নিউজস্বাধীন বাংলা: ক্যাসিনো তথা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে সরকার। এই অভিযানে প্রথমে সোনারগাঁয়ের জিকে শামীম পরে বিদ্ধ হলেন রূপগঞ্জের সেলিম প্রধান। এ নিয়ে এখন পুরো নারায়ণগঞ্জজুড়েই চলছে তুমুল আলোচনা। ফলে কারো কারো ধারণা, এই জেলায় ক্যাসিনো কান্ড আরও কেউ সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
সূত্র বলছে, সোনারগাঁ উপজেলার স্কুল মাস্টারের ছেলে ছিলেন গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম। যাকে বলা হয়ে থাকে গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারী ‘ডন’। ওয়ার্ড যুবদল দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। এরপর মির্জা আব্বাসের সহচার্যে বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমলে হয়ে উঠেন টেন্ডারবাজির ডন। এরপর বিএনপি সরকারের পতন হলে তিনি ভিড়ে যান যুবলীগে। বেশ কিছুদিন নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবেই পরিচয় দিতেন। সখ্যতা ছিলো আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সাথেও।
সব শেষে তিনি নিজেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। গত বছর তাকে দলটির সহসভাপতি করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। সম্প্রতি তিনি র্যা বের অভিযানে অস্ত্র, মাদক ও নগদ টাকা এবং বৈদিশিক মুদ্রাসহ আটক হন। বর্তমানে কারাগারে আছেন এই মাফিয়া।
র্যা বের আটকের পর জিকে শামীমের অজানা অনেক তথ্য ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে শুরু করে। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক জিকে শামীমের অসংখ্য বাড়ি, অঢেল সম্পদের খোঁজ পায় গোয়েন্দারা। তার সর্বমোট ৩৪ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া যায়। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জে ট্রাস্ট ব্যাঙ্কেই রয়েছে তার ১৪টি অ্যাকাউন্ট। এরমধ্যে ৫টি তার মা আয়েশা বেগমের নমে। একটি যৌথ অন্য ৭টি তার নিজের নামে।
জিকে শামীমের ঘটনায় যখন পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে চলছিলো আলোচনা সমালোচনা। তখনই সামনে আসে রূপগঞ্জের সেলিম প্রধান। উপজেলার মর্তজাবাদ গ্রামের নান্নু প্রধানের ছেলে। র্যা ব সূত্র জানিয়েছে, এই সেলিম প্রাধান হচ্ছেন অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট ।
সূত্র বলছে, সেলিম প্রধানের জন্ম ১৯৭৩ সালে। ১৯৮৮ সালে ভাইয়ের মাধ্যমে জাপানে গিয়ে জাপানিজদের সঙ্গে গাড়ির ব্যবসায় নিয়োজিত হন। পরে জাপানিদের সঙ্গে থাইল্যান্ড গিয়ে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ব্যবসা করেন। পরে মি. দু নামের এক কোরীয় ব্যক্তি তাকে অনলাইন ক্যাসিনো খোলার উপদেশ দেন। এর ফলে তিনি ২০১৮ সালের পি-২৪ এবং টি-২১ হিসেবে দুটি গেমিং সাইট খোলেন। সেখান থেকে তিনি অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। তার কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, ওই কোরীয় ও সেলিমের ৫০-৫০ অনুপাতে লাভ ভাগের চুক্তি হয়েছিল।
৩০ সেপ্টম্বর র্যা ব দুপুরের দিকে থাইল্যান্ড যাওয়ার প্রাক্কালে থাই এয়ারওজেরে একটি ফ্ল্যাইট থেকে তাকে আটক করে। পরে তার গুলশান ও বনানীর বাসায় দুই দফা অভিযান চালায় র্যা ব। উদ্ধার করা হয় মাদকসহ নগদ টাকা। এছাড়াও ১২টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে সেখান থেকে।
অন্যদিকে অপর একটি সূত্র বলছে, সেলিম প্রধানের মোট ৫ জন স্ত্রী আছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা স‚ত্র। এর মধ্যে একজন রাশিয়ান, একজন আমেরিকান, একজন জাপানি এবং দু’জন বাংলাদেশি। সেলিমের ছোট বউ বা ৫ নম্বর স্ত্রী সহকারী কাস্টমস কমিশনার। বর্তমানে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে।
নির্ভরযোগ্য স‚ত্র বলছে, সেলিম প্রধান তার স্ত্রীকে চাকরি দিতে যুবলীগের এক নেতাকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সব ফাইনাল করেন। সেলিম প্রধানের ৩৩ নম্বর রোডের স্পা সেন্টারটি একসময় চালাতেন কয়েকজন জাপানি নাগরিক। তাদের সঙ্গে সখ্য থাকার সুবাদে তিনি জাপান যাওয়ার টিকিট পান।
কিন্তু তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করে জাপানিদের কাছ থেকে স্পা সেন্টার দখল করে নাম দেন ‘প্রধান স্পা’। যে বাড়িতে স্পা সেন্টারটি বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে, এর মালিক শাহজাহান নামের এক বিএনপি নেতা, গুলশানের এই বাড়িটি সেলিম প্রধান দীর্ঘ দিন ধরে দখল করে আছেন।