ইমান ওজন করতে হবে কেন ?
যেহেতু অমানিশায় পুলসিরাত পার হতে ইমানের আলো ছাড়া আর কোনো বাতির ব্যবস্থা থাকবেনা। এজগতে যে যত ইমান রক্ষায় সক্ষম হবে পরকালের প্রতিটি অগ্নি পরীক্ষায় সে তত সফলতা লাভ করবে। সর্বনিম্নস্তরের ইমানের অধিকারি নিভু নিভু আলোয়ে এক পা দু’ পা করে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যেতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। কখনো গহীন ঘুটঘুটে অন্ধকারে হারিয়ে সামনে চলার পথ না পেয়ে থমকে দাড়াবে। জাহান্নামের লেলিহান শিখার আওয়াজে তার হৃদকম্প সৃষ্টি হবে। আকস্মিক আবছা আলোর ঝলকানিতে চরম কষ্টসাধ্য পথের দিশা পাবে পৃথিবীতে যার হৃদয়ে সামান্য ইমান ধারণ করে নশ্বর পৃথিবীর হাতেগোনা কয়টি বছরের জীবন পার করে এসেছে।
অন্যদিকে পূর্ণ ইমানদাররা বিজলীর ন্যায় বিদ্যুৎ গতিতে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবে। চিরসুখ আর সমৃদ্ধ জান্নাতী জীবন গড়ায় কে কতটা সফল তা বোঝার জন্যই ইমান ওজন করতে হবে।
ইমানহারা বা বেইমানদের বিষয়ে আর কিছু বলার নেই। যেহেতু তাদের চিরকালের জন্য নির্ধারিত স্থান ভয়াবহ জাহান্নাম।
ইমান কি?
শৈশবে মকতবের মৌলভি শিক্ষকের শেখানো ইমানে মোজমাল আর ইমানে মোফাচ্ছালের তরজমা দেখে নিলে ইমানের বিষয় অনেক কিছু জেনে নেওয়া যায়। মমতাময়ী মায়ের স্নেহপরশে তার কথায় যতটা মনোযোগ দেওয়া হয় তার চেয়েও আন্তরিকতার সাথে সৃষ্টিকর্তার আদেশ মেনে নেওয়া এবং পুলিশের হাতে শক্ত দড়িতে বাঁধা হাতকড়া নিয়ে মহামান্য আদালতের কাঠগড়ায় যেমন নির্দেশ মানা হয় তার চেয়েও সতর্কতার সাথে সৃষ্টিকর্তার নিষেধ মেনে চলাই ইমানের বহিঃপ্রকাশ।
ইমান বিষয়ক অগণিত হাদিস থেকে মাত্র দু’টি হাদিসের বঙ্গানুবাদ উদ্ধৃত হলো-
১) সে ততক্ষণে ইমানদার বা মুমিন নয়; যতক্ষণে না তার পিতা-মাতাসহ সবার চেয়ে বেশি বিশ্বনবীকে ভালবাসবে।
২) সে ততক্ষণে ইমানদার বা মুমিন নয়; যতক্ষণে না তার নিজের জন্য যা ভালবাসবে তা অন্যের বেলায়ও সমান মূল্যায়ন করবে।
হাদিসদ্বয়ের মর্মবাণী উপলব্ধিতেও ইমান মাপা সম্ভব। প্রথম হাদিসের ইঙ্গিত- নবীপ্রেমের কাছে পৃথিবীর সকল প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেম তুচ্ছ না হলে তার ইমান শুন্যতা প্রমাণিত হবে। নবীর সাহাবি হানজালা (রাঃ) নব বধুর সঙ্গে বাসর ঘরে না গিয়ে যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়ে নবীর প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসার ইতিহাস রচনা করে গিয়েছেন। শুধু একজন সাহাবিই নয়; সেই থেকে বর্তমান যুগেও নবীপ্রেমে জীবন উৎসর্গে উৎসাহিতের অভাব নেই কিন্তু আপনার অবস্থান কাউকে না বললেও অন্তর্যামি বেখবর নহেন।
দ্বিতীয় হাদিসের আলোকে ইমানের অবস্থা নিজেই উপলব্ধি করতে পারেন। ভেবে দেখুন আপনার দ্বারা কতজন ক্ষতিগ্রস্থ। আপনার স্বার্থে আঘাত লাগলে আপনি যতটা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন সেই পরিমাণ অন্যের স্বার্থ সুরক্ষায় আপনি কতটা যত্নবান?
ইমান ওজন করা সহায়ক আরেকটি হাদিস- “যদি তোমাদের কারো চোখে পড়ে অন্যায় কর্মকান্ড; তাহলে তাকে হাত দ্বারা বিরত রাখবে। যদি না পারো মুখে প্রতিবাদ করবে। তাও যদি না পারো মনে মনে ঘৃণা পোষণ করবে। আর মনে ঘৃণা পোষণ হচ্ছে দুর্বলতম ইমানদারি।”
এ হাদিসের দ্বারাও নিজের ইমান মেপে নিতে পারেন। প্রশাসনিক ক্ষমতা পেয়েও যারা অন্যায়কারি ও অত্যাচারিদের দমন করেনা তাদের প্রথম সারির ইমানদার হওয়াতো দূরের কথা; বিচার দিনের মালিকের আদালতে তাদের কঠিন বিচারের সমুক্ষীণ হতে হবে। একইভাবে প্রতিবাদের আওয়াজ ক্ষীণ করে অন্যায় অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিলে তাকে অপরাধীর সমান অপরাধের প্রতিফল ভোগ করতে হবে।
ইমানী দূর্বল অবস্থা থেকে সবল ও মধ্যম অবস্থা থেকে সেরা হওয়ার প্রচেষ্টা ছেড়ে আল্লাহর ওপর মিথ্যা ভরসায় ইমানের দাবি পূরণ অসম্ভব। কোরআনের নির্দেশ- “ওয়াতাঝাও ওয়াদু- ফাইন্না খইরজ ঝাদিত ত্বাকওয়া।” বঙ্গানুবাদ- তোমরা বৃদ্ধি করো; যেহেতু তাকওয়া বৃদ্ধিতেই মঙল নিহিত। তাকওয়া বৃদ্ধির মাধ্যমেই দুর্বল ইমান সবল হতে পারে; হালকা ইমান ভারি হতে পারে।
নিজের ইমান ওজন করার সহজতম উপায় হচ্ছে- ভালো কাজ করতে যতবেশি ভাল লাগবে ততবেশি ইমানের ওজন বৃদ্ধি প্রমাণিত হয়। বিপরীতে অন্যায় অপরাধ প্রবণতায় যতটা স্বাভাবিক মনে হবে ততটাই ইমানের ঘাটতি প্রমাণিত হয়।
সেভেন লক্ড ডোরের অন্দরমহলে যখন রূপবতী জুলেখা নিজের অন্তরবাস খুলতে শুরু করে তখন ইমানের অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ইউসুফ (আঃ)। পৃথিবীর যত সুখ তাহারি ছোঁয়াতে খুঁজতে না গিয়ে ইমান রক্ষার্থে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ইমান আরো বৃদ্ধি করে ইউসুফ (আঃ) সৌভাগ্যের অধিকারি হলেন। ইউসুফের অবস্থানে নিজেকে দাড় করিয়ে কল্পনার চোখে দেখতে পারবে নিজের ইমান কতটা ওজন বা হালকা? কতটা সবল বা দুর্বল?
আল্লাহ যেন সবাইকে ইমানের সাথে মৃত্যু দান করেন। আমীন