ইসলামপন্থী রাজনীতিতে অর্থায়ন ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কাল্পনিক অভিযোগ এনে ১১৬ ধর্মীয় বক্তার একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত ‘গণকমিশন’।
গত ১১ মে (বুধবার) দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার হাতে এই তালিকা তুলে দেন সাম্প্রদায়িক সংগঠন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তথাকথিত গণকমিশনের চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সাথে ছিলেন সংগঠনটির সদস্য সচিব অনৈতিক কাজে জড়িত থাকায় আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল থেকে বহিষ্কৃত পিপি ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। এতে এক হাজার মাদরাসা ও ১১৬ জন ধর্মব্যবসায়ী/ ওয়াজকারী সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে। গণকমিশনের দেয়া এই ১১৬ জনের তালিকায় আছেন একজন মৃত ব্যক্তি ও আরেকজন ভারতীয়। এই ভুঁইফোঁড় সংগঠন ও শাহবাগী ইসলাম-বিদ্বেষীদের এই জঘন্য কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের আলেম সমাজ ও সাধারণ মানুষ। গণকমিশনের নামে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে দুদকে বরেণ্য আলেমদের বিরুদ্ধে নালিশের ঘটনায় বাংলাদেশের মুসলিম সংস্কৃতি ও ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তের বহি:প্রকাশ বলে মনে করছেন অনেকে।
কে এই ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ?
তুরিন আফরোজের গর্ভধারিণী মা অভিযোগ করেছেন, মেয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এরপর ৬০ শতাংশ অকেজো কিডনি নিয়ে এখন তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। উত্তরার নিজ বাড়িতে ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন তুরিনের মা সামসুন্নাহার তসলিম। ২০২১ সালের ২১ জুন সুপ্রিম কোর্টে আইন, বিচার, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তুরিন আফরোজের মা শামসুন নাহার তসনিম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তুরিন আফরোজের ছোট ভাই শাহনেওয়াজ শিশির। তুরিনের মা বলেন, আমার দোষ তার (তুরিন আফরোজ) কিছু অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ করা।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর থাকাকালে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ উঠে। পরে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে প্রথমে প্রসিকিউটরের পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিলো। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করে সরকার। তার অপকর্ম ও অভিযোগের শেষ নেই ।
কে এই শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক?
এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, যিনি বেশ কয়েকটি বিতর্কিত মামলার জন্য আলোচিত। অবসর গ্রহণের পরে মামলায় রায় দেওয়ার জন্যও তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত।
কেউ কিছু বললেই তার বিরুদ্ধে আদালত আবমাননা বলে রুল ইস্যু , পুলিশী নির্যাতন চালিয়ে হেনস্থা করা এসব ছিল তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য । দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে হাইকোর্ট এবং সুপ্রীম কোর্টে বিচার কার্য চালিয়ে গেছেন এই শামসুদ্দিন চৌঃ মানিক । দেশের কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা করেননি অতি ক্ষমতাবান এই বিচারপতি । মানিক সর্বশেষ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হবার স্বপ্নও দেখেছিলেন । কিন্তু সেই সপ্ন আর পুরন হয়নি ।আর এই কারনেই প্রধান বিচারপতি সিনহার সংগে তার বিরুধ । শামসুদ্দিন মানিক এতোটা নিচু ও হীন মনের মানুষ যে ,যার কারনে বাংলাদেশের বিচারবিভাগ আজ কলংকিত ।
১৯১২ সালে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জনাব আব্দুল হামিদ যখন স্পিকার ,তখন একটি মন্তব্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধের শামিল’ বলে হাইকোর্টের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মন্তব্য করলে ১৮ জুন অধিবেশন শুরুর সাথে সাথেই স্পীকার রুলিং দিয়ে বলেন যে “ওই বিচারপতি যেসব মন্তব্য করেছেন তা কোনো বিবেকবান মানুষ করতে পারে না।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই । মানি লন্ডারিং (মুদ্রা পাচার), বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন ভঙ্গ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্পদের হিসাব গোপন এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের শপথ ও আচরণবিধি ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট ২৯টি অভিযোগ করেছিলেন বাংলাদেশে দৈনিক আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। নানা অপকর্মে অভিযুক্ত এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
এধরণের অভিযুক্ত ও ঘৃর্ণিত ব্যক্তিরা কিভাবে দেশের বরেণ্য ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে তথাকথিতে গণকমিশনের নামে অভিযোগ তৈরী করেন। এটা ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত।
-মোহাম্মাদ আবদুল মতিন (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি লেখক ও সাংবাদিক) সভাপতি- অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন