বিশেষ প্রতিনিধি: সম্প্রতি পিয়াজের দাম বেড়ে যায়য়ায় ভোক্তা সাধারণ বিপাকে। গত তিন সপ্তাহ যাবৎ পিয়াজের বাজারে আগুন, আর এই আগুন নিভাতে সরকারের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত থাকলেও কিছু অসাধু ব্যাবসায়ি সিন্ডিকেট করে পিয়াজের বাজারে পাইকারী মূল্য উদ্ধোগতি করে রেখেছে ফলে খুচরা বিক্রেতেরাও বিপাকে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানীর ঢাকার ৩৫টি পয়েন্টে ৪৫ টাকা করে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি করা হবে। গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মুখপাত্র হুমায়ূন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এবারও পিয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা গত রবিবার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পিয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ চিন্তিত নয়।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেইন ট্রেড (ডিজিএফটি)-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব ধরনের (টাটকা ও হিমায়িত) পিয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পিয়াজের রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে।’
বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জানান, পিয়াজ নিয়ে ভারত যে এ ধরনের ঘোষণা দিতে পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক থেকে আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। আমরা বিকল্প উৎস্য থেকে বিপুল পরিমাণ পিয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি।
সচিব জানান, এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে পিয়াজ নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। পোর্ট চেয়ারম্যানকে আমরা অনুরোধ করেছিলাম দ্রæত খালাসের সুযোগ দেওয়ার, একটি জাহাজের পিয়াজ খালাস করা হয়েছে। আরেকটিতেও খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তুরস্ক ও মিসর থেকেও দুই-চার দিনের মধ্যে পিয়াজ এসে পৌঁছবে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের বাজার মনিটরিং গ্রুপ এবং সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত দেশি পিয়াজ রয়েছে। পচনশীল পণ্য বলে এগুলো বেশি দিন মজুদ করা যাবে না। ফলে বাজারে পিয়াজের সরবরাহজনিত কোনো সংকট হবে না। দাম বাড়ারও আশঙ্কা নেই।
ভারতে পিয়াজের ফলন হয় মূলত মহারাষ্ট্রের নাসিক, কর্ণাটকের মাকলি এলাকায়। সেখান থেকেই গোটা দেশে পিয়াজ সরবরাহ করা হয়। আবার নাসিকের পিয়াজ রপ্তানি হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আরব আমিরাতে। চলতি বছরে অতি বর্ষণের কারণে কার্যত বন্যায় ভাসছে নাসিক ও মাকলি। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেখানকার বিঘের পর বিঘে কৃষি জমি। যার প্রভাব পড়েছে পিয়াজ চাষেও। ফলে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে উৎপাদন। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
সুত্র বলছে দেশীয় বাজারে পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ডিজিএফটি-এর পক্ষ থেকে টনপ্রতি ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়া হয় ৮৫০ মার্কিন ডলার। এরপর বাংলাদেশেও পণ্যটির দাম ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় উন্নীত হয়। বর্তমান বাজার ঘুরে দেখা যায় ১১০ থেকে ১৪০টাকায় প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা সাধারণ এই উদ্ধোগতির পিয়াজ ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। গরিব দুঃখী যারা আছেন তাদের ক্রয় ক্ষমতা একদম নাগালের বাহিরে। দেশের প্রতিটি মানুষের দাবি অতিদ্রæত পিয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রন করে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হোক এতে সরকার জনগনের মাঝে আরও ব্যাপক প্রশংসীত হবেন।