বিগত সালের কোনো খেলাতেই মিলাতে পারিনি সময়। এবারের খেলাতেও অতটা মনোযোগি ছিলাম না। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত হওয়ায় আর মনোযোগি না হওয়ার উপায় ছিলনা। ৩৫জন স্টাফদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা অনুভূত হচ্ছিল গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত। ৯০% আর্জেন্টিনার সাপোর্টারের মধ্যে নিজের অবস্থান তখনও স্থীর ছিলনা আমার। নিজেকে সুবিধাবাদি বলেও মনে হয়নি। কেননা আমি নতুনদের বরণে সর্বদাই প্রস্তুত রাখি। জোয়ারে গা কখনো ভাসাতে পারিনি; পারবওনা বোধ হয় বাকি জীবনে কখনো।
আমাদের প্রশাসনিক পরিচালক এবিএম সেলিম প্রথম থেকেই ছিলেন আর্জেন্টিনার অন্ধ ভক্ত। গতকাল কোনোভাবে বিশ্বকাপ মেসির হাতছাড়া হলে বসের অবস্থা যে কি হতো; ভাবাই মুশকিল। সহকর্মীদের মধ্যে জয়, জামিল, নাইম, আজমির, সোহেল, জাকির ও আলীর আর্জেন্টিনার বিজয়োল্লাসে শীতের ঠান্ডাকে গ্রীষ্মের গরমে পরিণত করে খালি গায়ে নাচছিল। এছাড়াও সহকর্মী মিমও ছিল অর্জেন্টিনার দারুণ ভক্ত।
এবারের বিশ্বকাপ খেলা সম্পর্কে মিম জানায়- সৌদির সাথে হেরে গেলে মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। সেমি ফাইনালে ক্রোশিয়ার সাথে জিতলে ফের আশার সঞ্চার হয়। শেষবধি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে প্রিয় খেলোয়ার মেসির হাতে বিশ্বকাপ ধরা দিল বলে বুকটা শীতলানুভব করছি।
সোহেল ও আজমিরের কাছে তাদের বিজয়ে আনন্দ অনুভূতির কথা জানতে চাইলে সোহেল কেঁদেই ফেলে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিটা এত দীর্ঘ ছিল যে তা বুকে বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। প্রাণ যায় যায় অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে আমাদের দেশের প্রতিটি সাপোর্টার যে কষ্টানুভব করছে তা কেউ আর জীবনে ভুলতে পারবেনা।
পরনে আর্জেন্টিনার গেঞ্জি, বাড়ির ছাদে আর গাড়ির সামনে আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে এবিএম সেলিম যে মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলেন; সেই স্বর্ণালী সময়টি সামনে এলে তিনি জানান- কোনোভাবেই আর্জেন্টিনার পরাজয় মানতে পারতামনা। তাই মনে মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করেছি। এই বিজয় আল্লাহর রহমত ছাড়া অর্জন সম্ভবও ছিলনা। তাই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
সুদূর কাতারে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্বকাপের উত্তাপ বাংলাদেশে এতটাই ছড়িয়ে পড়ছে যে তা ২০২২ সালের অমর ইতিহাসের নতুন অধ্যায় হয়ে থাকবে। বিজয় অর্জনের পূর্বেই বাংলাদেশি ভক্তদের সামাল দিতে প্রশাসনের হিমশিম খেতে হয়েছে। প্রাণ দিতে হয়েছে ১৬ জন বাংলাদেশির। বিশ্বকাপের এমন উত্তাপের কথা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি আর্জেন্টিনায়ও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বলে সে দেশের মাটিতে বাংলাদের পতাকা উড়তে দেখা গেছে এবারই।