আজ ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। মাতৃত্বের চেয়ে মহান আর কিছু নেই একজন মহীয়সী নারীর জীবনে। ভ্রুণ হত্যায় সেই মাতৃত্বের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়।
গর্ভকালীন, প্রসবলগ্নে ও প্রসব পরবর্তী সময়ে সকল নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণই হল নিরাপদ মাতৃত্ব। কিন্তু বিবাহ পূর্ব গর্ভধারণ নিরাপদ মাতৃত্বের দাবি ধুলায় মিশিয়ে দেয়। মাথা ঘোরা বমি আসা এমন দুয়েকটি লক্ষণ দেখা দিলে মহিলা সমাজে কানাকানি শুরু হয়ে যায়। লক্ষণগুলো যার মধ্যে দেখা দেয় সে আরেক জগতের বাসিন্দা হয়ে যায়। দিনক্ষণ গোনা শুরু হয়ে যায়। গ্রামাঞ্চলের পতিভক্ত নারী ঘোমটায় মুখ ঢাকতে আর লাজুকদেহ লুকানোর জায়গা খুঁজতে দিশেহারা হয়ে যায়।
বরিশালাঞ্চলে কোনো নারী অবৈধভাবে গর্ভবতী হলে তাকে “প্যাট বাজান্যা মাগী” বলে লাঞ্চিত করা হয়। অবশ্য এখন আর আগের মত পেট বাজেনা। প্রায় সব দোকানে শুধু কনডমই না; নানা টেবলেট বড়িও পাওয়া যায়।
কিছুদিন আগে আপনগৃহের অতিথির পরশে পেট বাজল এক স্কুলছাত্রীর। যে পর্যায় বাথরুমের ভেন্টিলেটারের ফাঁকা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়ার মত মানবাকৃতি পেটে ধারণ করল। মাতৃকালীন তার পেটের আকৃতির পরিবর্তন কারো চোখে পড়লনা। মেয়েটির বোধ হয় আল্ট্রাসনো, প্রেগন্যান্সি টেস্ট, এমআর বা পেট ছাড়ানোর কোনো ধারনাই ছিলনা। কিন্তু তার ছবিতে হাবাগোবা, পাগলী কিংবা অবুঝ বলে মনে হয়নি। নিঃসন্দেহে এটা ছিল সমাজের সীমাহীন অপরাধের বহিঃপ্রকাশ।
সবধরণের সংবাদ মাধ্যমে সমকালীন সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণ হচ্ছে নারীর অনিচ্ছায় বলপ্রয়োগে যৌনাচার। সেক্ষেত্রে বাথরুমে বাচ্চা প্রসবকারী নারী কখনো ধর্ষিতা বলে প্রমাণিত হয়না। হয়না মূল্যায়িত সে মাতৃত্বের যেথায় প্রসব করে নবজাতককে গলা টিপে কিংবা ফ্লোরে আছড়ে মেরে ফেলে দেয় ময়লার ডাস্টবীনে।
নেট দুনিয়ায় বিচরণকারী পর্ণগ্রাফিতে গ্রাসিত উত্তেজনায় ছটফটানী নারীর কামোত্তেজনা নিবারণে সম্পর্কের বাছ-বিচারের সময়-সুযোগ থাকেনা। ফলে নার্স, চিকিৎসক আর আপনজনদের পরিচর্যার বদলে বাথরুমে বিষাক্ত ভাইরাসের সাথে চলে একক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তারপর সদ্যপ্রসূত শিশুর কোনোটি কমোটের পাইপে কোনোটি পলিথিনে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। তবে সেবারে ভেন্টিলেটারের ফাঁকা দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়া নবজাতকের ছবি পুলিশের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা হয়েছিল নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার উৎস উৎঘাটনের জন্য।
বিবাহিত একজন নারী গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। নারীর এই অধিকারে আগামীর বিশ্বস্বাস্থ্য উন্নয়ন অন্তর্নিহিত বিষয় বলে নারী পুরুষ সকলের আরো সচেতন হতে হবে। আরো সতর্ক হতে হবে মায়েদের যাদের অপরিণত বয়সী অবিবাহিত কন্যা সন্তান রয়েছে। রয়েছে যাদের জীবনে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা। নারী জীবনের সেরা প্রাপ্তি মাতৃত্ব হোক আরো নিরাপদ আরো স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠুক নতুন প্রজন্ম সে প্রত্যাশায় আমরা জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি ও সংগ্রহ বার্তা পরিবার।