অপারেশন হবে–মনে মনে প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু ভয় পাচ্ছিলাম না।
পাচ্ছিলাম না কথাটা সঠিক নয়, আয়নায় যখন নিজেকে দেখলাম, তখন দেখি– আমার মুখে হাসি নেই! নিজে নিজেই ভয় পেলাম!
যথারীতি ডিউটি ডাক্তার এলেন অপারেশন পূর্ববর্তী কাজগুলো সম্পন্ন করতে।
ফাঁসির আসামিকে ফাঁসির আগে কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। ব্লাড প্রেসার টেস্ট করা হয়, ইমাম সাহেব এসে তওবা পড়ান
আমাকে তওবা পড়ান নাই কিন্তু অপারেশন বিষয়ক যে মুচলেকা দেওয়া হয় আমার পক্ষ থেকে আমার স্ত্রী দিলেন।
ডায়াবেটিক মাপা হলো, ব্লাড প্রেসার মাপা হলো।
১৯০/১১০
আমার প্রেসার দেখে ডাক্তার ঘাবড়ে গেলেন। ডাক্তার আমাকে আশ্বস্ত করতে চেয়ে একটা প্রশ্ন করলেন, ফাঁসির আসামীকেও করা হয় আমাকেও করা হলো।
কিছু কি খেতে মন চায়?
আমি মাথা নেড়ে বললাম, চায়•••
ডাক্তার আবার জিজ্ঞেস করলেন, কি খেতে মন চায়?
আমি বললাম, ঠাটারি বাজারে একটা স্টার হোটেল আছে,দেড়শো বছরের পুরোনো হোটেল।
সেই হোটেলের গরুর মাংস এবং কাচ্চি বিরিয়ানী সঙ্গে বোরহানি খেতে চাই।
আমার কথা শুনে ইয়াকুব আলী সাহেবের জুনিয়র ডাক্তার বেয়াকুব হয়ে গেলেন। সম্ভবত বুঝে নিলেন আমার বিপি বাড়ার উপযুক্ত কারণ!
দ্রুত চলে গেলেন, যাবার আগে আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকাচ্ছিলেন!
আর আমি তাকাচ্ছিলাম আমার বউ এর দিকে।
আমার বউ এর ছোট ছোট চোখ। আমি সেই চোখে দৃষ্টি রাখতে পারছিনা। সেই চোখে গনগনে আগুন।
আমি ভস্ম হয়ে গেলাম।
গরুর মাংস আর কাচ্চিবিরিয়ানি খাওয়ার আশা বাদ দিয়ে অপারেশন টেবিলে গিয়ে সুয়ে পড়লাম।
ওখানে গিয়ে আবার প্রেসার মাপা হলো। মুসলমানের এক কথার মতো আমার প্রেশার একই স্থানে অটল।
ইনজেকশন পুশ করে আমার প্রেশারটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলল। তারপর ৪০ মিনিট অপারেশন টেবিলে প্রেসার কমার আশায় শুয়ে থাকলাম।
আল্লাহর রহমতে ডঃ ইয়াকুব সাহেবের উসিলায় অপারেশন সাকসেসফুল হল। ৭৫ ঘন্টা আমি বিছানায় শুয়ে থাকলাম। চারদিন পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হলো।
বাসায় এসে দেখি, প্রেসারটা আগের মত না হলেও কাছাকাছিই অবস্থান করছে
আজকে ভালো লাগছে ! কারণ, প্রেশারটা 130/70 !
মনির আসতে চাইলো–জানতে চাইল কী খেতে চাই?
আমি বললাম, গরুর মাংসের কাচ্চি বিরিয়ানি ••••