গণমাধ্যম রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ। কোনো পরিকল্পিত গৃহ বা অবকাঠামোর জন্য সমান ভার বহনযোগ্য সমান উচ্চতার ৪টি খুঁটির প্রয়োজন হয়। খুঁটির সংখ্যা কমিয়ে কোনো ১টির ওপরে আশ্রয় ছাতা তুলে ধরেও যদি জাতীয় উন্নয়নের চাকা চালু রাখতে পারা যায়; তাতেইবা আপত্তি কী।
বিজ্ঞানের মতে, পৃথিবী এমনি এমনি গড়ে উঠে নানা বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে পদার্পণ করেছে। অন্যদিকে ধর্মানুসারে, পৃথিবী সৃষ্টিকর্তার ১টি প্রকল্প মাত্র। ইহকালের সৌরজাগতিক, পরলৌকিক মহাজাগতিক আর নিত্যনতুন আবিষ্কারের উৎসে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সমারোহে সৌন্দর্যমন্ডিত পৃথিবীর শুভক্ষণে আমরা বসবাস করছি। পৃথিবীর ৩ ভাগই জলে ডুবিয়ে রেখে ১ ভাগের ওপরে যত দখলদারিত্ব, রাম রাজত্ব আর সীমান্ত পাহারাদারিত্ব করে যাচ্ছি আমরা পৃথিবীবাসি। মহাসমূদ্রের জলরাশিতে নাবিকের বাহাদুরি বেশিক্ষণ আর বেশি দূর চলেনা। তাই যত কর্তৃত্ব ভূখন্ডের বিচ্ছিন্ন ভূমিতে।
৭টি মহাদেশে বিভক্ত বিশ্বকে আজও শান্তির নিবাসে পরিণত করতে পারেনি বিশ্বনেতারা। বর্তমানে রাশিয়ার নৃশংস থাবায় ইউক্রেনের গা বেয়ে রক্ত ঝরছে। ইউক্রেন নামক ভূখন্ডের শাসন ক্ষমতা একজন ভারের হাতে। আর রাশিয়া নামক বিশালায়তনের ভূখন্ডের অধিপতি শাসক পুতিনের হাতে। সিংহসম পুতিন খরগোশ তুল্য জেলেনস্কির ওপর একবার এক থাবা মারে আবার একটু থেমে তাকিয়ে দেখে খরগোশের পক্ষে কে কে আওয়াজ তোলো? এভাবে থেমে থেমে বিশ্বের সব নেতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আপনমনে তার ইচ্ছা সে পূরণ করে যাচ্ছে। আর এই সিংহ খরগোশ খেলায় মরছে মা ও শিশু থেকে শুরু করে নিরীহ প্রাণীকুল যাদের সামান্য বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও হরণ করা হচ্ছে।
আমরা লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা বরাবরই নির্মোহ নিলোর্ভ নিরপেক্ষ সকলের জন্য পৃথিবীকে শান্তির আবাসন সৃষ্টিতে রাষ্ট্রনায়কদের সহায়তা করে থাকি। সত্যিকারের কোনো লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক কখনো শাসন ক্ষমতায় যাওয়ার কল্পনাও করেন না। কিন্তু সুশাসনে তারা ছায়ার মতো কাজ করে থাকে। তাই যে রাষ্ট্র লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরদের মূল্যায়ন করেনা সে রাষ্ট্রে সুশাসনের বিচ্যুতি ঘটে। দুশাসন আর নৈরাজ্যে পরিণত হয় দেশ। জাতি গঠনে কখনো সফল হতে পারেনা।
এবার আসা যাক পঞ্চাশের সোনার বাংলা প্রসঙ্গে। বঙ্গোপসাগরকূলের একখন্ড উর্বর ভূমি। শুধু নারিকেল গাছের পরিচর্যা করে স্বাচ্ছন্দে জীবনপার করে যেতে পারে এই ভূখন্ডের মানুষ। তাতে কারো কাছে ভিক্ষার হাত বাড়াতে হয়না। খাদ্য ও অনুকুল পরিবেশে প্রজনন প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত জন্মহার বৃদ্ধিতে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে এই ভূখন্ডে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ৫৫ হাজার বর্গমাইল ভূখন্ডটির অধিবাসিদের পরের গোলামী থেকে বাঁচাতে যারা সচেতন ও সচেষ্ট ছিলেন তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের মর্যাদা বর্তমান সংসদ সদস্যদের তুলনায় মোটেও কম দিয়ে যাননি। কিন্তু বারবার সেনা শাসনের নিষ্পেষণে সাংবাদিকদের মর্যাদা হয়েছে ভূলুন্ঠিত। রাষ্ট্রপক্ষ যখন লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের প্রতি কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেননি; তখনই এদের অনেকেই পুলিশি বেষ্টনীতে থাকা মহোদয়দের কাছে ব্যবসায়ীদের সুবিধাবার্তা বাহক দালালে পরিণত হলো।
সাংবাদিকতার আড়ালে দালালীতেও এখন ধ্বস নেমেছে। তাই এখন নানা ফন্দিফিকিরে চলছে সাংবাদিক পরিচয় নিয়ে চলা দালালদের মধ্যে। সরকারের আন্তরিকতায় এই শ্রেণির উন্নতি হতে পারে। অন্যথায় “গণমাধ্যম কর্মী বিল-২০২২’র মতো আইন পাশ করে কখনোই সৃজনশীল লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক তৈরি হবেনা এই বাংলায়। কপি-পেষ্ট করে গণমাধ্যম পরিচালনা সম্ভব হলেও দেশ ও জাতি গঠনে চিন্তাশীল সুদূর প্রসারি পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত কোনো পরিকল্পনাকারি খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
আবিষ্কারের পথ রুদ্ধ করে সংস্কারের পথ শুদ্ধ করার পক্ষে সবাই কাজ করছে। সৃজনশীল লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের সহকারি গণমাধ্যম কর্মী তাদের অধিকার রক্ষায় অসামাঞ্জস্য আইন অনুমোদন দিতে যাচ্ছে অথচ গণমাধ্যমের মূল চালিকাশক্তির দিকে সুনজর পড়ছেনা সরকারের। গণমাধ্যম যে এখন ব্যবসায় উন্নতির সহায়ক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে দেশে সৃজনশীল লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের আকাল চলছে। এভাবে চললে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সমুক্ষীণ হতে হবে।
লেখক- মাসুম বিল্লাহ, সম্পাদক, সংগ্রহ বার্তা ও প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা এনএনসি