সূচনায় মৌলিক মানবাধিকারের ৩য় বিষয়টি তুলে ধরছি আজকের একটি সংবাদ মাধ্যমের খবর দেখে। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অল্প সুদে গৃহনির্মাণ–ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকসহ বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংক থেকেও গৃহনির্মাণ–ঋণ নিতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
যারা এমনিতেই সরকারি বাস ভবনে থাকার সুযোগ পান। তাদের মনের মতো বাড়ি করে বসবাসের সুযোগ দিতে ব্যাংকগুলো তাদেরই দরজায় ঘোরে। অথচ ব্যাংকের দরজায় যারা ঘোরেন তাদের প্রতি কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান দেখে মানবতাকর্মী হিসেবে কষ্টানুভব হয়। ঋণ প্রত্যাশীদের অনেকেই সামান্য আর্থিক সহযোগিতা পেলে তারা কেবল মাথা গোজার ঠাই নয়; জীবনে ঘুরে দাড়াতে পারে। এমন লোকগুলো এদেশেরই নাগরিক বটে কিন্তু ব্যাংক ঋণ পাওয়ার যোগ্য হতে পারেনা।
নাগরিকের সব সুবিধাই ঐ ২ শ্রেণি লোকদের মধ্যে বন্টিত। বঞ্চিত বিশাল জনগোষ্ঠি থেকে কিছু সংখ্যক নিম্নবিত্ত হতদরিদ্রের কপালে সরকারের আশ্রয়ণের ঘরে বসবাসের সুযোগ হলেও দেশে এখনো গৃহহীনদের সংখ্যা কম নেই। ফলে রাজধানীর ফুটপাতেও রাত্রী যাপনকারিদের অমানবিক দৃশ্য চোখে পড়ছে।
মৌলিক মানবাধিকারের ২য় বিষয়টি হচ্ছে বস্ত্র/পোশাক। বিশ্ব বস্ত্র বা পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ বিশেষ অবদান রেখে চলেছে বিধায় পোশাকের কষ্ট নিয়ে তেমন কোনো খবর না আসলেও দেখা যায় ঐ ২শ্রেণির পোশাকে যতটা জৌলুসের তার ধারে কাছেও অন্যদের থাকার কায়দা নেই। পারফিউমের সুগন্ধির চেয়ে অনেক বেশি লোকের ঘামের গন্ধই দেশের বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
মৌলিক মানবাধিকারের ১ম বিষয়টি হচ্ছে খাদ্য। এবিষয়ে বিশদ আলোচনা তুলে ধরা সম্ভব নয়। বঙ্গোপসাগর কূলের নদী মাতৃক ও প্রাকৃতিক সম্পদশালী এদেশ কখনোই খাদ্যাভাবে পড়ার কথা নয়; খাদ্য অব্যবস্থাপনায় এদেশকে সংকটে পড়তে হয়। সরকারের সাফল্যচিত্রে এখনো খাদ্য ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো জনকল্যাণকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়না। স্বাস্থ্যবান নাগরিক দেশের সম্পদ। আর সেই সম্পদের সুরক্ষায় সুষম খাদ্য সুনিশ্চিত করা সরকারের প্রধান কাজ। অথচ এখনো দেশে খাদ্যপণ্য নিয়ে চলে যতসব দুরাচার, দুর্নীতি, মজুদদারি, মূল্যবৃদ্ধির ষড়যন্ত্র, ভেজাল মিশ্রণ এমনকি বিষক্রিয়া করণের জঘন্যতম কর্মকান্ড। সুলভ মূল্যে সুষম খাদ্য সকলের জন্য সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। খাদ্যদ্রব্য মূল্যের ওঠা নামায় যাদের কিছু যায় আসেনা তাদের জন্যই দেশটা বেহেস্ত।
মৌলিক মানবাধিকারের ৪র্থ বিষয় শিক্ষা নিয়েও ব্যপক আলোচনা। দু‘চার কথায় বলতে গেলে ১. এক দেশে এতো শিক্ষানীতি আর কোনো দেশে নেই। ২. যুগোপযোগি কর্মমূখী শিক্ষার অভাবে এমএ পাশ করেও বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে চলে। ৩. মূল্যবোধ বিচ্ছিন্ন শিক্ষার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতীয়মান। ৪. বিসিএস ক্যাডারভুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েও দায়িত্বজ্ঞানহীনের পরিচয় প্রদান দেশ ও জাতির সম্ভাবনার দ্বার সংকোচিত করে। এমন পরিস্থিতির মধ্যথেকেও তারা ঠিকই তাদের ছেলেমেয়েদের দেশি-বিদেশি ডিগ্রী অর্জন করার সুযোগ-সুবিধা পেলেও সাধারণের সন্তানদের খুঁজতে হয় কম খরচে কোনোমতে লেখাপড়ার সুযোগ।
মৌলিক মানবাধিকারের ৫ম বিষয় চিকিৎসা। বিশ্ব বাণিজ্যের সেরা খাতের নাম স্বাস্থ্যখাত। বণিক সম্প্রদায়ের প্রথম দৃষ্টি এখাতে পড়ায় কোনো মানুষ আর তাদের মৌলিক এই মানবাধিকার বিনা পয়সায় পাচ্ছেনা। দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্থ স্বাস্থ্যখাত। স্বাস্থ্যবান নাগরিক দেশের সম্পদ। এই সম্পদের সুরক্ষায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহজ লভ্য করা আজও সম্ভব হলোনা। সেক্ষেত্রেও দেখা যায় দেশের ডাক্তারের চেয়ে বিদেশি চিকিৎসকের স্বাস্থ্যসেবা শ্রেয় মনে হলে বিদেশেই চলে যান অনায়াসে উল্লেখিত ২ শ্রেণির ভাগ্যবানগণ।
মৌলিক মানবাধিকারের ৬ষ্ঠ বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা। এখন অবশ্য নিরাপত্তাই প্রথম বলে একটি স্লোগান শোনা যায়। নিরাপত্তার এতটাই ঘাটতি পরিলক্ষিত যা দেখে আর নিজেকে লুকাবার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায়না। সেখানেও উল্লেখিত ২ শ্রেণির বিশেষ লোকদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা সংরক্ষিত। নিজস্ব গানম্যানসহ, দারোগা-পুলিশ এমনকি আদালতের রায় পর্যন্ত সুবিবেচনায় থাকে তাদের জন্য। আট আঙ্গুল কপাল নিয়েই মনে হয় তাদের জন্ম।
মৌলিক মানবাধিকারের ৭ম বিষয় হচ্ছে বিনোদন। ৭ম অধিকার পূরণে মিরপুরের চিড়িয়াখানা আর শাহবাগের শিশুপার্কই সাধারণের জন্য যথেষ্ট। প্রতিমাসে তাদের বিদেশ ভ্রমণের বিপরীতে সাধারণ মানুষ তাদের বাড়ির কাছে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটায়ও বিলাসভ্রমণ কপালে জোটেনা।
দিনে ৮ঘন্টা আর সপ্তাহে ৫দিন গুনে গুনে মাস না যেতেই বেতন নামের টাকাগুলো তাদের হাতে আসে। এরমধ্যে ঝড়বৃষ্টি বন্যা, খড়া আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের জীবনে কোনোপ্রকার কষ্টের ছায়াপাত না করলেও সাধারণের জীবনের হুমকি হয়ে দাড়ায়।
পরিশেষে পাঠকদের মন্তব্য পাওয়ার প্রত্যাশা করছি। লেখক- মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা
(ভিন্ন রঙের লেখায় ক্লিক করে তথ্যসূত্র পেতে পারেন)