আমার আব্বা, মাস্টার আনছার উদ্দিন হাওলাদার গত ৮ আগস্ট ২০২২ খ্রি. রোজ সোমবার ভোরে আমাদের চিরতরে এতিম করে পরপারে চলে গেলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আব্বার প্রথম জানাজা সেদিনই কামরাঙ্গীরচর নূরিয়া মাদরাসায় সকাল ১০:৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আব্বা ৩ যুগের বেশি সময় ধরে খেদমত করেন। আব্বা ঢাকায় একটি সরকারি চাকরির জন্য এলেও পরবর্তীতে দ্বীনের খেদমতে মাদরাসার গুরত্বপূর্ণ হিসাব রক্ষণের নিয়োজিত হন। এরপর তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত হাফেজ্জী হুজুরের মাদ্রাসায় কর্মরত ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্নভাবে আব্বার অবদান রয়েছে। মাদরাসার যাবতীয় উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব ছাড়াও মাদরাসার জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়াদি সবই আমার আব্বা নিজের মনে করে দেখাশোনা করতেন। এছাড়া আব্বা যতদিন মাদরাসায় ছিলেন, অসহায়, গরিব ছাত্রদের সবসময় পাশে ছিলেন। তাদের বিনামূল্যে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সাহায্য সহযোগিতা করতেন ও তাদের বিপদ-আপদে পাশে থাকতেন।
এসব কারণে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার সবাই আব্বাকে ‘নানাভাই’ বলে ডাকতেন। আব্বাও তাদের স্নেহ করতেন।
আব্বার ২য় জানাজা বরিশাল, মুলাদী থানার সফিপুর ইউনিয়নে তার প্রতিষ্ঠিত ‘চাঁন শিকদার হাট আনছারিয়া’ মাদরাসায় বিকাল ৫:৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। আব্বা ঢাকা থাকলেও তাঁর জন্মস্থান সফিপুর ইউনিয়নের জন্য ছিল তার আত্মার টান গভীর ভালবাসা। এই ইউনিয়নের মানুষের কাছে আব্বা ছিলেন, সমাজসেবক, ন্যায়নিষ্ঠাবান ও মেহনতি মানুষের মাথার ছায়া। বিপদে মানুষের পাশে থাকতে সচেষ্ট ছিলেন। জনপ্রতিনিধি না হয়েও গ্রামের উন্নয়নে আত্মনিয়োজিত ছিলেন। অসংখ্য ব্রিজ, রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও মসজিদ মাদরাসা করে গেছেন। সময় সুযোগ পেলেই আব্বা গ্রামে চলে যেতেন। শেষ বয়সে বিশেষ করে ‘চান শিকদারহাট আনছারিয়া’ মাদরাসার উন্নয়নে সবসময় চিন্তা করতেন। এখানে আব্বা ১৯৯১ সাল থেকে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলের ব্যবস্থা করে আসছিলেন।
সবদিক বিবেচনায় ও সবার পরামর্শে গ্রামে তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা মসজিদের পাশে আব্বার কবর দেওয়া হয়। তা ছাড়া জীবদ্দশায় আব্বার আলোচনায় তার শেষ ইচ্ছা এমনটাই প্রকাশ পেয়েছিল। আব্বা খুব করে চাইতেন এ মাদরাসা একদিন অনেক বড় হবে। অনেক শিক্ষার্থী এখানে পড়াশুনা করবে। আর ছাত্ররা আব্বার জন্য দোয়া করবে। মাদরাসার উন্নয়নে আব্বা যেমন খুশি হতেন তা অন্য কোনো কিছুতে এতো খুশি দেখা যায়নি।
আজ আব্বা আমাদের এতিম করে গেছেন। ‘আমার বাবার মত বাবা হয় না’ এমন কথা আমি সবসময় অন্যদের থেকে শুনতাম। এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আব্বা কখনোই আমাদের অভাব কাকে বলে বুঝতে দেননি। যখন যা চেয়েছি, পেয়েছি। যা করতে চেয়েছি, করতে দিয়েছে। এত বড় হওয়ার পরও রাত ১০টার পর বাইরে থাকলে আব্বা কল দিতে থাকতো বাসায় না আসা পর্যন্ত। নামাজের সময় হলেই সবসময় ডাকতেন।
আব্বাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি ও কথা ছিল বলার, কিন্তু এসব লিখতে গেলেই কষ্ট বেড়ে যায়। আমি বা আমরা হয়ত আব্বার মত হতে পারব না। তবে দোয়া করবেন আমরা যেন আব্বার রেখে যাওয়া কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারি ও তাঁর ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে পারি। এতদিন, বলতেগেলে আব্বা একাই মাদরাসা পরিচালনা করতেন। সবধরণের প্রয়োজন আব্বাই দেখতেন। আজ আব্বা নেই। কিন্তু তার রেখে যাওয়া মাদরাসা আছে। আমার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা সবাই আমাদের সাথে মাদরাসার খোঁজখবর রাখবেন ও যেভাবে যতটুকু পারেন সহযোগিতা করবেন।
আগামি ১২ আগস্ট ২০২২ খ্রি. রোজ শুক্রবার বাদ জুমা সফিপুর ইউনিয়নের মসজিদ ও ঢাকা কামরাঙ্গীরচর মসজিদগুলোয় আব্বার জন্য দোয়ার কথা বলা হয়েছে। আপনারা যারা আব্বাকে চিনতেন ও ভালোবাসতেন সকলেই আমার আব্বার রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন।
দোয়াপ্রার্থী – হাফেজ মাওলানা মো. আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, কামরাঙ্গীর চর থানা আওয়ামী লীগ ও সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামালীগ কেন্দ্রীয় কমিটি