কোনো অজো পাড়াগায়ে নয়; রাজধানীর কাওরান বাজারে। একদিকে এটিএন নিউজ অন্যদিকে ইত্তেফাক দেশের শীর্ষ ২টি সংবাদ মাধ্যমের অফিসের সন্নিকটে। কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে অস্থায়ী ভ্যান স্টান্ডে কিছু লোকের ভীড়ের মধ্যে গিয়ে দেখি আনুমানিক পঞ্চাশোর্ধ এক ভদ্রলোকের মরদেহ।
দাড়াবার এতটুকু ফুরসত না থাকলেও কিভাবে মারা গেলো জানতে চাইলাম। উপস্থিতিদের একজন বলল- লোকটিকে বাস থেকে নেমে এসে এই ভ্যানের ওপর নিজে থেকেই শুয়ে পড়তে দেখেছি। তারপর এক পশলা বৃষ্টি গেলো। বৃষ্টিতে সবাই যে যার মতো সরে গেলেও লোকটি আর উঠলনা।
বহুকাল আগের কথা নয়; গতকাল ২ জুলাই বেলা ২টার কথা। লাশটিকে ঘিরে ৩০/৪০ জন লোকের ভীড়। এতলোকের কেউ একবারও পুলিশে খবর দেওয়া দরকার মনে করছিলনা। বরং আমি যখন নিজেই পুলিশে খবর দিতে প্রস্তুতি নিলাম তখন কেউ বলছে- অযথাই কেনো লাশটিকে মর্গে পাঠাবার ব্যবস্থা করছেন? কেউ বলল রাস্তা দিয়ে যে কাজে যাচ্ছিলেন যান- বেহুদা নিজেকে ঝামেলায় জড়াবেন কেন?
যখন দেখলাম আগন্তুকদের মধ্যথেকে এগিয়ে এসে পুলিশ তথা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের মতো দেহ তল্লাশি করছে। আমি আর তাদের বারণ না শুনেই ৯৯৯এ কল দিলাম। অপরপ্রান্তের নির্দেশনানুযায়ী তথ্য দিতে থাকলাম। সরাসরি তেঁজগাও থানার ডিউটি অফিসারের কন্ঠ শুনতে পেলাম। তার সাথে কথা হলো। তারপর তার মাধ্যমে কাওরান বাজার এলাকায় দায়িত্বরত একজন এসআইর সাথেও আমার কথা হয়ে গেলো।
ততক্ষণে লাশের পকেটে প্রাপ্ত মোবাইল দিয়ে তার স্বজনদের খুঁজতে শুরু করল আগন্তুকের একজন। পেয়েও গেলো লাশের স্বজনদের সন্ধান। তাদের কেউ দ্রুত লাশের কাছে চলে আসছে বলেও কথা দিয়েছে। লাশ ঘিরে থাকা লোকদের কেউ কোনোভাবে পুলিশে খবর না দিয়ে নিজেরাই লাশের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
রাজপথের কোনো লড়াইয়ে নয়; কোনো সড়ক দুর্ঘটনার শিকারও নয়; নয় কোনো দুর্বৃত্তের হাতে নিহত। কিন্তু সেতো দেশের একজন নাগরিক। তার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব কর্তব্য কতটুকু? তাছাড়া আইনগত দিকটিও এখানে কম গুরুত্বের ছিলনা। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনকারিদের প্রতি জনসাধারণের বীতশ্রদ্ধ আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে।
পুলিশ আসার আগেই সেখানে মৃত ব্যক্তির স্বজনরা চলে আসছে দেখে আমি প্রস্থান করি আর বলি হায়রে দেশের সংবাদ মাধ্যম ! তোমাদের ফোকাস কেবল পয়সা আর পরীদের দিকে। মিডিয়া পাড়ায় পরিণত কাওরান বাজারে মানুষ মরে পড়ে থাকলেও খবর আসেনা কোনো সংবাদ মাধ্যমে।
হায়রে পুলিশ ! আইনী মারপ্যাচেই পড়ে রইলে। স্বাধীন বাংলার পঞ্চাশেও পেলেনা জনসাধারণের গ্রহনযোগ্যতা। এই কষ্টানুভব নিয়ে আমিও বা আর কতদিন বাঁচব!
লেখক- মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা, প্রেসিডেন্ট- এনএনসি। ইমেইল- nncpost@gmail.com