১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ অথবা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ গ্রহণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এই দিবসটিতে।
অ্যান্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মহাসচিবের একটি বার্তায় বলেন, মহামারি এবং জলবায়ুর জরুরি অবস্থাসহ অন্যান্য সংকটময় সময়ে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষতিকর ভুল এবং মিথ্যাচারকে মোকাবিলাসহ আমাদের দ্রুত পরিবর্তিত ও প্রায়ই অপ্রতিরোধ্য তথ্যের দৃশ্যপট তুলে ধরতে সহায়তা করে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বিশ্বের সব সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাংবাদিকতা হলো একটি গণসম্পদ। মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক প্রচার মাধ্যমকে কঠোরভাবে আঘাত করেছে, যা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া বাজেট সংকটের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়াও কঠিন হচ্ছে। এ শূন্যস্থান পূরণ করতে গুজব, মিথ্যা এবং চূড়ান্ত বা বিভাজিত মতামত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি সব সরকারের ক্ষমতানুযায়ী মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুমুখী প্রচার মাধ্যমকে সমর্থন করার জন্য সবকিছু করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিব আরো বলেন, ভুল তথ্য এবং অপপ্রচাররোধে মুক্ত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। জাতিসংঘ সাংবাদিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। কারণ তথ্য হচ্ছে একটি গণসম্পদ। আজ আমরা একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুত্ববাদী আফ্রিকান সংবাদমাধ্যম উন্নয়নের জন্য উইন্ডহোক ঘোষণাপত্রের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি।
সুন্দর বনের বাঘ শুমারি আর গৃহ পালিত পশু সম্পদের হিসাব সরকারের কাছে থাকলেও জাতিসংঘের মহাসচিবের ভাষ্যমতে গণসম্পদ তুল্য সাংবাদিকতা পেশায় কোন জেলায় কয়জন আছে তা জানার আজও সুযোগ হলনা। ৮৮ বার পিছানোর পরেও সাংবাদিক হত্যার বিচার হলনা। সম্প্রতি নীলক্ষেত থেকে সংবাদ সংগ্রহ কালেও সাংবাদিকের রক্ত ঝরাতে হলো। তারজন্য কোনোপক্ষের তেমন কিছু আসল গেলনা। দেশের সাহসী ও বস্তুনিষ্ঠু সাংবাদিকতার মর্যাদায় তেমন কোনো প্রোগ্রেসিভ ওয়ে পদোন্নতি, পদক, সনদ, সম্মাননা, পেনশন, বীমা, ভূমি বরাদ্দ এমন কি জানমালের নিরাপত্তায় সাংবাদিক আর সাধারণের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য চোখে পড়েনা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে সাংবাদিকরাই কাঁদে। তারওপরে প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী আইন দিয়ে সাংবাদিকদের লেবার বা শ্রমিকতুল্য কেরানী পদমর্যাদা দানের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছেন। আর গণমাধ্যমের মালিকানা দিচ্ছেন যতসব ভূমিদস্যু, মুনাফাখোর ও কালো বাজারীদের হাতে। প্রকৃত কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের হাতে ৫টাকার কলম ছাড়া এখন আর কিছুই নাই। ফলে তারা সাংবাদিক কল্যাণ ফান্ডের দিকে এতিমের মতো চেয়ে থাকে।
৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যমে দিবসে যেকোনো ধরণের হস্তক্ষেপ থেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মুক্ত রাখার এবং ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিক পরিবারকে পূণর্বাসন করার ও সাংবাদিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার সাংবাদিক বান্ধব সরকারের কাছে দাবি জানান জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি বাংলাদেশ।