নিউজস্বাধীন বাংলা: সরকারি তোলারাম কলেজের সাবেক জিএস জাকিরুল আলম হেলাল, বর্তমানে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। একসময় ছাত্র নেতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত ছিলেন। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন গার্মেন্ট ও বায়িং হাউজ ব্যবসায়ী। রয়েছেন অনেক সমাজিক সংগঠন এবং মসজিদ ও মাদরাসার সাথেও যুক্ত আছেন। ব্যক্তি জীবনে দুই ছেলে এক মেয়ের জনক। তারা হলেন, বড় মেয়ে জাকিয়া, ছেলে আরিফ এবং আলিন। এরমধ্যে মেয়ে জাকিয়া বিবাহিত। যার স্বামী নৌ বাহিনীতে কর্মরত।
মানুষের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতিতে যুক্ত হন হেলাল। ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে রাজনীতি প্রবেশ করেন তিনি। তবে, রাজনীতিতে আসার উৎসাহ তিনি পেয়েছিলন তৎকালিন সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা (বর্তমান সাংসদ) শামীম ওসমানকে দেখে। জাকিরুল আলম হেলাল তার রাজনীতি, ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ টুডে’র সাথে। তার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আমাদের প্রতিনিধি লিজা চৌধুরী।
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুরকরণ দ্ব›দ্ব। এমন বিভাজন দীর্ঘদিন থেকে। এরমধ্যে দক্ষিণে নেতৃত্বে রয়েছেন মেয়র আইভী এবং উত্তরে সাংসদ শামীম ওসমান। হেলাল মূলত শামীম ওসমান বলয়ের রাজনীতিই করেন। তার মতে এই বিভাজনটা স্বার্থের কারণে। কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা আছে যাদের পাঁচজন কর্মীও নেই সেই তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য এই বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছেন। ফায়দা লুটে নিতেই তারা এই বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে।
জাকিরুল আলম হেলাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও দলীয় অনেক কর্মসূচিতেই তার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় নয়। এমন অভিযোগ প্রায় সময়ই উঠে। এই অভিযোগের সত্যতা কিছুটা হলেও আছে বলে তিনিও স্বীকার করেন। তার মতে, অতীতে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃত্বের পরিসংখ্যানগুলো বলে দেয় আমি কতটা সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদ যেহেতু তাই এই কমিটির কর্মসূচি বড় বা সুন্দর করার দায়িত্ব সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের। আমার নয়।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত আছে দাবি করে জাকিরুল আলম হেলাল বলেন, আরও সংগঠিত হতে হবে। আমাদেরকে আরও ভালো করতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
একটি দলের প্রাণ ভ্রোমরাই হচ্ছে কর্মীরা। আর সেই কর্মীরা তখন মারা যায় যখন দলের কোনো কর্মসূচি থাকে না। তাই বেশি বেশি করে কর্মসূচি দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করে রাখা জন্য অত্যন্ত কার্যকরি পদক্ষেপ বলে মনে করেন হেলাল।
হকার সমস্যার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে হেলাল বলেন, আমরাও চাই হকারমুক্ত নগরী। আমাদের নেতা শামীম ভাইও চান। কিন্তু তাই বলে আপনি পুনর্বাসিত ছাড়া হকার উচ্ছেদ করতে পারেন না। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, এই হকাররাওতো সাধারণ মানুষ। তারাতো এর বাইরে নন। তাদেরও পরিবার আছে। পরিজন আছে। এভাবে তাদেরকে উঠিয়ে দিলে তারা চলবে কী করে।
তিনি বলেন, আমরা চাই হকারদের আগে পুনর্বাসিত করা হোক। তারপর তাদেরকে উঠিয়ে দিক। আমরাও চাই সুন্দর একটা নারায়ণগঞ্জ হোক আমাদের। কিন্তু বর্তমানে যে বাজে অবস্থা তা কখনোই ভাবি নাই। শামীম ভাইয়ের চাওয়া এবং আমাদেরও চাওয়া, হকারদের আগে পুনর্বাসিত করা হোক তারপরও তাদের তুলে দিক। কিন্তু এখন যেভাবে হকারদের তুলে দেওয়া হয়েছে সেটি পুরোপুরি অন্যায়।
