গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ৩৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে দেখা মেলে একঝাঁক শিক্ষিত তরুণের। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে হোসনে আরা সীমা, রুকসাথ হক ও আজিজুল হাকিম হানী।
কাউন্সিলর না থাকায় সেচ্ছাসেবী তরুণ গ্রুপটি কাউন্সিলরের সহকারি একান্ত সচিব মোহাম্মাদ সাকিবের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করেন। এসময়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর অলিগলিতে চরম অবহেলার শিকার কুকুরদের অবস্থার কথা তুলে ধরে পুরাণ ঢাকার অধিবাসী প্রাণী কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হোসনে আরা সীমা অঝোর ধারায় কেঁদে ফেলেন। তার কান্না দেখে কেউ আর চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি। একপর্যায়ে সকলের সামনে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন কুকুরের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ না হলে তিনি আত্মহত্যা করতেও দ্বিধা করবেন না।
পুরাণ ঢাকার অলিগলিতে ক্ষুধার্ত কুকুরদের শুধু খাবার দিয়েই ক্ষান্ত হননা; বরং নানা রোগে আক্রান্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত কুকুরদের উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রাণীপ্রেমি তরুণ গ্রুপটি। তাদের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তারা জানান- রাজধানীর কুকুরের মতো এতো নির্মম পরিস্থিতির শিকার আর কোথায়ও কোনো প্রাণী হয় বলে তাদের জানা নাই।
কোন কুকুরটি কোথায় কেমন আছে? তার খোঁজখবর নেওয়াই তাদের প্রধান কাজ। প্রতিটি এলাকার কুকুর নানারোগে আক্রান্ত। তারওপরে নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোকদের হাতে কুকুররা নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোনোটির সামনের পা ভাঙা কোনোটির পিছনের পা ভেঙে খুড়িয়ে চলছে। আবার কোনটি গরম পানির নিক্ষেপে চামড়া ঝলসে গেছে। চরম আঘাতে মাংসে পচন ধরেছে। এমন ক্ষতগায়ে হাত দিয়ে মাতৃস্নেহে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এই গ্রুপের সদস্যরা।
মানবিক কাজে নিয়োজিত এই গ্রুপটিকে কেউ না চিনলেও রাজধানীর কুকুরগুলো ঠিকই তাদেরকে চিনে নিয়েছে। প্রাণীপ্রেমিদের দেখামাত্র সারাদিনের অনুযোগ নিয়ে কুকুরগুলো তাদের কাছে দৌড়ে আসে। কত কীযে ওদের ভাষায় বলে দেয় নানা অঙ্গভঙিতে। আর তারাও ধুলাময়লা আর কর্দমাক্ত অবস্থা উপক্ষো করে তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা কুকুরগুলো তাদের কোলে চড়ে বসে। বড়গুলো তাদের হাত-পা জিহ্বাদিয়ে চেটে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বিশ্বজুড়ে আছে প্রভুভক্ত অগণিত কুকুরের কাহিনী।
সেই সব নানা মানবিক কাহিনীর সাথে কেন বাংলাদেশের কুকুরদের প্রতি মানুষের ন্ঠিুরতার কাহিনী লিপিবদ্ধ হচ্ছে? সেটাই প্রশ্ন প্রাণী কল্যাণ ও অধিকার সংস্থার সকল সদস্যদের। এ্যনিম্যাল প্লানেট বাংলাদেশ এপিবির প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হাকিম হানী হাতে মাইক নিয়ে পাড়ায় মহল্লায় প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য এলাকাবাসীদের আহবান করে যাচ্ছেন। সাধ্যমত সবাইকে জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন- প্রাণী অধিকার আইন ২০১৯এর কথা।
প্রাচুর্যের প্রাচীরে একমূহের্তের জন্য আটকাতে পারেনি রুকসাথ হককে। সেই সাতসকালেই ছুটে চলেন তার এলাকার প্রতিটি কুকুরের খোঁজখবর নিতে। তার হাতেও যেমন থাকে কুকুরের প্রিয় খাবার তেমনি থাকে নানা ওষুধ প্রিয় কুকুরের জন্য। কে কি বলল তাতে কিছু যায় আসেনা তার। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ভয়েসলেজ লিভ্স বাংলাদেশ (ভিএলবি)। তাদের এই মানবিক কর্মের প্রভাব শুধু প্রাণীকূলেই পড়ছেনা বরং সভ্য সমাজেও এর প্রভাব পড়ছে। নিত্য নির্যাতন, জুলুম-অত্যাচার, অনিয়ম, হিংসা আর হানাহানীতে যখন দেশ-দেশান্তরে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সেই পাষাণপ্রাণে প্রেমের ছোঁয়া লাগছে পথের পাশের অবহেলিত কুকুর সেবার মাধ্যমে।
দেশের সকল প্রাণীপ্রেমি সংগঠনের প্রতি বিশেষভাবে হোসনে আরা সীমা, রুকসাথ হক, সাইফ জামান ও আজিজুল হক হানী পরিচালিত প্রাণী কল্যাণ ও অধিকার সংস্থার সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান জাতীয় সাংবাদিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি সাহেল আহমেদ সোহেল ও জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসির পক্ষ থেকে আলহাজ্ব মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, প্রাণী নিধনজজ্ঞ যেমন বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়; ঠিক তার বিপরীতে প্রাণীর প্রতি ভালোবাসায় বিশ্ব আরো টেকসই হয়। ধ্বংসশীল পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে সবাইকে প্রাণীপ্রেমিদের পাশে দাড়ানোর আহবান জানান আলহাজ্ব মাসুম বিল্লাহ।