রোগীর সেবা করা মুমিন মুসলমানের পারস্পরিক দ্বীনি অধিকার। নবিজীর সুন্নাত। এটি সামাজিক কোনো দায়বদ্ধতা নয়। রোগীর প্রতি সমবেদনা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা করা উত্তম ইবাদত। বরং তা থেকে বিরত থাকা আল্লাহ থেকে বিরত থাকার শামিল। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত। তথ্যসূত্র
রোগীকে দেখার সুন্নাত তরিকা
১. অজুসহকারে রোগীকে দেখতে যাওয়া। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে সাওয়াবের উদ্দেশে কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়; তাকে জাহান্নাম থেকে ষাট বছর সমপথ দূরে রাখা হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং-৩০৯৭)
২. যথাসম্ভব রোগীর শরীরে হাত দিয়ে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিসন নং-২২২৩৬)
৩. রোগীকে সান্ত্বনার বাণী শোনানো। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন। তোমরা যখন কোনো রোগীর কাছে যাবে, তার জীবন সম্পর্কে আনন্দদায়ক কথা বলবে, তাকে সান্ত্বনার বাণী শোনাবে, (এ সান্ত্বনার বাণী) ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে না, যা ঘটার তাই ঘটবে কিন্তু তার মন সান্ত্বনা লাভ করবে, যা রোগী দেখতে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য।’ (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং-২০৯৪)
৪. রোগীর কাছে বেশি সময় অবস্থান করবে না। কারণ এতে রোগীর কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হ্যাঁ রোগীর কাছে অবস্থান করা, যদি রোগীর অন্তরের প্রশান্তি ও সান্ত্বনার কারণ হয়। তাহলে দীর্ঘ সময় অবস্থান করাতে কোনো সমস্যা নেই। হজরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রোগী দেখার উত্তম পন্থা হলো-রোগীর কাছ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৯২২২)
৫. চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর সাথে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে কোনো পরামর্শ থাকলে তার প্রতি লক্ষ রাখা। অনেক সময় আমরা আবেগতাড়িত হয়ে, এসবের প্রতি তোয়াক্কা না করে, রোগীকে দেখতে যাই। এতে রোগীর উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়।
৬. রোগীর কোনো চাহিদা আছে কি না জিজ্ঞেস করা। খাবার বা অন্য কোনো বৈধ চাহিদা থাকলে যথাসম্ভব পূরণ করার চেষ্টা করা। রাসুল (সা.) একজন অসুস্থ ব্যক্তির সেবার জন্য তার কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন। তুমি কি কিছু (খেতে) চাও? সে বলল, আমি কেক খেতে চাই! তিনি বললেন, ঠিক আছে। তখন তারা (সাহাবারা) তার জন্য তা ব্যবস্থা করলেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৩৪৪১)
৭. রোগীর কাছে উঁচু আওয়াজে কথা বলবে না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন। সুন্নাত হলো রোগীর পাশে কম বসা এবং বড় আওয়াজে কথা না বলা।’ (মিশকাত, হাদিস নং-১৫৮৯)
৮. রোগীর জন্য দোয়া করা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন। মুমূর্ষু রোগী ব্যতীত যে কোনো রোগীর কাছে নিচের দোয়াটি সাত বার পাঠ করা হবে। সে রোগী অবশ্যই ওই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং-৩১০৬)
দোয়া : ‘আস আলুল্লাহাল আজীম রাব্বাল আরশীল আজীম আইয়াশফিয়াকা’।
৯. রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন। তোমরা যখন কোনো রোগীকে দেখতে যাবে। তার কাছে দোয়া চাইবে, কারণ তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো কবুল হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৪৪১)
১০. রোগী মুমূর্ষু হলে তার কাছে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা মুমূর্ষু রোগীর কাছে সুরা ইয়াসিন পাঠ করো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং-৩১২১)
১১. অসুস্থ ব্যক্তিকে রোগের অবস্থা সম্পর্কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস না করা। কারণ অনেক সময় এতে রোগী বিব্রতবোধ করে। তবে চিকিৎসকের ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহতায়ালা আমাকে, আপনাকে উল্লিখিত বিষয়াবলির ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন! তথ্যসূত্র