মিল্টন খন্দকারের লেখা হুবহু প্রদত্ত হলোঃ
আজ একটা অপরাধ এবং অপরাধ পরবর্তী অনুশোচনার কথা
অকপটে স্বীকার করতে চাই–
ভিডিও’তে যিনি সংগীত পরিবেশন করছেন– তার নাম শারমিন সুলতানা।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিনি একজন সংগীত শিল্পী —
তাঁকে চিনি ত্রিশবছর আগে থেকেই —
আর আমার সাথে তার পরিচয়,জানাশোনা, এবং ঘনিষ্ঠতা বছর পনের আগে থেকে —
শারমিন সুলতানা সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে।
বাবার বাড়ি বিক্রমপুরের রাঢ়ির খাল অঞ্চলে। পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিল একজন ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সাথে।
পরম সুখেই কাটছিল তাঁর দিন।
সুখের সংসারের কোল জুড়ে তিন ছেলে ও এক মেয়ের আগমনে জীবনটা ছন্দোময় হয়ে ওঠে!
কিন্তু তা যে খুবই অল্প সময়ের জন্য তা তিনি ভাবতেও পারেননি।
অকস্মাৎ স্বামী হারালেন তিনি!
মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়লো।
তিনি দমলেন না।–উঠে দাঁড়ালেন।
গানকে পুঁজি করে এগোতে চেষ্টা করলেন।
খুব একটা সফল হলেন না।
ছেলেমেয়ে গুলোকে অর্থাভাবে লেখাপড়া শেখাতে পারলেন না।
ইতোমধ্যেই বিয়ে সাদি করে ছেলেমেয়েরা আলাদা হয়ে গেছে।
—তিনি একা হয়ে গেলেন।
এসবই দুঃখ করে একদিন আমাকে বলছিলেন।
ঠিক তখনই, বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংগীত শিল্পীর তালিকাভুক্তির অডিশন চলছিল।
আমি তাঁর গান শুনে অডিশন এর ব্যবস্থা করে দিলাম।সেই থেকে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন পল্লী সংগীতের কণ্ঠশিল্পী।
মাঝেমধ্যেই ফোন করেন, আমি বিরক্ত হই।
ফোন ধরলে ছাড়তে চাননা– বাসায় চলে আসেন।এমন ঘটনা বহুদিনের।
দিন পনেরো আগে তিনি বেশ কয়েকবার ফোন দিলেন আমি ব্যস্ততায় ধরতে পারিনি। অপরিচিত নম্বর থেকে একটা ফোন এলে, ফোনটা রিসিভ করলাম।
বুঝলাম তাঁর মেয়ে আমার সাথে কথা বলছে। জানলাম শারমিন সুলতানা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি আছে।
এর আগেও একবার মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন।
সেসময় চিকিৎসাবাবদ প্রায় ২৫ হাজার টাকা মতো সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম।
এবার আমি তাকে বললাম, আমি নিজেই অসুস্থ।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছি।
তুমি চিন্তা কোরোনা—
আমি আমার তরফ থেকে যা পারি তোমাকে পাঠাচ্ছি।
পাঠাতে পারিনি।
আমার চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যস্ততায়, ভিসা পাসপোর্ট জটিলতায় আমি আর তাকে মনে রাখতে পারিনি।গতকাল তার মেয়ে ফোন করেছিল।
মেয়ে কিছু বলার আগেই আমি দুঃখ প্রকাশ করলাম।সরি,আমি তোমাদের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।অপর প্রান্ত থেকে কান্নার আওয়াজ শুনে আমি থমকে গেলাম।
গত দশদিন আগেই শারমিন সুলতানা সকল সরি’র উর্ধ্বে চলে গিয়েছেন।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন!
শারমিন সুলতানা কন্ঠশিল্পী হতে চেয়েছিল।
কিন্তু সেই সুযোগ সে পায়নি!
চারিপাশের বৈরি হাওয়া তাকে শিল্পী হতে দেয়নি।
সহজ সরল মানুষ হওয়ায় প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন বারবার।
কেঁদেছেন, আবার হাসিমুখেই তা মেনে নিয়েছেন।ভাগ্যের দোহাই দিয়ে আবার গান গাইতে চেষ্টা করেছেন।
এ সংসারে তাঁর কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নাম হয়নি,দাম হয়নি তবুও গান গাইবার জায়গা পেলেই হারমোনিয়াম টেনে নিজেকে মেলে ধরেছেন–শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন–
কিন্তু আমি জানি তিনি মনে প্রাণে একজন সত্যিকারের সংগীতশিল্পী, পল্লী সংগীত অন্তপ্রাণ।
তাঁর এই অকাল প্রয়াণে গভীর ভাবে শোকাহত।
মহান আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন—
এই সহজ সরল সাদা মনের মানুষটিকে জান্নাতের বাসিন্দা করে নিন—