হেলাল বলেন, নারায়ণগঞ্জ মানেই অনেকে ভাবতেন পতিতাল। কিন্তু শামীম ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা শহরের টানবাজার এবং নিমতলীর পতিতালয় উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু অন্যায় ভাবে তাদের উচ্ছেদ করা হয়নি। প্রত্যেককে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। সেভাবে হকারদেরও পুনর্বাসিত করা হোক।
শামীম ওসমানের নেতৃত্বে রাজনীতি করলেও হেলালের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো মেয়র আইভী একটি ভালো গুণ ও মন্দ গুণ সম্পর্কে। এর প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, মেয়র আইভী ভালো কাজ করতে চাচ্ছেন, চেষ্টা করছেন এটা তার ভালো গুণ। তবে, সেসব ভালো কাজ তিনি সবাইকে এক করে করতে পারতেন। সোজাও হতো করা।
আইভীর খারপ দিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে হেলাল বলেন, তিনি দলের নেতাকর্মীদের হেয় প্রতিপন্ন, কটুক্তি করে কথা বলেন সেটি তার সব থেকে মন্দ গুণ। যেমন সম্প্রতি তিনি আমার বন্ধু, সহযোদ্ধা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেছেন। এটা তিনি বলতে পারেন না। দলীয় লোক হয়ে প্রকাশ্যে এভাবে বলা মানেই দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি। তার যদি কোনো ক্ষোভ থাকতো তাহলে সেটি দলীয় ফোরামে বলতে পারতেন।
অপরদিকে শামীম ওসমানের একটি ভালো ও মন্দ গুণের কথাও জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শামীম ওসমান মানুষ গড়ার কারিগর। অত্যন্ত আল্লাহ ভক্ত একজন মানুষ। তার এই ভালো দিকগুলো আমাকে অত্যন্ত টানে। আর খারপ গুণ বললে বলতে হবে, শামীম ভাই যখন বক্তব্য রাখেন তখন আমাদের দিকে তাকায় না আবার নামটাও বলে না। তখন খুব খারাপ লাগে। হয়তো এটা তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে করেন না।
জাকিরুল আলম হেলালের মতে রাজনীতিক শামীম ওসমানের থেকে ব্যক্তি শামীম ওসমান অত্যন্ত ভালো মানুষ। রাজনীতিক শামীম ওসমানও ভালো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করেই তিনি চলেন। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিন নির্দেশনা অনুসরণ করে চলেন। যা বর্তমান নেতাকর্মীদের অনেকের মাঝেই সেভাবে দেখা যায় না।
সাবেক এই ছাত্র নেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো তোলারাম কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে। তিনি নির্বাচিত ছাত্র সংসদের গুরুত্ব তুলে ধরলেন। তার মতে, ছাত্র সংসদ থাকলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক উপকৃত হন। তারা তাদের সুবিধা অসুবিধাগুলো বলার একটা প্লাফর্ম পায়। কিন্তু সংসদ না থাকার কারণে সেটি থেকে তারা বঞ্চিত।
হেলাল জানালেন, তোলারাম কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে আমিও ২ থেকে ৩ বার প্রস্তাব রেখেছিলাম। কিন্তু সেটি যে কেন হচ্ছে না। বা কেন যে তারা করছে না সেটি বুঝতে পারছি না।
তিনি অতীত সময়টাকে মনে করে বলেন, বাদল-হেলাল পরিষদ যখন ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব দিয়েছিলো তখনকার নবীন বরণ, নাটক, পূজাসহ কলেজের যাবতীয় অনুষ্ঠানে আমাদের ছবি থাকতো। দেখতে অত্যন্ত ভালো লাগতো। এখন আর তেমন দেখা যায় না।
ভবিষ্যতে নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে উত্তরে বলেন, আমি আল্লাহমুখী নেতৃত্ব চাই। আল্লাহ চেয়েছেন তাই আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছি। তিনি যদি চান তাহলে আমাকে এর থেকে বড় কোনো অবস্থানে নিয়ে যাবেন না চাইলে নাই।
নতুন যারা রাজনীতিতে আসতে চায় তাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আগে ঘরের ভালো ছেলে হও তারপর রাজনীতিতে এসো। তুমি যদি ঘরের ভালো ছেলে হতে না পারো তবে বাইরের মানুষের ভালো কী করে করবে।
নিজের ভবিষ্যত ইচ্ছে এবং স্বপ্নের কথা জানিয়ে জাকিরুল ইসলাম হেলাল বলেন, আমি প্রতিদিন একজন মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। প্রতিদিন একজন মানুষকে ফোন দিয়ে জানতে চাইবো তার সমস্যাগুলো কি। আমি তার সেসব সমস্যার সামাধান করবো। সেটি যদি আল্লাহ চান তবেই করতে পারবো।