নিউজস্বাধীন বাংলা: ছাত্র জীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা, গণতান্ত্রিক চর্চা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সিদ্ধিরগঞ্জের গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজ অধ্যক্ষ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কীভাবে ভোটাধিকর প্রয়োগ করতে হয়, কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে সহাবস্থান করতে হয়, এসব কিছুর চর্চার জন্যই কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অন্যান্য নির্বাচনের মতোই ক্লাস ক্যাপ্টেন’ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জীবনের প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্য নির্বাচিত করা হয়েছে ‘ক্লাস ক্যাপ্টেন’। নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপত্র, ব্যালট পেপারসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিলো। প্রতিকী অর্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব এবং একই অর্থে ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিলো।
এক অর্থ গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচনকে অর্থবহ করে তোলার জন্য জাতীয় নির্বাচনের আবহ দেওয়া হয়। প্রতিকী অর্থে করা হয়েছিলো নির্বাচন কমিশন। ছাপানো হয় মনোনয়নপত্র। ঘোষণা করা হয়েছিলো তফসিল। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয় নির্বাচনে। কমতি ছিলো না প্রচার প্রচারণারও। সব মিলিয়ে প্রকৃত অর্থে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আদল ছিলো কলেজটি ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন।
১৫ জুলাই ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি শ্রেণী থেকে ৩ জন নির্বাচিত করার লক্ষ্যে মনোনয়ন পত্র বিতরণ, গ্রহন ও যাচাই-বাছাইয় শেষে নির্দিষ্ট সময়ে ভোটাধিক প্রয়োগ করা হয়। তফসিল অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একটানা চলে ভোট গ্রহন।
নির্বাচনে সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর রোভার স্কাউট ছাত্র-ছাত্রীরা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
জাতীয় নির্বাচনের আবহ দেওয়ার জন্য নির্বাচন কালীন (প্রতীকি) প্রশাসনের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনের (প্রতীকি) দায়িত্ব পালন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ মীর মোসাদ্দেক হোসেন। কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা হলেন আবু তালেব, আবু তাহের, সাইদুর রহমান শুভ, সেলিম সাদিক।
নির্বাচন কমিশনের (প্রতীকি) সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উমর ফারুক। নির্বাচনকালীন সময়ে (প্রতীকি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন এইচ এম ফারুক, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিবের (প্রতীকি) দায়িত্ব পালন করেন মিজানুর রহমান।
নির্বাচনী শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রতীকি ১০জন ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে ছাত্র-ছাত্রীদের ৩৮৩ জন ভোটারের মধ্যে ৩৪৭ জন ভোট দিয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা নাজমুন নাহার, দৈনিক অগ্রবানীর সম্পাদক স্বপন চৌধুরী, দৈনিক সংবাদের সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি কবির হোসেন, ইঞ্জিঃ ইকবাল আতাহার হোসেন, আবুল হোসেন, শিশির ঘোষ অমর, বিমল চন্দ্র কর্মকার পল্টু, এম এ হালিম জুয়েল, শফিকুল ইসলাম, আহসানউল্লাহ, রিফাত রহমান ও রাজিব আহামেদ। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মনিরুল ইসলাম।
নির্বাচন পরিদর্শনকালে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ও আদর্শ ছিল গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা। দেশের বর্তমান যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, এই ব্যবস্থায় আমাদের ছাত্রছাত্রী যারা আছে, তারা প্রকৃত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে যাতে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে সেই যোগ্যতা তৈরি করার জন্য আমরা এই নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, শ্রেণীভিত্তিক ছাত্রছাত্রীরা ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচিত করবে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে হয়, সেটাও এই নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা শিখতে পারবে। জাতি গঠনে যখন দায়িত্ব আসবে, তখন সততা ও নিষ্ঠার সাথে গণতন্ত্র অনুশীলন করবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধ ও চেতনা সেটা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন করবে। কোনভাবেই নিজের স্বার্থের জন্য দেশের ও গণতন্ত্রের ক্ষতি করবেনা।
তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন তাদের বিকাশ ঘটাবে, নেতৃত্বের আসনেও আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা আশা করি এই নির্বাচন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন একটা উদাহরণ হবে, বাংলাদেশের জন্যও একটা উদাহরণ হবে ইনশাআল্লাহ।