সাদ্দাম হোসেন মুন্না \ মানসম্মত শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষিত যোগ্য নাগরিক গড়ে তুলার প্রত্যাশায় বকশীগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যাতিক্রম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠশালা। শতভাগ বিনামূল্যে পাঠদান করানো হয় পাঠশালায়। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি পারিবারিক অনুশাসন, বিনোদন ও ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানা বিষয়ে শিক্ষাদান করে থাকে এই স্কুলের শ্রেণী কক্ষে।
জানা যায়, শিক্ষার মূল ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বকশীগঞ্জে ২০১৯ শিক্ষা বর্ষে প্রতিষ্ঠা হয় পাঠশালা। এলাকার কিছু উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তি পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা। শুধু মাত্র পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শতভাগ বিনামূল্যে পাঠদান করানো হয় এই স্কুলে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০ ঘটিকা পর্যন্ত পড়া লেখা চলে পাঠশালায়। পাঠশালার শিক্ষার্থীদের জন্য কোন হোম ওয়ার্ক নেই। শ্রেণি কক্ষেই সকল শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের স্কুলের পাঠ্য বইয়ের পড়া শিখিয়েদেন শিক্ষকরা।
পাঠশালায় মোট শিক্ষক রয়েছে ১৬ জন। সকল শিক্ষক যথা সময়ে উপস্থিত হয়ে নিয়মিত পাঠদান করে থাকেন। এখানে শিক্ষকের উপস্থিতি শতভাগ। এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও শতভাগ। পাঠশালার শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন সম্মানিভাতা নেননা। সমাজের নি¤œ আয়ের পরিবারের শিশুরাই পাঠশালার শিক্ষার্থী। তাই শিক্ষার্থীদের কাছেও পাঠদান বিষয়ে কোন মাসিক বেতন বা ফি নেওয়া হয়না। মাঝে মধ্যে কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে মান সম্মত খাবার/ টিফিন দিয়ে থাকেন পাঠশালার শিক্ষার্থীদের।
পাঠ্য বইয়ের পাশাপশি ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক শিক্ষা, নাগরিক দায়িত্ববোধ, মানবাধিকার ও বিনোদন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় পাঠশালায়। শিক্ষাংগনের পাশাপশি শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠশালা কখনও হয়ে উঠে প্রতীকি জাতীয় সংসদ, সচিবালয়, আদালত, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ। সেই কারণে কখনও শিক্ষার্থীদের ব্যাক্তিগত পরিচয় হয়ে উঠে ছায়া স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, এমপি, সচিব, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
সফলতার বাস্তব স্বপ্ন দেখানোর জন্য মাঝে মধ্যে সমাজের উচ্চ শিক্ষিত, সফল ও সুশীল সমাজের গুনিজনদের উপস্থাপন করা হয় পাঠশালার শিক্ষার্থীদের সামনে। উৎসাহিত করার জন্য গুনিজনদের মুখে পাঠশালার শিক্ষার্থীদের শুনান হয় নানা সফলতার গল্প। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের ৫ বারের নির্বাচিত এমপি সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদসহ, উপ-সচিব, সরকারী অফিসের উচ্চ পদস্থ্য অফিসার, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পাঠশালার শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় করেছেন। মতবিনিময়কালে সবাই নিজের মুখে শুনিয়েছেন শিক্ষা, পেশা ও কর্মজীবনে সফলতার গল্প। তুলে ধরেছেন সুখময় জীবনের বাস্তব চিত্র।
শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য সফল মানুষের পাশাপশি শিক্ষা, পেশা ও কর্মজীবনে যারা সফল হতে পারেননি তাদেরও উপস্থাপন করা হয় পাঠশালার শিক্ষার্থীদের সামনে। রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, কুলি ও শ্রমিকরা নিজের মুখে তাদের কাছে তুলে ধরেছেন ব্যর্থ জীবনে নানা কষ্টের কথা। তুলে ধরেছেন কঠিন বাস্তবতা।
পাঠশালার শিক্ষক একে আব্দুল্লাহ জানান, পাঠশালায় আসলে কখনও আর্থিক সুবিধার কথা মনে হয়না। আমার সব সময় মনে হয় একজন শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আমি আমার নাগরিক দায়িত্ব পালন করছি।
পাঠশালার শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম পলাশ জানান, আমরা সব সময় উৎসব মুখোর পরিবেশে সহজ উপায়ে পাঠদান করি। তাই শিক্ষার্থীরা হাসি খুশি মনে পড়া শোনা করে।
পাঠশালার এ্যাম্বেসেডর এম.শাহীন আল আমীন জানান, আমাদের শিক্ষকরা পাঠ্য বই স্টাডি করেন। পাঠ্য বই স্টাডি করার জন্য প্রতিজন শিক্ষককে ২ দিন আগে মোবইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় কোন শিক্ষক কবে কোন বিষয়ে কত অধ্যায় পড়াবেন। তাই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বুঝানোর জন্য সহজ উপায় বের করার সুযোগ পান।
পাঠশালার এ্যাম্বেসেডর বকশীগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মাসুমা ইয়াসমিন স্মৃতি বলেছেন ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা অনেক বড় উদ্যোগের স্বপ্ন দেখছি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম পাঠশালার বিনামূল্যে পাঠদানের মিশনের সফলতা কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, পাঠশালার উদ্যোগ সময় উপযোগী। বর্তমান অবস্থা বিদ্যমান থাকলে একটি আদর্শ শিক্ষালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে পাঠশালা।