বিশ্ব বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জে টিকে থাকা দক্ষিণ বাংলার আরেক কৃতী সন্তানের নাম আব্দুল আউয়াল হোসেন। জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে দেশের কুখ্যাতদের পাশাপাশি সুখ্যাতি অর্জনকারিদের নামের সাথে পরিচিত হতে হয়। রাজধানী ঢাকায় পরপর দু’টি অনুষ্ঠানের মঞ্চে আসনগ্রহণকারির ছবিও চলে আসে এনএনসির ক্যামেরায়।
গতকাল ২৮ এপ্রিল দুপুর ১২টায় খোঁজ নিতে চলে গেলাম ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুর। বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা অন্তর জলিলের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির দেয়াল ঘেষে বিশাল ১০ তলা ভবনের আয়োজনে সাজানো আলেয়া অ্যাপারেল লিমিটেড। অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে এগিয়ে গিয়ে দুই স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে সোজা দোতলায়। দোতলায় দোপাট্টা থাইগ্লাসে ঘেরা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট অফিসের শেষপ্রান্তে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)র কার্যালয়। সিকিউরিটি ইনচার্জ এগিয়ে আমার আগমনী বার্তা দিলে এম.ডি মহোদয়ের সম্মতিতে আমাকে ভিতরে যেতে বলা হলো।
প্রবেশমাত্র সালাম বিনিময়ে আলেয়া অ্যাপারেল্স লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার সামনে আরো দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তির মাঝের চেয়ার আমাকে বসতে দিলেন। কোটি টাকার বিজনেজ প্লানের কথাবার্তার মাঝে মাঝে তিনি আমার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এক পর্যায়ে ভদ্রলোকদ্বয়ের তুলনায় আমাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে বসলেন। চলল আমাদের নানামুখী আলোচনা। আলোচনাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির অন্যতম নেতা আবুল হোসাইনের ফোনালাপ। ফোনালাপে কাঠালিয়ার আরেক প্রিয়জনের নাম না লিখলেই নয়; তিনি হলেন ভিসা প্রোসেসিং বিডির সিইও জনাব মোস্তাফিজুর রহমান পিন্টু খান।
অফিসিয়াল কর্মকান্ড পরিচালনায় দক্ষ নাবিকের ভূমিকায় আবদুল আউয়াল হোসেনকে খুব কাছে থেকে দেখলাম ও অনুভব করলাম। কখনো তিনি কোমল মানবীয় গুণের সেরা মানুষ; আবার কখনো তিনি সিংহের ন্যায় তেড়ে উঠেন। তার এই হঠাৎ রেগে ওঠা আবার স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসার বিষয়ে আমার চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখলাম- তিনি এক কর্মচারিকে শাসাতে গিয়ে আরেক কর্মচারিকে মর্মাহত করেননি। সেই সাথে আমরা তার সম্মুখে উপবিষ্ট অতিথিদের কারো সাথে কোনোরূপ সৌজন্যবোধের ব্যতিক্রম আচরণ করেননি। এই মেধাবী নাবিকের বাণিজ্য বহর যে আরো আশঙ্কামুক্ত অগ্রসর হবে সেব্যপারে আমি দু’চারটি দেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতায় সুনিশ্চিত হলাম।
তখন বেলা ২.৩০। কোটিপতি আব্দুল আউয়াল হোসেন সকল বাণিজ্যিক চাপ সামলিয়ে নামাজের প্রস্তুতি নিলেন। আমাকেও তার নিজস্ব ওয়াস রুমে ওজু করার ব্যবস্থা করে দিলেন। নিজ হাতে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে দিলেন না যেন আমাকে চির বন্ধুত্বের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। নামাজ শেষে তার ফ্যাক্টরি পরিদর্শন পর্ব। কলিং বেল বাজতেই এক কর্মকর্তা এসে আমাকে ফ্যাক্টরি ভিজিটে নিয়ে গেলেন। আমি তার সাথে দোতলা থেকে নিচতলার সুবিশাল বিস্তৃত কারখানায় প্রবেশ করলাম। চোখে পড়ল শুধু পিলার আর পিলার আর তার মাঝে নানা মেশিনারি নিয়ে গার্মেন্টসকর্মীদের কর্মজজ্ঞ। হঠাৎ কর্মব্যস্ত এক নারীকর্মীর নাম জিজ্ঞাস করে বললাম- তুমি এখানে কতদিন কাজ করছ? বলল ২ বছর। তোমার বেতন কত? বলল- ১০ হাজার। মাসের বেতন কি মাসে রীতিমত পাও? বলল- পাই। এমাসের বেতন কি পেয়েছ? জবাবে মেয়েটি বলল- বেতনের সাথে ঈদ বোনাসও পেয়ে গেছি।
কোটি কোটি টাকার ছোট বড় নানা ধরনের মেশিনারি আর তা পরিচালনায় ২ সহস্রাধিক কর্মচারির কর্মজজ্ঞ সামাল দেওয়ার দুঃসাহসিকতা আর বিশ্ব বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের দৃঢ়তা আমাকে অভিভূত করেছে।
-মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা, প্রেসিডেন্ট- জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি