নিউজস্বাধী বাংলা: বন্দরের সুমাইয়া আক্তার বর্ষা হত্যাকা-ের ঘটনা ইতোমধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দাবিকৃত ৫ লাখ যৌতুকের জন্য তার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন নির্মমভাবে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এ দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করে বর্ষার সাড়ে ৪ বছরের ছোট্ট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নিঝার। তার মুখে হত্যাকা-ের বর্ণনা শুনে প্রত্যক্ষদর্শী সকলের চোখেই জল এসেছে।
ঘটনাটি ছিলো ২০ আগস্ট বিকেলে বর্ষার লাশ দাফনের দিন। এদিন দুপুরে বর্ষার মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে তা হস্তান্তর করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে। পরে এদিন বাদ আছর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকায় বর্ষার নানা বাড়ি এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে নানা তদবির করে বর্ষার লাশ দেখার জন্য তার একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নিঝারকে নিয়ে আসা হয়। কেবল মাত্র পনের মিনিটের জন্য শর্ত দিয়ে বর্ষার মামা শাহাদাৎ হোসেনের কাছে তাকে দেওয়া হয়। সাথে ছিলো বর্ষার শ্বশুর বাড়ির কয়েকজন।
বর্ষার মামা শাহাদাৎ হোসেন জানান, বর্ষার মেয়েকে ওই বাড়ির লোক মারফত আমার কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। শর্ত ছিল মায়ের লাশ দেখিয়ে পনেরো মিনিটের মধ্যে নিঝারকে তাদের কাছে বুঝিয়ে দেব। সেই শর্ত অনুযায়ী বর্ষার শ্বশুর বাড়ির এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিঝারকে আমার হাতে তুলে দেয়া হয়। তবে ওই বাড়ির কয়েকজন আমার পিছু নেয়।
তিনি বলেন, নিঝারকে আমাদের বাড়িতে এনে তার মায়ের লাশ দেখানো মাত্র মেয়েটি কান্না শুরু করে এবং আমাকে এমন কথা বলে, যা শুনে আমি কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলি। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে নিঝার বলতে থাকে, ‘বাবা আম্মুর হাত পা দড়ি দিয়ে বেঁধেছিলো। এরপর রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।’
শাহাদাৎ বলেন, বাচ্চা মেয়েটি যখন আমাকে এসব কথা বলছিল তখন সঙ্গে সঙ্গে বর্ষার শ্বশুর বাড়ির ওই লোকগুলো নিঝারকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং বলে পনেরো মিনিট সময় শেষ। ওকে নিয়ে যেতে হবে। এরপর তারা নিঝারকে নিয়ে যায়।
১৯ আগস্ট রাত দশটার দিকে বন্দর থানা পুলিশ উপজেলার আলী সাহার্দী সুমাইয়া আক্তার বর্ষার শ্বশুর বাড়িতে তার শোবার রুমের খাটের উপর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ তার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান নয়নকে আটক করে। বর্ষার পিতা মঞ্জুর ভূইয়া মেয়ে হত্যায় সংশ্লিষ্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় নয়নকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ২২ আগস্ট দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
হত্যাকা-ের কয়েক ঘণ্টা আগে বর্ষা তার ছোট বোন মীমকে ইমুতে কল করে স্বামীর নির্যাতনের বর্ণনা জানিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে যাবার আকুতি জানিয়ে বলেছিল, ‘এখানে থাকলে নয়ন আমাকে মেরেই ফেলবে। ও প্রতিদিনই আমার উপর নির্যাতন করে।’ এর ঠিক ঘণ্টা চারেক পরই পাষ- স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান নয়নের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ২১ বছর বয়সী ফুলের মতো ফুটফুটে বর্ষা।
এদিকে বর্ষা হত্যা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে আসামিপক্ষ নানা কৌশল অবলম্বন করছে বলে সময় অভিযোগ করেছেন নিহত বর্ষার পরিবারের স্বজনরা।
তাদের অভিযোগ, বর্ষার মরদেহের সুরতহাল ও ময়না তদন্তে স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে যে, তার গলায়, হাতে, পায়ে ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষত চিহ্নের আলামত পাওয়া গেছে। সেসব আলামত অনুযায়ী মোটামুটিভাবে বলা যায় বর্ষাকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তাছাড়া মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও ছোট বোন মীমকে মোবাইলের ইমোতে ভিডিও কল করে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলার সময় স্বামী নয়নের নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে গেছে বর্ষা।
বোনের লাশ দেখতে এসে মীম ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়টি বর্ণনাও করেছে। তবে এখন বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হত্যাকান্ডকে আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা চলছে বলে বর্ষার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি বিভিন্ন পর্যায় থেকে আমার গভীরভাবে তদন্ত করছি। বর্ষার মেয়ের বক্তব্যের বিষয়টিও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এর পাশাপাশি হুমকির বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি।
তিনি আরো বলেন, আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মামলার তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা দ্রুত এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি।