বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৫তম বার্ষিক সভা আজ ৮ই পৌষ ১৪২৯/২৩শে ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও বাংলা একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ ও তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট অবহিত করেন। একাডেমির সদস্যবৃন্দ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। মহাপরিচালক সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং উত্থাপিত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য প্রদান করেন। সভায় ২৪শে ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারাদেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করেন বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২২-এর সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
সভায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ ২০২২ এবং বাংলা একাডেমি পরিচালিত কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার (দ্বি-বার্ষিক পুরস্কার)-২০২২, সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার-২০২২, অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার-২০২২, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করা হয়।
বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০২২’প্রাপ্তরা হচ্ছেন : ১. অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক (শিক্ষা), ২. অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান (বিজ্ঞান), ৩. অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন (চিকিৎসা), ৪. নাসির আলী মামুন (আলোকচিত্রশিল্প), ৫. হামিদুজ্জামান খান (ভাস্কর্য/চিত্রকলা), ৬. জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় (সংস্কৃতি), ৭. ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (সমাজসেবা)।
ছড়াকার সিরাজুল ফরিদ কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০২২; গবেষক ড. রাজিয়া সুলতানা সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার-২০২২; নাট্যজন মামুনুর রশীদ অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার-২০২২ এবং গবেষক ড. ইসরাইল খান সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০২২-এ ভূষিত হয়েছেন।
কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার-এর অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকা; সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার-এর অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকা; অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার-এর অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকা এবং সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার-এর অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা।
পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্ত গুণীজণদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামো এবং গবেষণাগত বিপুল সংখ্যক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অনন্য উত্তরাধিকার বাংলা একাডেমি অতীত, বর্তমান ও আগামীর মধ্যে সেতুবন্ধ নির্মাণের কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, বার্ষিক সাধারণ সভায় সারাদেশ থেকে আগত ফেলো, জীবনসদস্য এবং সাধারণ সদস্যবৃন্দ বাংলা একাডেমির ভবিষ্যৎ রূপকল্প নির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন বলে আমরা আশাবাদী। সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে এগিয়ে যাব।
সভাপতির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি দেশ ও জাতির গর্ব ও অহংকারের প্রতীক, আমাদের সবার প্রাণের প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব ও বিকাশের সঙ্গে বাংলা একাডেমি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। সাধারণ সভায় সারাদেশ থেকে আগত ফেলো, জীবনসদস্য এবং সদস্যবৃন্দ বাংলা একাডেমির সঙ্গে সঙ্গে দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের ধারণা এবং মতামত তুলে ধরেন, যা আমাদের প্রগতিশীল অভিযাত্রাকে তরান্বিত করে।
সূত্র- বাংলা একাডেমির ফেসবুক