বিদেহী আত্মাদের গগণ বিদারী আহাজারির আওয়াজ স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। সে আওয়াজ ছেড়ে দিলে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। মেমোরি তুল্য বিদেহী আত্মারা ডিভাইসতুল্য দেহে প্রবেশে প্রাণান্ত প্রচেষ্টারত। ডিভাইসতুল্য দৈহিক অবকাঠামোতে মেমোরিতুল্য আত্মার সংযুক্তি ছাড়া দৃষ্টি শক্তি, শ্রবণ শক্তি, বাকশক্তি, স্মরণ শক্তি, প্রজনন শক্তি এমনকি কল্পনাশক্তিও প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়না।
প্রতিটি আত্মায় দৃষ্টি শক্তি, শ্রবণ শক্তি, বাকশক্তি, স্মরণ শক্তি ও প্রজনন শক্তির মতো অনেক শক্তি নিহিত রয়েছে। এসকল শক্তির বহিপ্রকাশে আত্মাদের জন্য দেখতে প্রয়োজন ক্যামেরা তুল্য চোখের, শুনতে রেকর্ডিং সিসটেমতুল্য কানের, উচ্চারণ করতে/বলতে সাউন্ড সিসটেমতুল্য ঠোট/মুখের। আত্মার অন্তর্নিহিত শক্তিগুলো প্রয়োগোপযোগি দেহ পাওয়ার প্রার্থনা মঞ্জুর হয়ে এ পৃথিবীতে কোনো আত্মা ব্যাকটেরিয়ার মত সুক্ষ্মতর কীট পতঙ্গের দেহে, পরিযায়ীর দেহে এবং বিভিন্ন আকৃতির জন্তু জানোয়ারের দেহে প্রবিষ্ট হয়। দেহ দেখে আত্মা আসেনা। আত্মার উৎকর্ষতায় দেহ অবকাঠামো সামঞ্জস্য হয়।
মানুষ নামের প্রাণীর মতো পৃথিবীতে বিচরণকারি কোনো প্রাণীই আত্মতুষ্টি অর্জন করতে পারেনি। মানবাত্মা দেহে প্রবেশ করে এসে শুধু স্থলপথেই চলতে শিখেনি বরং হাসের মতো ও মাছের মতোও জলপথে ছুটে চলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। অর্জন করেছে অনায়াসে আকাশে উড়ে বেড়ানোর। দৈহিক সব সাপোর্ট নিয়ে সুপ্ত কল্পনাশক্তি বাস্তবে রূপদান করে আত্মতুষ্টিপ্রাপ্ত কেবল মানুষ নামের বুদ্ধিদীপ্তপ্রাণী।
দুনিয়া থেকে আসমানে ফেরত যাওয়া এক রক্তাক্ত আত্মাকে দেখে দৌড়ে এসে তাকে আরেক আত্মা জিজ্ঞাস করল- তোমার এ অবস্থা কেন?
দুনিয়ায় দুই হাত, দুই পা, দুই চক্ষু, দুই কর্ণ, এক মাথা, নাক, মুখওয়ালা অসাধারণ একটি দেহে প্রবিষ্ট আমি আত্মা আমার কল্পনায় কত রঙিণ স্বপ্ন বুনেছিলাম; তার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারলাম না বলে হাউমাউ করে কেঁদে বলল ফেরত যাওয়া আত্মাটি। বলল- আমাকে আমার বন্ধুর হাতে খুন হতে হলো।
– কেন ওরা খুন করে কেন?
– আসলে ওরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ প্রাণী হয়ে নিকৃষ্ট প্রাণীর পরিচয় দিয়ে চলছে।
– কেন?
– আমাদের পবিত্র আত্মা যখন মাটির তৈরি দেহে প্রবিষ্ট হয়। তখন ভালোর বিপরীতে কিছু মন্দ মিক্স হয়ে যায়। ভালোবাসার সাথে হিংসা ও ঘৃণা। উদারতার সাথে সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ও লোভ। কাম ও ক্রোধের মতো নানা কুপ্রবৃত্তিতে মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
– পৃথিবী থেকে ঘুরে এসে আমাকে তোমার অভিজ্ঞতার কথা জানালে বলে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
– পৃথিবীও একদিন মহাবিপর্যয়ের সমুক্ষীণ হবে। কিন্তু তার পূর্বে পৃথিবীতে বিচরণকারি সকল প্রাণীদের নেতৃত্বদানকারি মানুষ এখন এতটাই বাণিজ্যিক পন্থা অবলম্বন করেছে যে, তার বর্ণনা দেওয়া কঠিন। তারা এখন পয়সা না পেলে মুমূর্ষরোগির মুখে অক্সিজেনটুকুও দিতে নারাজ।
সভ্য সমাজে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার প্রতিটি পদক্ষেপে চাই পয়সা। পয়সা প্রচলন পদ্ধতিতে জমিনের ফসল, সমূদ্রের পানি, সৌরজগতের আলো ও ইন্টারনেটের অদৃশ্য শক্তিও ওরা হস্তগত করে রেখেছে। কাগুজে অর্থের বিনিময়ে সম্পদের সুষম বন্টনের পরিবর্তে এখন গোটা পৃথিবীর সম্পদ কিছু বণিক শ্রেণির লোকদের হাতে চলে গেছে। ফলে পৃথিবীর ৮শ কোটি মানুষের ১শ কোটি মানুষই না খেয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
নারী, কড়ি আর আধিপত্য এই তিনের জন্য রক্তপাতে পৃথিবী তামাটে হয়ে গেছে। কোন দেহে অবস্থান নিয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে তা অনাগত আত্মারাও জানেনা। (কল্পনা থেকে)
লেখক- মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা