নিউজস্বাধীন বাংলা: দুই শিশুকন্যাসহ শ্যালিকাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে ‘ঘাতক’ আব্বাস (৩২)। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মিল্টন হোসেনের আদালত এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা এলাকার একটি সাততলা ভবনের ৬ তলা ফ্ল্যাট থেকে নাজনীন বেগম, তার আট বছরের মেয়ে নুসরাত এবং ২ বছরের মেয়ে খাদিজার জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় এদিন দুপুরের দিকেই নিহত নাজনীনের ভগ্নিপতি আব্বাসকে সিদ্ধিগঞ্জের পাওয়ার হাউজ এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারের টেবিলের নিচ থেকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।
পরে, এদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ আটক আসামী আব্বাসের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্সে গলমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে ব্রিফ করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, আব্বাস একজন মাদকসেবি। সে তার স্ত্রী ইয়াসমিন ও প্রতিবন্ধি মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) প্রায় সময় মারধর করতেন। এ ঘটনায় ইয়াসমিন তার ছোট বোন নাজনীন ও বোন জামাই সুমনকে একবার জানালে সুমন তার ভায়রা আব্বাসকে চড় দেন। সেই থেকেই ক্ষুব্ধ হন আব্বাস। এরমধ্যে বুধবার রাতে আব্বাসের সাথে ঝগড়া করে তার স্ত্রী ইয়াসমিন মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে বোনের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। তিনি ইপিজেডের একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। রোজকার মতো বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সে গার্মেন্টে চলে যান। পরে আটটার দিকে নাজনীনদের ফ্ল্যাটে আসে আব্বাস। এ সময় নাজনীনের স্বামী সুমন রাতের ডিউটিতে পেট্রোল পাম্পে অবস্থান করছিলেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, শ্যালিকার সাথে কথাবার্তা বলার এক ফাঁসে আব্বাস তার সাথে করে নিয়ে যাওয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে শ্যালিকা নাজনীন ও তার দুই শিশুকন্যাকে কুপিয়ে এবং জবাই করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে আটকের পর আব্বাস স্বীকার করেছে, ভায়রার চড়ের প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যা করেছে সে। হত্যার ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো। ঘটনার সময় আব্বাস তার প্রতিবন্ধি মেয়ে সুমাইয়াকেও কুপিয়ে জখম করে। সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধিন আছে।
এদিকে এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত নাজনিনের স্বামী সুমন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সুমনের ভায়রা আব্বাস (৩২) কে একমাত্র আসামী করা হয়। মামলা নং Ñ৪৯।
মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য আব্বাসকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে। তার বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
অপরদিকে দায়ের করা মামলায় আটক সুমনকে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়। পরে সেখানে তিনি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মিল্টন হোসেনের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে তাকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেন।