আমার প্রবাস জীবন মাত্র আড়াই বছরের। অনেকটা হুট করেই দেশের চাকরি ফেলে বউ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছি জার্মানীতে। উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনই আসল লক্ষ। তবে প্রবাস জীবন তো আর মায়ের হাতের মোয়া নয়। পরিশ্রম করেই বেঁচে থাকতে হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে দিব্বি চলে যাচ্ছে। আমার নাম যেহেতু জিলানী তাই আমার এক কাজিন আমাকে মজা করে জার্নালিস্ট বলে ডাকত। একটা সময় স্বপ্নও দেখতাম জার্নালিসম নিয়ে পড়ার। কিন্তু সব স্বপ্ন কি আর পুরন হয়। তবে চেষ্টা তো করে যেতেই হবে। টিভি নিউজ রিপোর্টিং এবং নিউজ প্রেসেন্টারের একটি কোর্সও করে ফেলেছিলাম বিবিএ করার পাশাপাশি। শখটা বুকের পাশে নিয়েই প্রবাসে আসা।
কথায় বলে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। তবে আমার কাছে মনে হয় উপায় হবার জন্যও একজন পথ প্রদর্শকের প্রয়োজন থাকে। ঠিক তেমনই একজন মানুষের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। জার্মানীর প্রবাসী কমিউনিটির সকলের প্রিয় মুখ, জার্মান বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জার্মানীতে বাংলা সাংবাদিকতার অন্যতম পুরোধা জনাব খান লিটন। তিন দশক আগে এক টগবগে তরুণ অন্য পাঁচ-দশ জন প্রবাসীর মতোই জার্মানিতে এসেছিলেন উন্নত ও আধুনিক জীবন গড়ার জন্য । ভিন দেশ, অচেনা মানুষ, নতুন ভাষা ও বরফে ঢাকা শীতের রাজ্য জয় করার অভিপ্রায় এখানকার নিয়মে নিজেকে বেঁধে নেমে পড়েন জীবিকার যুদ্ধে । স্বপ্ন ছিল অতি দ্রুত দেশে ফিরে ছোট একটা প্রেস, একটা পত্রিকা নিয়েই গড়বেন স্বাভাবিক জীবন। লালসবুজের দেশে সংবাদের এক অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়াবেন খবরের পিছনে । কিন্তু না, তা আর হয়ে ওঠেনি। ঐযে বললাম, সব স্বপ্ন সত্যি হয়না। প্রবস জীবনের নানা ঝক্কি ঝামেলা পেড়িয়ে জার্মানিতেই তিনি স্থায়ী হয়েছেন। আজ তিনি বাংলাদেশী জার্মান নগরিক । তার অস্তিত্ব দুই সন্তান অনিমা ও অনিম।
খান লিটনের সাংবাদিকতার শুরু সেই ৯০ এর দশকেরও আগে থেকে। শিকড় ছেড়ে আসার আগে তরুণ খান লিটন সাপ্তাহিক সুগন্ধা ও সাপ্তাহিক রোববারের কৃতিমান সাংবাদিক ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় জার্মানিতে এসে বহু প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও লেখালেখি ছাড়েননি। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ খবর গ্রুপের জার্মান ব্যুরো প্রধান হিসেবে। জার্মানিতে ডয়েসে ভেলের রেডিওর স্বল্প সময়ের বাংলা প্রোগ্রাম ছাড়া তিনিই ছিলেন বাংলাদেশী কমিউনিটি ও বাংলা মিডিয়ার মেলবন্ধন। সব সময় তিনি দল-মত নির্বিশেষে প্রবাসী বাংলাদেশী এমন কি জার্মানদের মানবসেবা সহ সাংবাদিক হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে মানুষতো আর নিরপেক্ষ হয়না, এক সময় তিনি জার্মানিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শকে লালন করেছেন। তিনি বলেন, তখন এখনকার মতো নামধারী আওয়ামী লীগ আগে ছিল না। দলের জন্য মন তাই সব সময়ই বিচলিত থাকে।
তিনি ১৫ বছর যাবত এটিএন বাংলার জার্মান ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। অল ইউরোপীয়ান বাংলা প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে ২১শের বই মেলায় তার কয়েকটি বই প্রকাশ করেছে “পারিজাত প্রকাশনী “। জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষনের লিখিত ভার্সনের জার্মান অনুবাদ – Poet Der Politik -কমিউনিটিতে এক বিরল ইতিহাস হয়ে থাকবে। এখনো জার্মানিতে যেখানে সংবাদ সেখানেই খান লিটন ও তার সংবাদ টীম। তার হাত ধরে জার্মান বাংলা প্রেসক্লাব একদিন আরো বড় হবে এবং অনাগত দিনে নতুন প্রবাসী সাংবাদিকদের পথ দেখাবে। সাংবাদিকতায় বা খবরের দুনিয়ায় আমার হাতে খড়ি খান লিটন ভাইয়ের মাধ্যমেই। আর তাই এই লেখাটি তার প্রতি আমার গুরুদক্ষিণা। আমি ছাড়াও হাবিবুল্লাহ আল বাহার, ফয়সাল আহমেদ, এমএ হাসান, বাবু সরদার, নাফিসা শারমিন, তামান্না ফেরদৌস ও আজিম হোসাইন সহ সকলেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি জার্মান বাংলা প্রেস ক্লাবকে আরো বেশি সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে, বাংলা ভাষার খবর জার্মানীর সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে।
লেখকঃ রায়হান জিলানী, পড়ুয়া ও সাংবাদিক ক্রিফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানি