১৫ আগষ্ট আজ দেশে জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে। সরকারি ছুটি ঘোষিত দিবসটি শুধু একটি দলের পালন করার কথা নয় কিন্তু দলের দেয়াল তুলে জাতীয় করণের সদিচ্ছা অনুমেয়। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের শোক দিবস পালন লৌকিকতা মাত্র। কেননা তাদের পদ পদবী ক্ষমতাসীনদের সদয় বিবেচনাধীন। ওএসডি তাদের ক্যারিয়ারের অভিশাপ।
দীর্ঘ ২১ বছর লড়াই সংগ্রামের সফলতায় শেখ হাসিনাকে যথাযোগ্য মর্যাদার আসনে রেখে তার দলের নেতাদের হওয়ার কথা ছিল আরো উদার ও সুবিবেচক। কিন্তু অধিকাংশ নেতাদের মানসিকতার সংকীর্ণতায় জাতির জনকের সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা আর জাতীয় শোক দিবসে শোকাহত মন খারাপের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। (বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে না পেরে’ পদ্মাসেতু থেকে ঝাঁপ)।
৪১ সালের পরেও যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অন্যকোনো দলের আগমন ঘটে তবু জাতির জনকের স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই থাকবেন আর জাতীয় শোক দিবস পালন ১৫ আগষ্টই হবে। এর ব্যতিক্রম হবেনা বলে শঙ্কাহীন নই। কেননা, শাসন ক্ষমতা দিয়ে বিশাল বিশ্ব জয় করা গেলেও ক্ষুদ্রতর মানুষের মন জয় করা যায়না। মন জয় করতে মমতার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন উদারতার।
দলের ব্যনারে স্বার্থসিদ্ধিতে সফলদের একটু দূরে সরিয়ে সারা দেশের সমাজের কল্যাণকামী সাধারণের সাথে শেখ হাসিনার আরো বেশি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন বিরোধীদলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া। বিরোধী দল বিনাশী পদক্ষেপ কোনো সফল রাজনৈতিক দলের হতে পারেনা। পরমত অসহিষ্ণুতায় প্রতিষ্ঠিত হয় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। যা কোনো জাতির কাম্য নয়।
আজ যদি দেশবাসির প্রতিটি প্রাণ শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ উপলব্ধি করত; তাহলে এদেশে আর কোনোদিন বিশৃঙ্খলা বিরাজ করতনা। শান্তি আর সমৃদ্ধির শীর্ষাবস্থানে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়ে গৌরব করা যেতো। ফিনল্যান্ড আর সুইজার ল্যান্ড বাংলার ল্যান্ডের সাথে তুলনা হতনা। একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে প্রথম শর্ত প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভিনদেশি অনেকের কাছে এখনো বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর ভূখন্ডই রয়ে গেছে। প্রতিদিনের সংবাদচিত্রে উঠে আসছে লাশের সারি। রক্তপাতমুক্ত ভূখন্ড প্রমাণে প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। প্রতিটি দিন কোনো না কোনো পরিবারের কাছে ১৫ আগষ্টের কষ্টাংশ পৌঁছে যাচ্ছে অন্যের হাতে খুন হয়ে, নিখোঁজ হয়ে, পানিতে ভেসে উঠে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে, রহস্যজনক মৃত্যু হয়ে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে।
হিংস্র হায়েনার দাঁতে তাজা রক্তঝরার দৃশ্য অনেকের হৃদয়পটে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের নামোচ্চারণের সাথে। নির্মম নিষ্ঠুরতার বদলে ভালোবাসা আর মমতায় ঘেরা একটা পরিবেশে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে বঙ্গকন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই সক্ষম বলে সকলের বিশ্বাস। এবিশ্বাস দিনে দিনে ক্ষীণ হয়ে আসছে তার দলের কতিপয় স্বার্থান্ধ নেতাদের জন্য। সার্বজনীন বিবেচ্য বিষয়গুলো অনেক এমপি মন্ত্রীও এড়িয়ে যান অবহেলায় কিংবা অজ্ঞতায় ফলে জাতীয় অনেক কর্মকান্ড দলীয় সীমানায় আটকে যায়।
প্রতি বছরে আসা জাতীয় এই শোক দিবসে জাতিকে দৃপ্ত শপথে আগামী ১টি বছরের জন্য সোচ্চার হতে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মহানুভবতা আর মানুষকে আপন করে নিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিককে আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দিয়ে। আপন আলোয় উদ্ভাসিত হলেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতি ফিরে আসতে সক্ষম হবে। সফল হবে জাতির জনকের আত্মত্যাগ। তাঁকে হারানোর ব্যথানুভব হবে জাতির অন্তরে অন্তরে।
লেখক- মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা