নিউজ স্বাধীন বাংলা : নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে ত্রিশ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত সম্ভব, এমন দাবি উৎসব ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মৃধার। তিনি তার হাতে গড়া এই পরিবহনের মালিকানা স্বত্ব ফিরে পেতে চান। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার দেন দরবারও হয়েছে। তার দাবি, শিগগিরই উৎসব ফিরে পাবেন এবং ত্রিশ টাকায় যাত্রীদের আনা নেওয়া করেবন।
অপরদিকে বহু আগের থেকেই যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, যাত্রী অধিকার সংগ্রাম পরিষদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট জনেরাও দাবি করে আসছিলেন, একটি শ্রেণিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় বলে ৩০ টাকার ভাড়া ৩৬ টাকা দিতে হয়। সম্প্রতি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ভাড়া ‘৩০ টাকা’ করার দাবিতে যাত্রী অধিকার সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে চাষাড়া শহীদ মিনারে প্রতীকি অনশন করা হয়।
অনশনে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমানও তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে চাঁদাবাজির কথাটি উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, এই চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ৩০ টাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা সম্ভব। এই দাবি নিয়ে তারা ইতোমধ্যে একটি দরখাস্তও লিখেছেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের কাছে দিবেন বলে। তবে, এসপি দেশের বাইরে থাকাতে সেটি এখনও দিতে পারেননি। ফলে, উৎসবসহ বাস ভাড়া কমানোর যে দাবি উঠেছে সেটি এখনও মিমাংসা করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে নগরবাসী তথা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলরত যাত্রীরা বলছেন, কামাল মৃধা ঘোষণা দিয়েছেন উৎসব পরিবহনে ৩০ টাকায় যাত্রী আনা নেওয়া করাতে পারবেন। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে বর্তমানে যারা আছেন তারাসহ বন্ধন, হিমাচল পরিবহন কেন ৩০ টাকায় যাত্রী আনা নেওয়া করতে পারছেন না?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি বন্ধন পরিবহনের এমডি আয়ূব আলীর জানান, “কামাল মৃধা যদি উৎসব পরিবহনের ভাড়া ত্রিশ টাকা করে। তাহলে আমাদের ৩৬ টাকাতো চলবে না। বাধ্য হয়ে আমাদেরও ত্রিশ টাকা করতে হবে। সে পারলে আমাদেরও পারতে হবে।”
চাঁদাবাজি না থাকলে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ত্রিশ টাকায় যাওয়া সম্ভব বলে সম্প্রতি দাবি করেছিলো মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমান। তাহলে কী এই চাঁদাবাজির কারণেই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ৩৬ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন কিনা, এ প্রসঙ্গে জানতে চাই আইয়ূব আলী চাঁদাবাজির বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও চাঁদাবাজিই ভাড়া বৃদ্ধির মূলে তেমন ইংগিত তিনি দিয়েছেন তার মন্তব্যে।
আয়ূব বলেন, “এই সমাজ কীভাবে চলে তা সবাই জানে। আমরাও সমাজের বাইরে না। সমাজ রক্ষা করেই আমাদের চলতে হয়। চাঁদাবাজি হচ্ছে এটি আমি স্বীকার করি না। তবে, আমাদের গাড়ির রোড পারমিট সায়েদাবাদ পর্যন্ত। কিন্তু যাত্রীর জন্য আমাদের যেতে হয় বায়তুল মোকারম পর্যন্ত। অটুকু অনিয়ম। বিভিন্ন জনকে ম্যানেজ করেই অনিয়মটুকু করতে হয়। এটা আমাদের পেটের তাগিদে। এখানে কেউ জোর করে নিচ্ছে না। যা হচ্ছে তা স্বেচ্ছায়। তাছাড়া কামাল মৃধারতো কোনো গাড়িই নেই। সে কীভাবে এটা করবে?”
কামাল মৃধার দাবি, তিনি মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে উৎসব ট্রান্সপোর্ট নামে ৫০ টি গাড়ির রোড পারমিট নিয়েছিলেন ২০০২ সালে। এ বছরের ২১ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এটির উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলার ওয়ারেন্ট বের হতে থাকে। ফলে এ বছরের ৬ জানুয়ারি তিনি দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।
কামাল মৃধা জানান, “আমি দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় আমার ভাগিনা কাজল মৃধাকে উৎসব ট্রান্সপোর্টে ৪ হাজার টাকা বেতনে একজন কর্মচারি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যাই। তাকে বলা হয়েছিলো এই পরিবহনটি দেখভাল করার জন্য।”
পরবর্তীতে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় আমিও চুপ হয়ে যাই। কিন্তু বর্তমান এসপির কাজকর্মে আমি আশাবাদী হয়ে উঠি। তাই আমার হাতে গড়া উৎসব আমি ফিরে চাই এবং আমি ত্রিশ টাকায় যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করবো।”
এদিকে কামাল মৃধার বক্তব্য সত্য নয় দাবি করেছেন কাজল মৃধা। তিনি বলেন, “উৎসব পরিবহন নিয়ে কামাল মৃধার সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো কথা হয়নি। অমন কথা বলার প্রশ্নই আসেনি। তাছাড়া আমি তার আন্ডারে চার হাজার টাকা বেতনে কাজ করিনি। তিনি যখন রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে যান তখনতো কাউকেই বলে যেতেই পারেননি আমাকে দায়িত্ব দিবেন কীভাবে। তিনি দেশ ছেড়েছে বিয়ে করে।”
উৎসব পরিবহনের এমডি কাজল মৃধা আরও জানান, “২৬০ টাকা টোল, ৪৩ গ্যাস, দুই দফা এই গ্যাসের দাম বেড়েছে। কিন্তু ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আমরা এই ৩৬ টাকা ভাড়ায় গাড়ি চালাতে হিমশিম হাচ্ছি। তাই চেষ্টা করছি আরও দুই টাক বৃদ্ধি করতে। আর সে খানে তিনি ৩০ টাকা ভাড়ায় বাস চালাবেন সেটি অবাস্তব এবং অবান্তর কথা। সে গায়ের জোরে সব কিছু বলে ফেলতে চায়। আমরা তার জবাব দেব কোর্টের মাধ্যমে।”