বিদেশি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মায়াজালে বন্দি হয়ে যাচ্ছে আমাদের নতুন প্রজন্ম। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশ অন্যকে সাফল্যের চুড়ায় তুলে দিতে গিয়ে নিজের অবস্থানের কথা ভুলে যাচ্ছে।
দেশের সংবাদ মাধ্যমের দিকে ফিরে তাকাবার সময় নাই অধিকাংশ নতুন প্রজন্মের। তারা বিশ্বায়নের বিশালায়তনে ছুটে বেড়াচ্ছে। তারা যেমন আমাদের দেশীয় নায়ক নায়িকার চেহারা ছবি আর অভিনয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নয়; তেমনি দেশীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত প্রকাশিত তথ্য উপস্থাপনায়ও কোনো আকর্ষণ খুঁজে পায়না। দেশীয় বস্ত্রে যেমন তাদের পোশাকের আভিজাত্যের পূর্ণতা পায়না; তেমনি তাদের হাতের টাচস্ক্রীনে স্বদেশি সংবাদ মাধ্যমের সংযুক্তিতে তেমন স্মার্টনেস ভাব প্রকাশ পায়না বলে মনে হয়।
বাণিজ্যিক প্রচারকার্যে ব্যবহৃত সংবাদ মাধ্যমে অবকাঠামোগত জৌলুস পরিলক্ষিত হলেও কার্যক্রমে আকর্ষণ ধরে রাখতে পারছেনা। আর যাদের মধ্যে উদ্ভাবনী পরিকল্পনা রয়েছে; তারা অর্থের অভাবে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছেনা। অসংখ্য মেধা মুকুলে ঝরে যাচ্ছে বাংলার মাটিতে। যাদেরকে একটু নার্সিং করলে নতুন প্রজন্মের দৃষ্টি বহির্বিশ্বের দিকে এতোটা চলে যেতোনো।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি বই মেলার মতো সংবাদ মেলার আয়োজন করার প্রয়াসে ২০১১ থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সারা বছরেও যারা বইয়ের একটা পৃষ্ঠা ওল্টানোর সময় পায়না; তারাও পরিবারের সবাইকে নিয়ে গিয়ে বইয়ের বান্ডেল নিয়ে ঘরে ফেরে বই মেলা থেকে। হয়ত মেলার পরে ফের সেই বইগুলো ছুঁয়েও দেখেনা। বছরান্তে আবার ফিরে আসে প্রকাশকদের পশরা সাজিয়ে ২১এর বই মেলা। বছরে ১টি দিনের জন্য হলেওতো বই থেকে বিচ্ছিন্ন অনেক লোকের হাতে বই ওঠে বই মেলার জন্য।
তিন সহস্রাধিক পত্রপত্রিকা রয়েছে দেশ জুড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান প্রজন্ম পর্যন্ত একটি পত্রিকা আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আছে। শিশুর প্রশ্ন বাবা ইত্তেফাক কি? আরবি শব্দটির অর্থ না জানলেও বাবার উত্তরে শিশুটি জানতে পারে ইত্তেফাক একটা পত্রিকা। স্বাধীনতা পূর্বাপর কতশত সংবাদপত্রের উত্থান পতন হয়েছে তার হিসাব আর কে রাখে?
করোনাকালে ১৬ পাতার পত্রিকা ৮ পাতায়, ৮ পাতার পত্রিকা ৪ পাতায় জড়োসড়ো আর ৪ পাতার পত্রিকা রং ছেড়ে সাদাকালো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছেল। আর সাদাকালো অসংখ্য পত্রিকা সেই থেকে আর আলোর মুখ দেখেনি এখনো। এতো গেলো সংবাদপত্রের কথা। এবার আসছি দ্বিতীয় প্রাচীন গনমাধ্যম রেডিওর কথা নিয়ে। টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারের ধাক্কায় কানপেতে শোনার যন্ত্রটি চলে গিয়েছে জাদুঘরে। ক্ষুদ্রক্ষুদ্র ডিভাইজে এফ.এম ব্যান্ডে রেডিও ফের প্রাণ পেয়েছিল। আরজেদের বাংরেজি ভাষার আকর্ষণে নতুন প্রজন্মের তারকা হয়ে ওঠার স্বপ্নের একটি যুগ তাও পার হয়ে আবার রেডিওর কথা মানুষ ভুলতে শুরু করেছে।
এবার বলব টিভি চ্যানেল আর অনলাইন প্রসঙ্গে। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের দেশসীমায় দাপটের সাথে এ্যান্টিনা নিয়ে বিটিভি চলে আসছিল। তারপর ডিসের ধাক্কায় এ্যান্টিনা ছেড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যেতে বসছিল। শেষ রক্ষায় বিটিভির সাথে বিটিভি ওয়ার্ল্ড যুক্ত হলো। তারপর বেসরকারি টিভি চ্যানেলের চমৎকার উপস্থাপনায় গণমাধ্যমের সাথে গণমানুষের যেভাবে সম্পৃক্ততা ও সখ্যতা গড়ে উঠেছিল তা প্রত্যেকের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। এখন আবার সিনেমার ন্যায় গণমাধ্যমে জনবিচ্ছন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনলাইনের দাপটে শুধু পত্রিকাই পিছিয়ে পড়ছেনা টিভি চ্যানেলগুলোরও বারোটা বাজছে। অনলাইনের বিপক্ষের বক্তব্যের শ্রোতাদর্শক না পেয়ে তারাও এখন অনলাইনকে আপন করে নিয়েছে।
প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের এখন প্রধান সহযোগির পদে যুক্ত হয়ে আছে অনলাইন। তবুও কেনো নতুন প্রজন্মের দৃষ্টি কেবল বাইরে বাইরে। তাদের দৃষ্টি ফেরাতে জাতীয় গণমাধ্যমকে আরো যুগোপযোগি পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন প্রজন্মের দৃষ্টি নন্দন অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতে না পারলে দেশের গণমাধ্যম গণবিচ্ছিন্ন যন্ত্রে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা এনএনসির গবেষণা বিভাগের।
জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি “সংগ্রহ বার্তা” নামে একটি নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক ও এলাকাভিত্তিক সংবাদ সংগ্রহ করছে। এতে এমনভাবে সংবাদের শিরোনাম তৈরি করে দেওয়া হয়; যাতে পাঠকদের শেষ পর্যন্ত পাঠের আর্কষণ না হারায়। আর একই বিষয়োল্লেখিত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের লিঙ্ক যুক্ত করে দেওয়া হয় যাতে পাঠক একসঙ্গে একাধিক সংবাদ মাধ্যমের খবরাখবর অনায়াসে পেয়ে যায়। এমন কার্যক্রমে সকলের সহযোগিতা পেলে এনএনসি গণমাধ্যমের সাথে গণমানুষের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে দৃঢ়তা প্রকাশ করেন এনএনসির পরিচালকবৃন্দ।
খবর কাগজের বিলুপ্তি মেনে নিতে চায়না জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি। হাতে ধরে খবর কাগজ পাঠের অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে তারা নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করছেন বিভিন্নভাবে। আয়োজন করছেন জাতীয় সংবাদ মেলা; যেখানে বই মেলার মতো বছরে ১টি দিনের জন্য হলেও খবর কাগজ হাতে তুলে নিবে অনেকে যারা বছরেও একবার খবর কাগজ ছুঁয়ে দেখেনি। খবরের কাগজ প্রতিটি সচেতন নাগরিকের হাতে হাতে ফিরে আসবে। বিলিন হবেনা বাংলাদেশ থেকে খবরের কাগজ কোনোদিন কেননা-
খোলে মগজ, পড়ে খবর কাগজ বাড়ে জ্ঞানের পরিধি। সেই খবরের সংগ্রহে আজ হয়েছি প্রতিনিধি। কথাগুলো ইউটিউবে দেয়া আছে https://www.youtube.com/watch?v=or6E-BFRpd8&t=156s
লেখকঃ মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক- সংগ্রহ বার্তা ও প্রেসিডন্ট- এনএনসি