নিউজস্বাধীন বাংলা:নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কাজী মামুনের বিরুদ্ধে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ৭/৮টি বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে রাতের আধারে ছেলে ও মেয়ের অভিভাবকসহ তার বাড়িতে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করানো হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তারা জানিয়েছেন, সরকার বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সভা সেমিনার করলেও অর্থ লোভী কাজিদের কারণে এ বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা যায়, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের দূর্গা প্রসাদ গ্রামের কাজী কাদির মৌলবির ছেলে কাজি মামুন দীর্ঘদিন ধরে নিকাহ নামা ও বিবাহ রেজিষ্ট্রি করানোর নামে বাল্য বিয়ে দিয়ে আসছে। প্রতিটি বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করানোর জন্য সে অভিভাবকদের থেকে ১৫/৩০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। গত সোমবার রাতে তার র্দূগা প্রসাদের বাড়িতে ভাটের চর এলাকার এক নাবালাক মেয়েকে দুঘঘাটা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে মোফাজ্জলের সাথে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করানো হয়। আগামী সেপ্টেম্বর শুক্রবার বরযাত্রী হয়ে ভাটের চর এলাকা থেকে নাবালক মেয়ে তুলে আনা হবে। প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানোর জন্য গোপনে এ বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে কাজী মামুন। গত আগষ্ট মাসের ২১তারিখে শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে রোমানের সাথে একই গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে জান্নাতুল ফোরদৌসীর বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা হয়। এ বিয়েও গোপনে তার বাড়িতে এনে ২৫হাজার টাকা নিয়ে রেজিষ্ট্রি করানো হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজি মামুন দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে আসছে। তার কাছে ৩/৪টি নিকাহ নামা রেজিষ্ট্রি বই রয়েছে। বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা বইটি সে অডিট করানো হয় না। শুধু মাত্র একটি বই অডিট করানো হয়। সরকারের রাজস্ব ফাঁকিও দিচ্ছে মামুন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দূর্গা প্রসাদ গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, কাজি মামুনের ভাই কাজি মাসুদও বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতের রায়ে জেলে যেতে হয়েছে। বর্তমানে কাজি মামুন বেপরোয়া ভাবে প্রশাসনের নিয়মনীতি না মেনে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে আসছে। তাদের পরিবারের তিনজন বিবাহ রেজিষ্ট্রির কাজ করে। তাদের অবৈধ ভাবে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেই ধনী হয়েছে। তাদের নারায়ণগঞ্জ দুটি বাড়ি, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা একটি, গোহাট্টা গ্রামে একটি ও দূর্গা প্রসাদ গ্রামে একটি বাড়ির মালিক হয়েছে। কাদির মৌলবী একজন স্কুল শিক্ষক অল্প বেতনে চাকুরির পর বৈধপথে কিভাবে বহুতল ভবনের মালিক হয়েছেন এটা সবারই স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায়।
এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ, শুধু কাজি মামুনই নয়, সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন কাজীরা এ কাজ করে গোপনে টাকার বিনিময়ে বাল্য বিয়ে দিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তাহেরপুর হাজী লাল মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাদ মিয়া জানান, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি আমরা ব্যাপক ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কাজীদের কারণে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাতের আধারে টাকার বিনিময়ে কাজীরা বাল্যবিয়ে দিয়ে প্রশাসনের লক্ষ্য ভেঙ্গে করে দিচ্ছে।
অভিযুক্ত কাজী মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে তার বাড়ি গিয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তাব দেন।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, যে কাজীরা টাকার বিনিময়ে বাল্য বিয়ে পড়াবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, কোন ভাবেই বাল্য রেজিষ্ট্রি করতে দেয়া যাবে না। বাল্য বিয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে কাজীকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি কাজীর সনদ বাতিল করা হবে।