নিউজস্বাধীন বাংলা :নারায়ণগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা থেকে নারাীসহ ৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত মরদেহের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় এক নারী ও দুই পুরুষ, আড়াইহাজার উপজেলায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বন্দর উপজেলায় দুই ব্যক্তির মরদেহ পৃথক সময়ে উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে আড়াইহাজার ও বন্দরে হত্যার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
এছাড়া সদর উপজেলার পৃথক স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে একটি খুনের শিকার এবং অপর দুটি রহস্যজন মৃত্যু বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে বন্দর উপজেলা থেকে এব ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, মিশর শিকদার (২৫), বারেক মিয়া, শেফালী বেগম (৪২), সৈয়ব আহমেদ (১৭), সুরুজ মিয়া (৩৮) এবং অজ্ঞাত এক যুবক।
বন্দর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আজহারুল ইসলাম জানান, মিঠু নামের এক যুবকের কাছ থেকে নিহত মিশর ৫‘শ টাকা পেত। এ কারণে সে মিঠুর মোবাইল ফোন রেখে দিয়েছিলো। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ। এর জের ধরে মিঠুসহ অন্যরা সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কাঠমিস্ত্রিদের বাটালি দিয়ে মিশরকে খুঁচিয়ে গুরুতর জখম করে। ঘটনাটি উপজেলার নোয়ার্দা এলাকায় ঘটেছে। এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে পুলিশ দ্রæত ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় মিশরকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, নিহত মিশর সিকদার উপজেলার কাইতাখালি এলাকার মৃত সফিউদ্দিনের ছেলে। নিহতের ভাই সানি বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহার নামীয় দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মিঠু (২৭), মঞ্জুর হকের ছেলে মুন্না (১৯), শাহ্ আলমের ছেলে সাকিব (১৮), আলী হোসেনের ছেলে জিসান (২০) নামে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়াও আজহার আরও জানান, উপজেলার বালুর মাঠ এলাকা থেকে বারেক মিয়া নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি পেশায় একজন অটোচালক। একই এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে তিনি। তবে, কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অপরদিকে আড়াইহাজার উপজেলায় জমি সক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সুরুজ মিয়া (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এদিন ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে এ হত্যাকাÐের ঘটনাটি ঘটে ফতেপুর ইউনিয়নের বাগদী সিডি মার্কেট এলাকায়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
নিহতের স্ত্রী চন্দ্রবান বলেন, নানা বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
আড়াইহাজার থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, নিহত সুরুজ মিয়া স্থানীয় সিডি মার্কেট নামক এলাকায় চায়ের দোকানে বসে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে তার চাচাতো ভাই আবুল হোসেনের নামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের নালিশ করছিলো। এ সময় হঠ্যাৎ তিনি ঢলে পড়েন। তিনি আরও বলেন, পুরো বিষয়টি কি তা এখনই বলা যাবে না। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর মূল কারণ জানা যাবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পৃথক স্থান থেকে এক নারী ও দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ফতুল্লার লাল খাঁ থেকে তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর শেফালী বেগম (৪২) নামে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া একই থানা এলাকায় সৈয়ব আহমেদ (১৭) নামে এক তরুণের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হাসানুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, নিহত শেফালী বেগম একজন মৃগী রুগী। তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে শাক লতাপাতা তুলে নিয়ে বিক্রি করতেন। গত তিনদিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই ডোবার থেকে তিনি শাক-লতাপাতা কিছু হয়তো তুলতে নেমেছিলেন আর তখন অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। মঙ্গলবার মরদেহ ভেসে উঠলে গন্ধ বের হলে থানায় খবর দেয় এলাকাবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে তিন সৈয়ব আহমেদের মৃত্যু সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও একই উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি মতিন সড়কে এলাকার বসুন্ধরা কয়েল কারখানার পাশ থেকে একই দিন সকালের দিকে অজ্ঞাত (২৫) নামা এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম পরিচয় এখনও কিছু জানা যায়নি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এইচএম জসিমউদ্দিন। তিনি জানান, সকালে স্থানীয়রা রাস্তায় যুবকের মরদেহ দেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত ওই যুবকের পরিচয় শনাক্ত করা যায় নি। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর হবে। লাশের ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুলের নখ উপড়ানো। বাম হাতের কব্জির ওপরে এবং নিচে দুটি কামড়ের দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যুবকটিকে অন্য কোথাও মেরে মরদেহটি এখানে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।