নিউজ স্বাধীন বাংলা : একজন সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, অপরজন কাউন্সিলর গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল। তারা বাপ এবং পুত্র। ১৭ জুলাই একটি মামলায় আটক করা হয় সাদরিলকে। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করে রিমান্ডও চাওয়া হয়। সবশেষে রিমান্ড নামঞ্জুর এবং ২২ জুলাই জামিনে কারামুক্ত হন এলাকার জনপ্রিয় এই কাউন্সিলর।
এদিকে সন্ধ্যার পর কারাগারা থেকে আটক ১০ জনকে সাথে নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা ৫ নংওয়ার্ডের ওমরপুর মুক্তিযোদ্ধা নিবাসে ফিরে আসলে হাজারও মানুষের ভালোবাসা সিক্ত হন কাউন্সিলর সাদরিল। দলমত নির্বিশেষে সবাই আসেন একনজর কারামুক্ত সাদরিলকে দেখতে। তবে, এখানে এসে অনেকেই চোখের জল আর ধরে রাখতে পারেননি বাপ সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন এবং পুত্র কাউন্সিলর সাদরিলের আবেগঘন মুহূর্তটি দেখে।
প্রতক্ষদর্শী জানায়, গিয়াসউদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা নিবাসে কাউন্সিলর সাদরিলকে বেশ কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে কান্না করেন সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন। এসময় সাদরিলও তার বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আর এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিতি প্রায় সকলের চোখের কোনেই নিজেদের আজান্তে জল গড়িয়ে পড়ে। পিতা-পুত্রের এমন আবেগঘন দৃশ্যে পুরো পরিবেশই যেন কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্দ হয়ে যায়।
এসময় গিয়াসউদ্দিন এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তার পুত্র বর্তমান কাউন্সিলর জি,এম, সাদরিলকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাদরিলসহ যাদেরকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল, এলাকাবাসীর দোয়ায় এবং সহযোগিতায় তারা সবাই ফিরে এসেছে। সবাই জানে, ঘটনার দিন সাদরিল মানুষের ডাকে এগিয়ে গিয়েছিল। পরে অন্যায়ভাবে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওইদিন যা হয়েছে, আমরা দেশবাসীর কাছে তা তুলে ধরবো। যারা যড়যন্ত্র করেছে, তারা সমাজে ঘৃণিত এবং সমালোচিত হয়েছে। মিথ্যা দিয়ে সত্য কখনও চাপা রাখা যায় না। তারা দেশের কল্যাণকারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সুনামক্ষুন্ন করার কাজে ব্যস্ত থাকে। পরগাছা স্বর্ণলতার মতো তারা এসব কাজ করে।
এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে-মিশে থাকতে চাই। আমাদের মধ্যে কেউ যেন বিভক্তি সৃষ্টি করতে না পারে। নারায়ণগঞ্জে যদি সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ-ঘুষ-দূর্নীতিমুক্ত কেউ থাকে, তার মধ্যে কাউন্সিলর সাদরিল অন্যতম। সে আগের মতই এলাকায় জগণকে সেবা দিয়ে যাবে। মানুষের সকল সমস্যায় সে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এছাড়া যারা সাদরিলের দুঃসময়ে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে এবং কোর্ট প্রাঙ্গণে গিয়ে কষ্ট করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সাবেক এই সাংসদ। পাশাপাশি কাউন্সিলর সাদরিলকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সত্য প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাবেক এই সাংসদ।
এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে কাউন্সিলর সাদরিল বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। সকলের দোয়া ও সহযোগিতায় আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। আবার আপনাদেরকে নিয়ে আমি জনসেবার কাজ শুরু করবো।
প্রসঙ্গত, সিদ্ধিরগঞ্জের ওমরপুরের কালুর বাড়ির চারতলার ভাড়াটিয়া সালমা বেগম ও হাফেজ আহমেদ দম্পতির কলহ মেটাতে ১৭ জুলাই রাতে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা থেকে আসেন কুমিল্লার সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম এবং তার ব্যক্তিগত সহকারি (পিএস) হাফেজ আহমেদ সোহেল। কিন্তু তারা বিরোধ মেটাতে এসে এখানে লঙ্কাকাÐ ঘটিয়ে ফেলেন। বাড়িতে যাওয়ার পূর্বে বিকট শব্দে সাইরেন বাজানো এবং নিচ থেকে চারতলা পর্যন্ত উঠতে গিয়ে বিকট চিৎকার চেচামি এবং গেটে দারোয়ানকে মারধর করে এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেন। এলাকাবাসী ডাকাত ভেবে এই বাড়ির নিচে এসে জড়ো হন।
পরবর্তীতে চারতলা থেকে চিৎকার চেচামেচি, কান্নার শব্দ এবং বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে সাহায্যের আহŸানে উৎসুক জনতা ডাকাত পড়েছে ধরে নিয়েই নিচে অবস্থান করে। এসময় তারা এমপিকে বহনকারী গাড়ির সামনের একটি কাঁচ ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পিএস সোহেল বাদী হয়ে পরদিন ১৮ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এমপির শ্লীলতাহানি ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করলে পুলিশ কাউন্সিলর সাদরিলসহ আটক দশজনের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
তবে, পুরো ঘটনার মূল নায়ক ছিলেন পিএস হাফেজ আহমেদ সোহেল এমনটাই স্বীকার করেন তার চাচা ও সালমা বেগমের পিতা মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল হাই। তিনি দাবি করেন, কাউন্সিলর সাদরিলের কোনো দোষ ছিলো না। সে ঘটনার অনেক পরে আসছে। তিনি না আসলে উত্তেজিত এলাকাবাসীকে থামানো যেত না।