সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদা দিয়ে ১৭ হাজারের ও বেশি অবৈধ ব্যাটারি চালিত যানবাহন অবাধে চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ যানবাহন চালাতে গিয়ে দৈনিক চুরি হচ্ছে লক্ষাধিক ইউনিট বিদ্যুৎ। ফলে সড়কে বাড়ছে যানজট, বাড়ছে লোড শেডিং, বাড়ছে জন ভোগান্তি।অপরদিকে একটি মহল সুকৌশলে ধরাছোয়ার বাহিরে থেকে ওই অবৈধ পরিবহন থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। এদিকে এই পরিবহন গুলোর ব্যাটারী চার্জ দিতে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক গ্যারেজ। স্থানীয় ডিপিডিসি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এ গ্যারেজ গুলো চলছে। রিক্সার ব্যাটারী চার্জে দৈনিক বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে ৬০ হাজার ইউনিট আর ইজিবাইক ৭০ হাজার ইউনিট। দুই পরিবহনে ১ লাখ ৩০ হাজার ইউনিট। বাণিজ্যিক হিসেবে এর মূল্য ১৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। যা মাসে দাঁড়ায় ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ডিপিডিসির হিসেব মতে সাড়ে ৭ টাকা ইউনিটে হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। হিসেব মতে প্রতি মাসে ২ কোটি টাকার অধিক বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। আর এই অর্থ ডিপিডিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তা আর গ্যারেজ মালিকদের পকেটে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধ ব্যাটারি চালিত যানবাহনের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও ৭ হাজার ইজিবাইক চাঁদা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে চলছে। কৌশল করে থানা এলাকার প্রতি গ্যারেজের রিক্সা সংখ্যা হিসেব করে মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে ক্ষমতাশীন দলের কতিপয় নেতা যারা ওই পরিবহনের নামধারি সমিতির নেতা। ফলে গ্যারেজ মালিকরাই দৈনিক জমার সাথে চাঁদার ৩০ টাকা চালকদের কাছ থেকে রেখে দেয়। একই পদ্ধতিতে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ইজিবাইক থেকে। তবে ইজিবাইকের চাঁদার পরিমান দৈনিক ৬০ টাকা বলে জানায় কদমতলী এলাকার চালক ফরহাদ, শিমরাইল মোড়ের বাহার ও সুমন। এ হিসেবে দেখা যায় ওই দুটি যানবাহন থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭ লাখ টাকা টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে যা মাসে দাড়ায় ২ কোটি টাকারও অধিক।
এদিকে গ্যারেজ মালিকরা চাঁদা প্রদানের বিষয়টি প্রথমে স্বীকার করলেও পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে কোনো মতামত দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তবে অনেক মালিকরা বলেন, ব্যবসা করতে আসছি। ব্যবসা করছি। রোডে গাড়ি চালাইতে হইলে খরচ দেওন লাগবোই। নইলে গাড়ি ও চালকের উপর অত্যাচার হয়। এগুলো কোনো বিচার না। পরিবহন ব্যবসা এমনেই করতে হয়। গাড়িতো ভালা থাকে দুইটা পইসা চোখে দেখি। এসব লেইখখেন না। ডিপিডিসি সিদ্ধিরগঞ্জ এনওসিএস এর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা চুক্তিতে ইজিবাইক গ্যারেজ গুলোতে ২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছেন। রাইচ মিলসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে উপসহকারী প্রকৌশলীরা নির্বাহী প্রকৌশলীর চোখ ফাকি দিয়ে এ ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এ সব সংযোগ দিচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও আদায়কৃত চাঁদার টাকার একটি অংশ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের একশ্রেণির কর্মকর্তারা পাচ্ছে। অটো রিক্সা চালকদের চাঁদাবাজ কিংবা ট্রাফিকদের কাছ থেকে টোকেন নিতে হয়। টোকেন ছাড়া অটো রিক্সা পেলেই আটক করা হয়। আটক রিক্সা ছাড়াতে লাগে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা। সালাম নামে এক অটোরিক্সা চালক জানায়, রাস্তায় লাইনম্যানদের দৈনিক ১০ টাকা আর গ্যারেজ মালিকদের কাছে চাঁদা হিসেবে ৩০ টাকা করে দিতে হয়।
এদিকে একটি গ্যারেজ মালিক শহীদুল জানায়, ইজিবাইকের একটি ব্যাটারী চার্জ হতে অন্তত ১০ ইউনিট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় আবাসিক সংযোগ দিয়ে গ্যারেজ চলাতে হচ্ছে। লাইন আবাসিক হলেও গ্যারেজ মালিকদের কাছ থেকে বিল নিচ্ছে বাণিজ্যিক হিসেবে।
কিছুদিন ধরে প্রতি গ্যারেজ মালিকদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে অগ্রিম নিয়ে সাড়ে ৭ টাকা ইউনিট বিলে টিডিটু মিটার লাগিয়ে দিচ্ছে ডিপিডিসি। তবে সব গ্যারেজ এ আওতায় আসেনি। প্রতিটি ইজিবাইকের ব্যাটারী চার্জ আর গাড়ি রাখার জন্য দৈনিক নেয়া হয় ১৮০ টাকা।
এ বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, একাধিকবার অভিযান চালিয়ে অর্থ জরিমানা ও অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করেও প্রতিরোধ সম্ভব না হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে প্রত্যেক গ্যারেজে সাড়ে ৭ টাকা ইউনিট বিল করে টিডিটু মিটার সংযোগ দেয়া হয়েছে। তবে ২ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসোহারা আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
নারা প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিদ্যুৎ শ্রমিকলীগ নেতা জানান, ডিপিডিসির উর্ধ্বতন মহল মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে গ্যারেজের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। কয়েকদিন পরই স্থানীয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আবার সংযোগ দেয় মালিকরা।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি ইয়াছিন মিয়া জানান, কে বা কারা চাঁদা আদায় করে আমি তা অবগত নাই। চাঁদাবাজ যেই হোক প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা। নারায়ণগঞ্জ শহর ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শাখার পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মোল্যা তাসলিম হোসেন বলেন, সরকারি আদেশ মতে মহাসড়কে অটোরিক্সা ও ইজিবাইক চলতে দেওয়া হয়না। শাখা সড়কে চলাচলের বিষয়ে সরকারি কোন নির্দেশনা না থাকায় ব্যবস্থা নিচ্ছিনা।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক জানান, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।