তুরস্কের পতাকাবাহী ৭১৩ নম্বর উড়োজাহাজটিতে ৩ জানুয়ারী ২০২২ ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দুপুর তিনটায় অবতারণ করলাম। বিদেশী নাগরিক ও অসুস্থতার কারণে অন্য যাত্রীদের চেয়ে একটু আগে বের হতে পারলেও ব্যাগ পেতে দুই ঘন্টা লেগেছে। ব্যাগ সরবরাহ স্থানের পাশের শৌচাগারে ছিলো না লাইটও টয়লেট পেপার। পরিছন্ন কর্মী বললো- তারা অভিযোগ করেছে বেশ কিছু দিন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সে বিষয়ে গুরুত্ব না থকেলেও সবুজ চ্যানেল দিয়ে বের হওয়ার সময় সিগারেট ও অ্যালকোহল আছে কিনা সেক্ষেত্রে জনৈক কর্মকর্তার তৎপরতার অভাব ছিলনা। হয়রানীমূলক আচরণে পারদর্শিদের মনে হয় এই বিমান বন্দরে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজনের সাথে এনএনসির প্রধান মাসুম বিল্লাহসহ এনএনসি পরিবারের সদস্যরাও আমাকে স্বাগত জানায়। সপ্তাহ খানেক আত্মীয় স্বজন, মিডিয়া সহকর্মী ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গের সাথে দেখা করে ভাল সময় কাটে।
১২ জানুয়ারী ঢাকা বাংলা একাডেমিতে কবি সামছুর রহমান হলে এনএনসির আয়োজন করে আমার সংবাদের একক ভিডিও প্রদর্শনী ও আমার লেখা পারিজাত প্রকাশনীর প্রকাশনে বই “ জগাখিচুরীর” মোড়ক উন্মোচনের। শিরোনাম ছিলো সংবাদ কখনও বাসী হয় না। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব কে.এম খালিদ, গেস্ট অফ অনার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মানিত উপাচার্য জনাব প্রফেসর ড, আখতারুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সাবেক প্রধান প্রফেসর জনাব শফি আহমেদ তালুকদারসহ আরো বরেণ্য শিক্ষানুরাগী। প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় ছিলো মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব চন্দ্রানী চন্দ্রা। এই অনুষ্ঠানটি ১০টায় শুরু হয় ও সন্মানিত অতিথি মন্ত্রী মহোদয় এবং গেস্ট অব অনার সময়মতো আসেন তবে দর্শকরা আসেননি সময়মতো। অন্যদিকে অনেক সাংবাদিক সহকর্মীরা এসেছিলো অনেক পরে।
একজন সংবাদ কর্মী পরিচয়ধারী পায়ে ধরে সালাম করে বললো, কিছু দেন ! আমি বললাম কি দেবো ? বললো টাকা। আমি বললাল কেন? আপনার অফিস পে করে না? আমি তাকে টাকা দিলাম না। আর না দেয়ার কারনে খুব অপমানজনক আচরণ করেছে সে। অনুষ্ঠান বিকেলে শেষ হয়। দুপুরের খাবারের সময় বেশ ভীড় ছিলো। যারা অনুষ্ঠানে শ্রম দিয়েছেন ও মিডিয়া কভারেজ (নিউজ 24, আরটিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক ইত্তেফাকসহ আরো) করেছেন, সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার ফেলে আসা প্রাণের শহর সাগর কন্যা বরগুনা প্রেসক্লাব আমাকে সম্মাননা পুরস্কার দেয় ২৪ জানুয়ারী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক হিসেবে আইকন বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ। প্রবীণ সাংবাদিক জাকির হোসেন মিরাজ তার বক্তব্যে সবাইকে সাংবাদিকতার নৈতিকতা রক্ষার অনুরোধ জানান। বরগুনার বহু সাংবাদিক গড়ার কারিগর, বরগুনার বহুল প্রচারিত দৈনিকে সম্পাদক মো. মোশারেফ হোসেন তার অফিসে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। প্রবীণ সাংবাদিক ও বরগুনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিচালক বাবু চিত্ত রন্জন শীল ২৭ জানুয়ারী আমাকে জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখান। পরের সপ্তাহে বরিশাল প্রেসক্লাবে সম্মাননা দেয় পুষ্পকলি শিশু সংগঠন ও পুষ্পকলি পত্রিকার পক্ষ থেকে। পরিচালনা করেন সংগঠনের পরিচালক কবি শামিমা সুলতানা। স্থানীয় প্রশাসনের ও শিক্ষানুগারীরা এই অনুষ্ঠানে এসে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছেন। এখানে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো বন্ধু নাছিমা খানম (শিক্ষিকা), সেলিম হায়দার (ব্যাংক কর্মকর্তা ), আজীবন সুন্দরী- রিনা বৌদি , কলেজ সহপাঠী ও বন্ধু (কলেজে পড়ার সময় একমাত্র বিবাহিতা সুন্দরী সহপাঠী)।
আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ফুলঝুরী স্কুল ও কলেজের ছাত্র/শিক্ষক এক মত বিনিময় সভায় মিলিত হই ২৯ জানুয়ারী। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাননীয় প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সাবেক বিজ্ঞানের শিক্ষক জনাব, মো. আবদুস সালেক বিএনসি ও সহকারী শিক্ষক মো. জাহাংগীর হোসেন। বর্তমান মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব মহোদয় এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন।
ভাঁটির দেশের খাঁটি মানুষ ইস্কন গুরু গৌরাংগ কর্মকারের আন্তরিক সহযোগীতায় ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ গিয়েছিলাম জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে টুঙ্গিপাড়া। সাথে ছিলো কবি শামিমা সুলতানা ও মিষ্টি মনের সৃষ্টিশীল মানুষ শিশির। টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে গৌরনদীর গৌরব, হল্যান্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ খানের সৌজন্যে গৌরনদী প্রেসক্লাবে এক চা চক্রের আপ্যায়ন আমাদের ভ্রমনকে আরো আনন্দময় করে তোলে। আর কারিশমার জন্য সবটুকুই গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদ্য সাবেক সভাপতি বিপ্লব সরকার ও অন্য সাংবাদিক বন্ধুদের আন্তরিকতা। টুঙ্গিপাড়া পৌছলে কভিড -19 কারনে মাজারে প্রবেশ করা সম্ভব ছিলনা। পরে বিশেষ অনুরোধে ও ঢাকা থেকে একজন ফোন করে দিলে স্থানীয় মেয়র মহোদয় তার বাড়ীর ভিতর দিয়ে ( পিছনের দরজা) স্বল্প সময়ের জন্য প্রবেশ করার ব্যবস্থা করেন। ধন্যবাদ মেয়র মহোদয়কে।
ফেরার পথে কবি সুকান্তের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি ছিলেন প্রাণহীন। আমার প্রস্তাবিত প্রায় গিন্নির বাড়ীতে পথের মাঝে ছিলো অনেক রসনা বিলাসের সাথে রসের ফিন্নি। ফেইসবুক গ্রুপ বরগুনা ৮৫ ব্যাচ তাদের তিন প্রবাসী বন্ধুদের (খান লিটন, মহসীন, মোজাম্মেল) সৌজন্যে ১১ই ফেব্রুয়ারি আয়োজন করে আনন্দ ভ্রমন ও প্রীতিভোজের)। বরগুনার অদূরে ইকো পার্কে ৩৫ বছর পর বন্ধুরা একসাথে ঘোরা ও গোলপাতার রসের গুড়ের মটকা চা এর স্বাধ ছিলো ব্যাতিক্রম। রাতে জেলা শিল্পকলায় চালের রুটি, হাঁসের মাংস, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, খেজুর রসের (তালতলী থেকে আনা) শিন্নি (পায়েশ) ও পানসুপারি ও চির সবুজ বন্ধু বরগুনা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মনিরের জোকস্ জীবনের পটভূমিতে আরো একটি ভাললাগা আর ভালবাসার দিন হিসেবে অংকিত হয়ে রইল। মহসীন ও নাসিরের মেহমানদারী কৃতজ্ঞতাভরে মনে থাকবে। ফেইসবুক গ্রুপ ৮৫ বাংলাদেশ এর প্রধান আনোয়ার হোসেন সহ অন্য বন্ধুরা সময় দিয়েছে। ইউএস প্রবাসী ভ্রাতুষ্পুত্র মনিরুজ্জামান খান সেতুর শ্বশুর বাড়ীতে বেড়ানোটা ছিলো আন্তরিক।
গ্রামের বাড়ীতে ছোটবেলার বন্ধু মিজানুর রহমান খান মনু , নিজামুল হক সাগর, পান্নার সাথে সময় কাটানো ছিলো বিরল আনন্দের। খালে ও পুকুরে সবাই মিলে মাছ ধরা ছিলো বেশ এডভেন্চার। আমার প্রিয় শিক্ষক মরহুম কাজী আবুল হাসেম এর ছেলে কাজী ফকরুল, মেয়ে কাজী নাজমা ও নাতীনের আধুনিক ও ঘরোয়া পরিবেশে বরগুনা পুলিশ লাইনের ফুড গার্ডেন সত্যি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। এখানে আপনি যে কোন ধরনের পেষ্টি বা কেক ও ফাস্ট ফুডের স্বাধ নিতে পারেন ঘরোয়া পরিবেশে স্বল্পমূল্যে। বন্ধু সাগরের একমাত্র স্ত্রী জেসমিন ও বাচ্চাদের অনুরোধে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় সূর্য্য অস্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। বন্ধু রেজভির ঘরের আলোর ঝলমল ছিলো বিদ্যুৎ এর অপচয়। বন্ধু মনিরের পারিবারিক মেলা হয়ত আর হবে না।
রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকার ভিক্ষুকদের শুদ্ধ ইংরেজী শুনে অবাক হয়েছি- শুদ্ধ করে বলছে “Please give me 100 Taka, I have change. অন্য দিকে লক ডাউনের নামে স্কুল কলেজ বন্ধ রেখে শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ।ঢাকায় এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব) মো. ফারুক খান এমপির বাড়ীর ছাদে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউতে বন্ধু শাখাওয়াত হোসেন খান , সহ সভাপতি শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও লা মেরিডিয়ান পাঁচতারা হোটেলে পারিবারিকভাবে প্রীতি ভোজে এডভোকেট সমেন সাহা, জামাই সমিতি প্রস্তাবিত নতুন সভাপতি বিভোর খান, অনেক ভ্রমণের সহযোগী সামিন খান এবং সফল ও সুখী দম্পতি মোস্তাফিজ/ মিলার প্রতি কৃতজ্ঞ। মানুষ চাইলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, তার বিরল উদাহরণ মাটি প্রপার্টির মালিক পিচ্চি শামিম। কর্নেল জনাব শামিম (মিলন) এবং জার্মানিতে সাবেক রাষ্ট্রদূত জনাব ইমতিয়াজ আহমেদ ও মোক্তার ভাইর ভালবাসায় বার বার যেতে ইচ্ছে হয় আমার দেশে।
অমর ২১ শে বই মেলায় আমার বইর প্রকাশক শওকত হোসেন লিটু ও খ্যাতিমান প্রকাশক ওসমান গনি ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ আমার বই প্রকাশের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রেরণা দিয়েছেন। আমার ডজন খানেক নাতি/নাতীন- জোয়া, মৌমিতা, সামিন, খাদিজা, লামিন, মানহা, মুন, রাফু, ঈশান, রুপন্তি, সাদিয়া বাংলাদেশে অবস্থানকালে হাসিখুশীতে ভরে রেখেছিলো। বরগুনা সদর পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহাদত ভাই, বর্তমান মেয়র মহারাজ ভাই, বেতাগী পৌরসভার মেয়র ছোটভাই গোলাম কবির ও সরিষামুড়ী ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান শিপন জোমাদ্দর সবার নাগরিক সেবা মনে রাখার মতো। সাব রেজিষ্ট্রার আদনান ও বেতাগী পৌরসভার সচিব জামাল এবং বেতাগী প্রেসক্লাবের সভাপতি জনাব মজনুর প্রতিও কৃতজ্ঞ।কৃতজ্ঞতা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কল্যাণ ট্রাষ্ট্রের কিউরেটর ও ইতালী প্রবাসী, বন্ধু/অভিভাবক হোসনেয়ারা কিবরিয়ার প্রতি। এতো ভালোর মাঝেও আওয়ামী লীগ নামধারী, সাংবাদিক পরিচয়ধারী ও কিছু অসৎ পুলিশদের কারণে দেশটা মনে হচ্ছে দুর্নীতিতে ভরে গেছে।
দুই মাস ভালভাবে কাটিয়ে ফিরে আসার আগে একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে হারাবার বেদনা নিয়ে ফিরতে হয়েছে জার্মানিতে। বড় বোন লুৎফা বুজির হ্যাজবেন্ড সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা, আমাদের পারিবারিক অভিভাবক আ. রশিদ মিয়া চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ভালবাসার শিকলে বেঁধে ভাগ্নে মিঠু, সুমন পৌঁছে দিলো জাহাজ ঘাটে। ভাগ্নের বন্ধু রওনক করিম পুরানো ঢাকার বাকরখানা দিয়ে শ্বশুড় হওয়ার বায়না করলো। ৩ মার্চ ২০২২ তুরস্কের পতাকাবাহী উড়োজাহাজে ফিরে এলাম জীবিকার তাগিদে এই পরবাসে। বরাবরের মতোই পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছগির খান যতক্ষণ জার্মানিতে বাসায় এসে পৌঁছলাম, ততক্ষণ ঘুমায়নি। ছুটে এসেছিলো ভাবীসহ ছোট দাদা, সেঝভাই, বন্ধু সাগর। অনেক মিস করি সবাইকে। অনেক —————জার্মানি পৌঁছলে জার্মান বাংলা প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু সরদার বাসায় পৌঁছে দেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালে লাখো মুখের আড়ালে আমার নয়ন খুঁজেছে কয়েকটি মুখ- মা, বাবা, দাদা, মেঝোভাই, ছোট বুজি ও বড় ভাবীকে… প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক বিপ্লব রায় ও ভাতিজী সাথীর বাসায় যেতে পারিনি বলে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। বড় বন্ধু নিজামুল হক স্বপন, কচ্ছপ চাষীর প্রকল্প ভিজিট ও সমুদ্র উপকূল হরিণঘাটা এবং সুন্দরবন সফর…