই ধরা পরছে না।তবে কেন সে কষ্ট পাচ্ছে ? তাহলে কিসের কষ্ট। ম্যাডিকাল পরীক্ষা করেই যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ডাক্তার রুম ভিজিট করছে, রুমের জন্য একজন সোস্যাল ওয়ার্কার বরাদ্ধ। নার্স একজন রাতে আরেকজন আসছে দিনে। তার উপর নার্স হ্যালপার যাকে পি সি বলে তারা নাফির বিছানা সাদা চাদর প্রতিদিন কি যত্ন করে বিছিয়ে দিচ্ছে। তাতে ও ঘুমাচ্ছে না। ওর রুমে নিজের বাতরুম প্রতিদিন পরিস্কার করে যাচ্ছে।
এই হাসপাতালের নাম অনেক শুনেছি ভাল। তার প্রমান মিলেছে প্রতিদিন আমার ছেলের সাথে থাকায়। আমাকে যারা সবাই প্রতিদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করছে তাদের উদ্দেশ্যে আমার বলা। সকলকে ধন্যবাদ। এখানে খাবারের কোন সমস্যা হয় না। আমার ছেলের সাথে আমাকেও হাসপাতাল প্রতিদিন তিনবেলা খাবার দিচ্ছে। প্রথম প্রথম একারনে অবাক হয়েছি। কারন হাসপাতালের এমন কোন অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না। হাসপাতাল খাবার দিবে ভিজিটরকেও। এত কিছু এত মানুষের সমাগম আমার স্পেশাল একটি বাচ্চাকে ঘিরে তারপরেও আমি কত অসহায় মা ! আমি ওর কষ্টে কিছুই করতে পারছি না আমার সন্তানের জন্য। ওর না বলা কথা অসহ্য যন্ত্রনা কখনো আমার দুচোখে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কখনো ইউটিউব ঘাটিয়ে রোগমুক্তির দোয়া পড়ছি। অস্থির চঞ্চল মন বেশীক্ষণ কিছুইতেই যেন স্থির হতে পারি না। বাহিরে জানালা দিয়ে দূরের কোন দৃশ্য দেখে ভাবি এই যে এত গাড়ি বাড়ি ধন দৌলত সন্মান সব কিছু তুচ্ছ যদি শুয়ে কাটাতে হয় ঐ সাদা চাদরের বিছানায়। সুস্থতা কত বড় নিয়ামত আল্লাহ তালার তা আমি বুঝতে পারছি। নিজের সন্তানের অসুস্থতা মা এবং বাবার জন্য কতটা যে কষ্টের তা এই মর্মে উপলব্ধি করছি হাসপাতালের দুই হাতল ওয়ালা চেয়ারে বসে রাত দিন কাটিয়ে। মাঝে মাঝে ফোনটা হাতে নেই কাউকে ফোন দিব এই বোঝা হাল্কা করতে। ফোন খুলে কি দেখব, কি লিখব কি করব কিছুই ভাল লাগে না। হাসপাতাল কত কষ্টের জায়গা সে হোক যত আরামের। কিভাবে যে তুলে ধরব আমার হৃদয়ের জমাট বাধা কষ্ট যা আর সহ্য করতে পারছি না। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই- আমার ছেলের রোগ মুক্তির জন্য। সবাই দুই হাত তুলে দোয়া করবেন শিগগিরই যেন আমার অবুঝ এই ছেলেটা কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফিরে আসতে পারে।