প্রেসবিডি ডটনেট: প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সাময়িকভাবে পিয়াজ আমদানী নিষিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরই দেশে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। কোনভাবে পেঁয়াজের দাম কমছে না। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। ওই সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা আদায় করছেন এমন অভিযোগ করছে ভোক্তা সাধারণ।
সব ধরনের টাটকা ও হিমায়িত পেঁয়াজ রপ্তানিতে রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। এ খবর শোনার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ কোথাও কোথাও তিনগুণও বৃদ্ধি করে। সংকট দেখিয়ে গত কয়েকদিনে সারাদেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেলেও নাঃগঞ্জে আশেপাশের এলাকার চিত্র ভিন্ন। আড়ৎগুলোতে বিপুল পরিমাণ পেয়াজ মজুদ রেখে মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ ভোক্তা সাধারণের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১ দিনের ব্যবধানে ফতুল্লা সহ নারায়ণগঞ্জের পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এছাড়া শহর ও শহরতলীর অলি-গলিতে বিভিন্ন মুদি দোকানে হাইব্রীড ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০০ টাকায় ও দেশী পেঁয়াজ ১১0 টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফতুল্লা বাজারে পাইকারী দোকানে হাইব্রীড ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ৪৫০/৪৬০ ও দেশী পেঁয়াজ ৫৫০/৫৬০ বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে পুরাতন, নষ্ট ও কিছুটা পঁচা পেঁয়াজের দাম কম। যা গতকাল পর্যন্ত প্রতি পাল্লা ( ৫ কেজি ) দেশী ৩৪০-৩৫০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ও হাইব্রিড ৩১০-৩২০ টাকা পর্যন্ত দাম ছিল।
ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কোন ধরনের বাজার মনিটরিং না থাকার ফলে ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। এরই ধারাবাহিকতায় হঠাৎ অস্বাভাবিক দাম বেড়ে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। তারা বাজার মনিটরিংয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আহবানন জানিয়েছেন।
ভোক্তা সাধারণ বলছেন সব কিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে। বাজারে কোন মনিটরিং নেই। নেই মূল্য তালিকা, ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছা মত পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। ৩০ টাকার পেঁয়াজ কিভাবে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এনিয়ে কোন ধরনের নজরদারি নেই। এর সাথে আসলে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা দরকার। এভাবে একটি বাজার ব্যবস্থা চলতে পারে না।
বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর ১টি জাতীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে জানান, পেঁয়াজ নিয়ে ভারত যে এ ধরনের ঘোষণা দিতে পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক থেকে আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। আমরা বিকল্প উৎস্য থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। পোর্ট চেয়ারম্যানকে আমরা অনুরোধ করেছিলাম দ্রæত খালাসের সুযোগ দেওয়ার, একটি জাহাজের পেঁয়াজ খালাস করা হয়েছে। আরেকটিতেও খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া তুরস্ক ও মিসর থেকেও দুই-চার দিনের মধ্যে পেঁয়াজ এসে পৌঁছবে। বাণিজ্য সচিব ঐ সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আরও বলেন, ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের বাজার মনিটরিং গ্রæপ এবং সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে।
আসলে বাজারে পাইকারী দোকানদাররা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে ব্যবসা করছে বলে ভোক্তা সাধারণের অভিযোগ। সমস্ত দায়টা যেন বাজার কমিটি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপরে গিয়ে পড়ছে। সত্যিকার অর্থে “কেউ দেখেও, না দেখার ভান করছে”। এব্যাপারে সাধারণ ক্রেতারা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।